রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিল। কোরবানির গরু কিনেছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে। কোরবানির পর তার গরুর চামড়া কেনার জন্য কয়েকজন মৌসুমী ব্যবসায়ী এসে দাম বলেন ২০০ টাকা। একজন সর্বোচ্চ বলেন ৩০০ টাকা। পরে কারও কাছে চামড়া বিক্রি না করে এলাকার পার্শ্ববর্তী এতিমখানায় তা দান করে দেন।
Advertisement
আব্দুর জলিল জাগো নিউজকে বলেন, এক লাখ ২০ হাজার টাকার গরুর চামড়া যদি ৩০০ টাকা বলে তাহলে কেমন লাগে বলেন? সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই অনুযায়ী এই চামড়ার দাম হয় সর্বনিম্ন এক হাজার ২০০ টাকা। তাহলে এত কম দামে কেন চামড়া বিক্রি করব? এই কারণে এতিমখানায় চামড়া দিয়ে দিয়েছি। ছাত্ররা এসে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, গতবার এত নৈরাজ্যের পরও সরকার চামড়ার বাণিজ্য বন্ধ করতে পারল না। চামড়ার টাকা গরিবের হক। এই টাকা যারা খাচ্ছে তারা গরিবের টাকা খাচ্ছে। প্রতিবছর কোরবানির সময় লাখ লাখ গরু-ছাগল জবাই হয় তাহলে সরকার কেন প্রস্তুতি নেয় না। মিডিয়ায় দেখা যায় কত সেল গঠন করে। আসলে বাস্তবে কিছুই না। এটি বলব কার কাছে বলেন।
এদিকে উত্তর বাড্ডার বজলুর রহমান এতিমখানার জন্য চামড়া সংগ্রহ করছেন মাদসার ছাত্ররা। সেখানে আব্দুর রহমান নামে এক ছাত্র বলেন, কোরবানির চামড়া অনেকে এতিমখানায় দান করছেন। আমাদের লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের চামড়া সংগ্রহ করছেন।
Advertisement
রাজধানীর মানিকনগরের হাবিব বলেন, গতবার কেউ চামড়া নিতে আসেনি। বিক্রিও করতে পারিনি। পরে ফেলে দিতে হয়েছে। এবারও কেউ কিন্তু আসেনি। এলাকার একজনকে ডেকে দাম জিজ্ঞেস করলাম ২০০ টাকা দিতে চাইল। টাকা না নিয়ে পাশের মাদরাসা-এতিমখানা রয়েছে ওইখানে দিয়ে দিয়েছি।
মান্ডার জামিয়া ফতিউলুম মাদরাসার ছাত্র তোফাজ্জল বলেন, আমরা প্রতিবছরই কোরবানির চামড়া এতিমখানার জন্য সংগ্রহ করে থাকি। এবারও করছি। আগে অনেকে চামড়া বিক্রির টাকা এতিমখানায় দান করত। গতবছর অনেকে বিক্রি করতে পারেনি। এবার আবার চামড়া কেনার লোকজনও কম। তাই অনেকে মাদরাসায় চামড়া দিয়ে দিচ্ছে। আমরা চামড়া সংগ্রহ করে একজন আড়তদারকে দিয়ে দিচ্ছি। তিনি বিক্রি করে আমাদের টাকা দেবেন।
মুগদা এলাকার আব্দুস সবুর বলেন, আগে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার জন্য আসত। চামড়া নেয়ার জন্য কাড়াকাড়ি করত। গত দুই বছর যাবত চামড়া কোনো লোক নেই। মসজিদের হুজুরের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে মাদরাসায় ফোন দিলাম। তারা এসে নিয়ে গেছে। চামড়া গরিবের হক। এতিমখানায় গরিব ছেলে পড়ালেখা করে তাদের জন্যই দান করে দিলাম।
গত বছর লোকসানের মুখে পড়ে এবার মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও বেশি দামে চামড়া কিনছেন না। এবার বুঝে-শুনে চামড়া কিনছেন তারা। আকারভেদে ছোট গরুর চামড়া কিনছেন ২০০ থেকে ৪০০ টাকায়। বড় গরুর চামড়া ৬০০ টাকায়।
Advertisement
এদিকে ঈদের দিন দুপুর থেকে চামড়া কেনাবেচা শুরু করেছেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ও পোস্তার মালিকরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও পাড়া-মহল্লার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করে পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু করেছেন।
এসআই/বিএ/পিআর