মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবিরের গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক ও মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেছেন, তার (রায়হান কবির) পক্ষে বাংলাদেশ সরকার আরও শক্ত অবস্থান নিতে পারত। অথচ তা নেয়নি। এটি সকল প্রবাসীকে হতাশ করেছে।
Advertisement
রায়হান কবিরের গ্রেফতার প্রসঙ্গে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাডভোকেট সালমা আলী। তিনি বলেন, ‘রায়হান কবিরের বিষয়টি আমরা সচেতনভাবে প্রত্যক্ষ করছি। সে আল-জাজিরা টেলিভিশনে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছে, তা দেখেছি। সে অন্যায় কিছু বলেনি। করোনাকালে মালয়েশিয়া সরকার প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে সেখানকার প্রশাসন। এটি নিয়ে যে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে। আরও অনেকেই সাক্ষাৎকার দিয়েছে। তাদের প্রতি এমন অবিচার করা হয়নি। অথচ, বাংলাদেশি তরুণ রায়হানকে গ্রেফতার করে প্রবাসীদের অসম্মান করা হয়েছে। তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হয়েছে। অথচ, ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করার মতো কিছুই বলেনি সে।’
সালমা আলী বলেন, ‘সম্প্রতি আমি আন্তর্জাতিক এক সেমিনারে বিষয়টি আলোকপাত করেছি। সেখানে সরকারের লোকজনও ছিল। সরকারের আরও শক্ত অবস্থান নেয়ার কথা। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আছেন। বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত রয়েছেন। তাদের ভূমিকা কী, তাদের সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়া কী হলো, এগুলো পরিষ্কার নয়। নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করছে। অথচ, শুরু থেকে সরকার নির্বিকার ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও দৃশ্যত কিছু করেছে বলে মানুষ মনে করছে না। এমনকি আল-জাজিরা টেলিভিশনের এখানকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তারা রায়হান কবির গ্রেফতারের পর কী ভূমিকা রাখছে?’
গত ৩ জুলাই আল-জাজিরার ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শীর্ষক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি লকডাউন চলাকালে দেশটির সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে দেখানো হয়েছে, কর্মহীন ও খাবারের সংকটে থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদের ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিবাসী নারীদের তাদের ছোট ছোট শিশুদের থেকে আলাদা করে মারধর করা হচ্ছে।
Advertisement
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে আরও অনেক দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি রায়হান কবিরও সেখানে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এতেই ক্ষুব্ধ হয় মালয়েশিয়া। রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে ১৪ দিনের রিমান্ডে নেয় মালয়েশিয়ান পুলিশ।
এদিকে, গত ২৯ জুলাই গ্রেফতার রায়হান কবিরের সঙ্গে দেখা করেন তার আইনজীবী সুমিতা শান্তিনি কিষনা। ‘রায়হান দ্রুত দেশে ফিরতে চান’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, রায়হান জানিয়েছেন, গ্রেফতারের পর তার সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদে রায়হান ইমিগ্রেশন পুলিশকে বলেছেন, করোনা চলাকালে তিনি যা দেখেছেন তাই বলেছেন এবং এগুলো তার একান্তই নিজস্ব মতামত। তবে মালয়েশিয়া বা এখানকার কোনো নাগরিককে তিনি আহত করতে চাননি।
এএসএস/এমএআর/পিআর
Advertisement