গত বছর কোরবানির কাঁচা চামড়া কিনে লোকসানে পড়েছিলেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তাই এবার বুঝে-শুনে চামড়া কিনছেন এলাকার ব্যবসায়ীরা। আকারভেদে ছোট গরুর চামড়া কিনছেন ২০০ থেকে ৪০০ টাকায়। বড় গরুর চামড়া ৬০০ টাকায়। রাজধানীর মুগদা, মতিঝিল, খিলগাঁও, বাড্ডাসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
এসব এলাকার লোকজন ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতবার চামড়া কিনে লোকসান হওয়ায় এবার কমেছে মৌসুমী ব্যবসায়ীর সংখ্যা। আগে যেখানে প্রত্যেকটি এলাকায় তিন থেকে চারটি গ্রুপ কাঁচা চামড়া কেনার জন্য মাঠে থাকত সেখানে এবার অনেক এলাকায় একজনকে পাওয়া যায়নি।
মুগদা এলাকায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করছেন বাবু নামে এক মৌসুমী ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, গতবার চামড়া কিনে অনেক বড় লোকসানে পড়েছিলাম। ১০০টি চামড়ার মধ্যে ৪০টি মতো বিক্রি করতে পারিনি। এবারও মূল্য নেই। তাই বুঝে-শুনে কিনতে হচ্ছে। ছোট গরুর চামড়া কিনছি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা দামের মাঝারি আকারের গরুর চামড়া কিনছি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় আর দেড় দুই লাখ টাকা দামের বড় গরুর চামড়া ৮০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছি।
সরকার যে রেট বেঁধে দিয়েছে তার চেয়ে কম দামে চামড়া কেন কিনছেন? জানতে চাইলে মৌসুমী ব্যবসায়ী বলেন, সরকার যে রেট দিয়েছে ওই দামে পোস্ত আমাদের কাছ থেকে চামড়া কিনবে না। ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় যে চামড়া কিনেছি এটা সর্বোচ্চ ৫০ টাকা লাভে বিক্রি করতে হবে। আগে চামড়া কিনে অনেক লাভ হতো এখন লাভ নাই। শখের বসে ব্যবসা করি সঙ্গে কিছু লোকজন খাটে। কতবার ধরা খেয়েছি। এবার কী হয় আল্লাহই জানে।
Advertisement
এক লাখ ১০ হাজার টাকার কোরবানির গরুর চামড়া মাত্র ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছেন জানিয়ে পুরান ঢাকার আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সরকার যে মূল্য বেঁধে দিয়েছে তার তিনভাগের একভাগও মূল্য দিচ্ছে না মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। চামড়ার টাকা গরিবের হক। এর মূল্য কম মানে গরিবের হক কমে যাওয়া। আমরা চামড়া বিক্রি টাকা দান করে দেই। দাম যত বেশি হয় গরিব তত বেশি টাকা পায়। সরকার সবসময় অনেক কথা বলে আসলে কাজের কাজ কিছুই হয় না।
বংশাল এলাকার মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী আরিফ বলেন, গতবারের মতো এবারও বাজার খারাপ। তাই কম দামে চামড়া কিনতে হচ্ছে। কিছু করার নেই। পোস্তায় আমাদের কাছ থেকে যদি বেশি দামে চামড়া কিনত তাহলে আমরা এলাকায় বেশি দাম দিতাম। পোস্তার লোকজন মিডিয়ায় বলেন- ৬০০/৭০০ টাকায় চামড়া কিনবে। কিন্তু আসলে তারা সবসময় তার চেয়ে দুই-তিনশ টাকা কম দেয় আমাদের।
এদিকে এলাকায় চামড়া সংগ্রহ করছেন মাদরাসা এতিমখানা ছাত্ররা। তারা জানান, যারা এতিমখানায় চামড়া দান করছেন আমরা তাদের চামড়া সংগ্রহ করছি। এগুলো একসঙ্গে করে একজন ব্যবসায়ীর কাছে দিচ্ছি। তিনি যে দামে বিক্রি করবেন তার একটা ভাগ নেবেন। বাকি টাকা এতিমখানায় দেবেন এই শর্তে। এখন পোস্তায় কত টাকা বিক্রি করবে এটার ওপর নির্ভর করবে।
এদিকে এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৯ শতাংশ কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, গত বছর যা ছিল ৪৫-৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে ২৮-৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, গত বছর যা ছিল ৩৫-৪০ টাকা। এক্ষেত্রে গতবছরের চেয়ে দাম কমানো হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
Advertisement
এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া ১৩-১৫ টাকা, গত বছর যা ছিল ১৮-২০ টাকা। এক্ষেত্রে গত বছরের চেয়ে দাম কমানো হয়েছে ২৭ শতাংশ। পাশাপাশি বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা, গত বছর যা ছিল ১৩-১৫ টাকা। এক্ষেত্রেও দাম কমানো হয়েছে ২৩ শতাংশ।
এসআই/বিএ/পিআর