আন্তর্জাতিক

করোনায় ধুঁকছে বিশ্ব অর্থনীতি

পুরো বিশ্বের অর্থনীতির ওপর করোনা সংকটের মারাত্মক প্রভাবের মাত্রা দিনে দিনে আরেও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে ভয়াবহ চিত্র উঠে আসছে।

Advertisement

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার ছয় মাস পর এখন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৭৫ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা ছয় লাখ ৭৭ হাজারেরও বেশি। এই সংকট মোকাবিলা করতে লকডাউনসহ নানা কড়া পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অসংখ্য মানুষের রুজিরোজগারে টান পড়ছে। উৎপাদনশীলতাও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

অনেক দেশ জরুরি ভিত্তিতে ভর্তুকি ও নানা রকম আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সামর্থ্যের সীমা অতিক্রম করলে সরকারি কোষাগার দীর্ঘমেয়াদী সংকটে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে।বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করোনা সংকটের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সে দেশের অর্থনীতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় নয় দশমিক পাঁচ শতাংশ লোকসানে চলছে। বছরে দ্বিতীয় কোয়ার্টার বা তিন মাসের হিসেবে এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে, যা আগের সব নেতিবাচক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এমন প্রবণতা চলতে থাকলে আমেরিকার অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে পড়বে বলে পূর্বাভাষ দেয়া হচ্ছে।

Advertisement

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থাও মোটেই ভালো নয়। জার্মানির অর্থনীতি প্রায় দশ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানা গেছে। বছরের দ্বিতীয় জার্মানির অর্থনীতির ১০ দশমিক ১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম-সহ ইইউ সদস্য দেশগুলোতেও এমন নেতিবাচক চিত্র উঠে আসছে।

ইউরো এলাকার ১৯টি দেশেও আগের কোয়ার্টারের তুলনায় জিডিপি তিন দশমিক দুই শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে।জুলাই মাসের শুরুতেই ইউরোপীয় কমিশন এক ভয়াবহ পূর্বাভাষ তুলে ধরেছিল। শুধু দেশ নয়, বিশাল ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও চরম সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে ভ্রমণের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মক লোকসানের মুখ দেখছে।

যেমন বছরের প্রথমার্ধে ইউরোপের এয়ারবাস কোম্পানির ১৯০ কোটি ইউরো লোকসান হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এই সময়কালে কোম্পানিকে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি ইউরো ব্যয় করতে হয়। কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ– এই প্রবাদ সত্য প্রমাণ করে অ্যাপেল ও অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি-নির্ভর কোম্পানি সংকটের সময় রেকর্ড মুনাফা করেছে। অ্যামাজনের মুনাফা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানা গেছে।

করোনা সংকটকে ঘিরে লাগাতার অনিশ্চয়তাও পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো যে সব দেশ প্রথমদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছিল, এমন অনেক দেশের পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। ইউরোপের অনেক দেশে সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ সম্পর্কেও জল্পনা-কল্পনা চলছে। করোনা মোকাবিলায় ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার ও বিপণন সম্পর্কে স্পষ্ট পূর্বাভাষ না থাকায় করোটা সংকটের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কোনো নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে না। ডি ডব্লিউ।

Advertisement

এসআইএস