মহামারি করোনা ভীতি এবং আর্থিক সংকটের কারণে কোরবানি দিতে না পারায় জেলায় এবার অবিক্রিত গরু রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার।
Advertisement
জয়পুরহাটে এবার কোরবানির জন্য ১ লাখ ৪৭ হাজার গরু প্রস্তত করেছিল খামারি ও কৃষকরা। এ লক্ষে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণও করেছেন তারা কিন্তু করোনার কু-প্রভাব ও বিভিন্ন জেলায় বন্যা, অবিরাম বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাট-বাজারগুলোতে আশানুরুপ খুচরা ও পাইকারি গরু ব্যবসায়ী না আসায় ক্রেতা সংকট ও দরপতনে দেশীয় গরু বিক্রি করতে পারেনি কৃষক ও খামারিরা।
অন্যদিকে, ঈদকে সামনে রেখে বেশি লাভের আশায় দেশীয় গো-খাদ্য কিনে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করেছেন জয়পুরহাটের ছোট বড় বেশ কিছু খামারি এবং এলাকার দরিদ্র ও গৃহস্থ পরিবারের প্রায় ১২ হাজার খামারি ও কৃষক।
আটা, গম, ভুষি, খড়, ঘাসসহ অন্যান্য গো-খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় গরু মোটাতাজা করতে গিয়ে খরচ বেশি হলেও করোনার কারণে চরম আর্থিক সংকট এবং ফেরত গরুকে নতুন করে খাবার জোগান দেয়া এতসব দুশ্চিন্তায় গরুর খামারিরা ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লোকসান হলেও গরু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
Advertisement
জয়পুরহাট সদর উপজেলার নতুনহাট, পাঁচবিবি গরুর হাট, হোপের হাট, দূর্গাদহ গরুর হাট, আক্কেলপুর তিলকপুর ও গোপীনাথপুর গরুর হাট, কালাইয়ের পুনট গরুর হাট, ক্ষেতলাল গরুর হাটসহ জেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে জানা যায়, হাট-বাজারগুলোতে ঢাকা, চট্টগাম, নোয়াখালি, কুমিল্লা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আশানুরুপ পাইকারি গরু ব্যবসায়ী না আসায় হাট-বাজারগুলোতে বড় গরুর চাহিদা ছিল খুবই কম। ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার গরুর চাহিদা ছিল খুবই বেশি।
করোনার বিস্তার, বিড়ম্বনা ও গো-হাটের ভিড় এড়াতে জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পাশাপাশি বিভিন্ন বে-সরকারি সংস্থা ও অনেক খামারী অনলাইনে পশু কেনা-বেঁচা করলেও তা সাড়া ফেলেনি।
এদিকে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে আসা অসংখ্য ভারতীয় গরু ছাড়াও ৩-৪ মাস আগে থেকে ভারতীয় গরু সংগ্রহ করে লালন-পালন কারীরাও খরচের চেয়ে ২০-৩০ হাজার টাকা কম বলায় তা আর বিক্রি করেননি।
পাঁচবিবির বালিয়াতৈর এলাকার আব্দুল খালেক জানান, দুই জোড়া শাহীওয়াল জাতের বাছুর আড়াই বছর ধরে লালন-পালন করেছেন। বেশ কিছুদিন আগে বাড়িতেই গরু দুটির দাম বলেন ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। পরে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা দিয়ে গরু দুটি বিক্রি করেছেন তিনি।
Advertisement
পাঁচবিবি কোরিয়া বাজার এলাকার মিনহাজ হোসেন বলেন, ফ্রিজিয়ান জাতের বাছুর ৩ বছর লালন পালন করে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। গরু লালন-পালন করতে প্রায় খরচই হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
দিনাজপুরের হাকিমপুর থানার আব্দুল ওহাব, মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন,ভূটিয়াপাড়ার নাজমুল, চেঁচড়ার নাজমুলসহ অনেক খামারি বলেন, দাম ঠিকমতো না পাওয়ায় গরু বিক্রি করতে পারিনি। গরু নিয়ে বিপদে আছি।
আক্কেলপুর পৌরসভার গ্রামের বাসিন্দা ছাইদুল ইসলাম জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে কোরবানি দিয়ে আসছি। এ বছর করোনার কারণে আর্থিক সংকটে রয়েছি। তাই নিজ বাড়িতে পালন-পালন করা একটা ষাঁড় গরু হাটে বিক্রি করে কোরবারি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্ত দাম না পাওয়ায় আর বিক্রি করা হয়নি।
জয়পুরহাট পৌর এলাকার পল্লব হোসেন ও শান্তিনগর এলাকার আবু তাহেরসহ অনেক ক্রেতা বলেন, করোনায় আর্থিক সংকটের কারণে ৬০ হাজার টাকায় ছোট গরু কিনেছি।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন এর রাজশাহী বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ও জয়পুরহাট জেলা ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাদমান আলিফ মীম রায়হান বলেন, জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে এমন সময়ে অনলাইনে গরু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে যে ওই সময় কোনো সাড়া নেই। এ উদ্যোগটি আরও আগে নেয়া উচিত ছিল। বাইরে থেকে পাইকার না আসায় মাত্র আমার ফার্ম থেকে ১৫টি ছোট গরু বিক্রি করতে পেরেছি। ২৫ মণ মাংসের গরুসহ ৩৫টি বড় গরু বিক্রি করতে পারেনি। এ গরুগুলোতে যে খরচ হয়েছে তার চেয়ে ২০-৩০ হাজার কমে গরুর দাম বলে। মাংস হিসেবে বিক্রি করলেও দাম বলার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হবে।
জয়পুরহাট জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহফুজার রহমান জানান, জেলায় কোররবানি উপযোগী পশু এক লাখ ৪৭ হাজারেরও বেশি প্রস্তুত করেছিল খামারিরা। কোরবানির পরও ২৫ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকার কথা ছিল কিন্ত করোনার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় গরু না যাওয়া ও অর্থনৈতিককালে অনেকেই কোরবানি দিতে না পারায় প্রায় ৪০ হাজার গরু অবিক্রিত রয়ে গিয়েছে খামারিদের।
রাশেদুজ্জামান/এমএএস/এমএস