এ দেশে একটাই ববিতা। যিনি চলচ্চিত্রের রুপালি পর্দায় মুগ্ধ এক কবিতা হয়ে আছেন। তার অভিনয়ের আলোয় দীর্ঘদিন ধরেই উদ্ভাসিত ঢাকার সিনেমা। তার হাসি, তার সৌন্দর্যের সুরভি ছড়িয়েছে দেশ ছেড়ে বিদেশেও।
Advertisement
আজ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতার জন্মদিন। নায়িকার পুরো নাম ফরিদা আক্তার পপি। করোনার কারণে ঘরবন্দি হয়েই আছেন দীর্ঘদিন। জানা গেছে, বাসাতেই কাটাবেন জন্মদিনটিও।
জন্মদিন প্রসঙ্গে ববিতা বলেন, ‘করোনার মহামারিতে সব আনন্দ উৎসবই ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। একটা অস্থিরতা ভিড় করে থাকে মনের মধ্যে সবসময়। বিষণ্নতায় আচ্ছন্ন থাকি। মনটাও ভালো নেই। তাই জন্মদিন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করিনি এবার। ঘরেই আছি।’
তিনি জানান, ‘অনেকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এটুকুই এখন ভালোবাসা। কাউকে বাসায় আসতে বলবো সেই সুযোগও নেই। কী এক কঠিন দিন চলে এলো আমাদের জীবনে।’
Advertisement
১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা নিজামুদ্দীন আতাউব একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা বি. জে. আরা ছিলেন একজন চিকিৎসক। বাবার চাকরি সূত্রে তারা তখন বাগেরহাটে থাকতেন। তবে তার পৈতৃক বাড়ি যশোর জেলায়। শৈশব এবং কৈশরের প্রথমার্ধ কেটেছে যশোর শহরের সার্কিট হাউজের সামনে রাবেয়া মঞ্জিলে।
তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়বোন সুচন্দা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, বড়ভাই শহীদুল ইসলাম ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেজভাই ইকবাল ইসলাম বৈমানিক, ছোটবোন গুলশান আখতার চম্পা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং ছোটভাই ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা।
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ববিতা ‘সংসার’ ছবিতে রাজ্জাক ও সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির নির্মাতা ছিলেন জহির রায়হান। ছবিটি মুক্তি পায়নি। জহির রায়হান ববিতাকে নিয়ে ‘জ্বলতে সুরুজ কা নিচে’ নামে একটি উর্দু ছবির কাজ শুরু করেন। মাঝপথে থেমে যায় এই ছবিটিরও কাজ। এরপর জহির রায়হান রাজ্জাক ও ববিতাকে নিয়ে তৈরি করেন চলচ্চিত্র ‘শেষ পর্যন্ত’। আর এটিই ছিল ববিতার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। তারপর থেকেই ঢাকাই ছবিতে এই নক্ষত্রের উত্থান। আজও তিনি আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন অভিনয়ে।
ববিতা দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে ২ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ তাকে ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিলো।
Advertisement
সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এই অভিনেত্রী আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রাঙ্গনেও প্রশংসিত হন। ২৫০ বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরপর তিন বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ‘অনঙ্গ বউ’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পান।
এছাড়াও সরকারি এবং বেসরকারি অসংখ্য পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন। এজন্য তাকে ‘পুরস্কার কন্যা’ বলা হয়।
তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় ববিতাকে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অসহায়-সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সংগঠন ‘ডিসট্রেস চিলড্রেন ইনফ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল’র শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন এই অভিনেত্রী। এছাড়াও নানারকম সামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বাংলা সিনেমার অহংকার এই অভিনেত্রী।
এলএ/এমকেএইচ