‘আল-হাজ্জু আরাফাহ’ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজ। ৯ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে জাবালে রহমতের পাদদেশে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমেই মুমিন মুসলমানের এ হজ সম্পাদিত হয়।
Advertisement
কেন আরাফাতের ময়দানে মুসলিম উম্মাহর হজ পালনকারীদের একত্রিত হতে হয়? আরাফায় না গেলে কেন হজ হয় না? ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হওয়ার রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।
আরাফাতের ময়দানে জমায়েতের প্রেক্ষাপটঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে বিশ্ব মুসলিমের একত্রিত হওয়ার, এ মিলন মেলার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কী? কেন আরাফাতের ময়দানে অনুপস্থিত হলে কাফফারা দিলেও হজ আদায় হয় না? এখানে উপস্থিত হওয়াকে হজের অন্যতম রোকনই বা করা হলো কেন?
ওকুফে আরাফা বা আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের প্রধান কারণ হলো-আল্লাহর মেহমানদের একথা স্মরণ করিয়ে দেয়া যে, সৃষ্টির সূচনাতে এ পবিত্র উপত্যকায় সবার আগে ‘আহদে আলাস্তু’ তথা আল্লাহ তাআলা রব হওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।সে দিন আদমের পিঠ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যত বনি আদম আসবে, তাদের পিপীলিকার অবয়বে সৃষ্টি করে আল্লাহ তাআলা তাদের জিজ্ঞাসা করেন-‘আলাসতু বিরাব্বিকুম অর্থাৎ আমি কি তোমাদের প্রভু নই?’উত্তরে সে দিন দুনিয়ার সব মানুষ আল্লাহকে প্রভু বলে স্বকৃতি দিয়ে বলেছিলেন- ‘ক্বালু, বালা’ অর্থাৎ ‘হ্যাঁ’। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
Advertisement
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে এ ঘটনার বর্ণনা এভাবে তুলে ধরেছেন-- ‘স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তান-সন্তুতি বাহির করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’ তারা বলে, ‘নিশ্চয়ই; আমরা স্বাক্ষী রইলাম। (এ স্বীকৃতি গ্রহণ) এ জন্য যে, তোমরা যেন কেয়ামতের দিন না বল, আমরা তো এ বিষয়ে জানতাম না।’- কিংবা তোমরা যেন না বল, ‘আমাদের পূর্ব পুরুষগণই তোআমাদের পূর্বে অংশীস্থাপন করেছে। আর আমরাতো তাদের পরবর্তী বংশধর। তবে কি মিথ্যাবাদীদের কৃতকর্মের জন্য তুমি তাদের ধ্বংস করবে?’- আর এভাবে আমি নিদর্শনসমূহ বিবৃত করে রাখি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৭২-১৭৪)
জিলহজের ৯ তারিখ বিশ্ব মুসলিম সম্মিলন ‘ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে’-উপস্থিতি সব মানুষকে সেই তাওহিদের স্বীর্কতির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এ কারণেই ইয়াওমে আরাফা তথা ৯ জিলহজকে হজের অন্যতম রোকন হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
এ দিন মানুষের সৃষ্টির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও স্বীকৃতির স্মরণ হলেই মানুষ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি, তাওবাহ-ইসতেগফারে, তাকবিরে তাশরিক তথা তাকবির-তাহলিল ও তাহমিদে নিয়োজিত হয়।
বিশেষ করে৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে সেই ইতিহাস স্মরণ করা বা স্মৃতিচারণ করা জরুরি যে, ‘এ ময়দানেই একদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের থেকে তাকে প্রভু হিসেবে মেনে নেয়ার স্বীকৃতি গ্রহণ করেছিলেন। আর আমরা তাকে প্রভু হিসেবে স্বীকার করেছিলাম।
Advertisement
সুতরাং আজকের দিনে হজে গমনকারীরা ছাড়াও সারাবিশ্বের সব মুসলমানের এ প্রতিজ্ঞা করা উচিত, ‘শয়তানের দাসত্ব থেকে বের হয়ে আমৃত্যু আল্লাহকে প্রভু বলে স্বীকার করা এবং তার যাবতীয় বিধি-বিধান মেনে নিষ্পাপ জীবন-যাপন করা। মানুষের জীবন-মরণ-ইবাদত ও ত্যাগ একমাত্র আল্লাহর কাছে ন্যস্ত করা।
এ দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে পারলে মহান আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা না করে পারেন না। তাই ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে তার দরবারে হাজির হওয়ার ঘোষণা তালবিয়া, তাকবির পড়ে হজে অংশগ্রহণকারীরা। দিনভর নসিহত শোনা, তাকবির, তাহলিল, তাহমিদ, তাওবাহ-ইসতেগফার, দোয়া, কান্নাকাটি ও রোনাজারিতে অতিবাহিত করবে মুমিন মুসলমান।
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস মানুষকে ইয়াওমে আরাফার ইবাদত-ক্ষমাপ্রার্থনা ও আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফার দিন আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করে থাকেন এবং তার কাছাকাছি হন। আর ফেরেশতাদের কাছে গৌরব করে বলেন, দেখ ওরা কি চায়?’ (মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তিনি নিম্ন আকাশে নেমে আসেন ও ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা সাক্ষী থাক আমি ওদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।’ (মুসনাদে বাযযার, তাবারানি, তারগিব)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন-‘শ্রেষ্ঠ দোয়া (ক্ষমা প্রার্থনা) হলো আরাফার দোয়া (ক্ষমা প্রার্থনা)।’তাই আল্লাহ তাআলার সেই ঐতিহাসিক স্বীকৃতির কথা স্মরণ করে তার কাছে দোয়া-দরূদ ও ইসতেগফারে নিয়োজিত থাকা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নার নির্দেশনা অনুযায়ী সবাইকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। সবাইকে নিষ্পাপ করে দিন। হজ পালনকারীদের হজে মাবরূর দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ