পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, বাঘ সুন্দরবনের রক্ষক। এই বাঘের উপস্থিতির কারণেই সুন্দরবন এত বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয়। সুন্দরবনে বাঘ না থাকলে সেখানকার সামগ্রিক ইকোসিস্টেম ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা তথা ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে দেশকে বাঁচাতে সুন্দরবনের বিকল্প নেই। কাজেই সুন্দরবন তথা বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে বাঘ সংরক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সুন্দরবনে বাঘের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
Advertisement
বুধবার (২৯ জুলাই) ‘বাঘ বাড়াতে করি পণ, রক্ষা করি সুন্দরবন’ প্রতিপাদ্য ধারণ করে বিশ্ব বাঘ দিবস-২০২০ উপলক্ষে অনলাইন আলোচনা সভায় সরকারি বাসভবন হতে সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনে প্রায় ১১৪টি বাঘ রয়েছে। বন উজাড় ও অবৈধ শিকারের ফলে বাঘ বিশ্বে ‘বিপদাপন্ন’ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রকৃতিতে বিদ্যমান বাঘের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৮৯০টি। বাঘ বিশেষজ্ঞদেরর মতে, বাঘের সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ার এই প্রবণতা চলমান থাকলে আগামী কয়েক দশকে পৃথিবী থেকে বাঘ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আবাসস্থলের উন্নয়ন ও নিয়মিত টহল প্রদান করে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য যথোপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার বাঘের আবাসস্থল উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বর্তমানে সুন্দরবনের প্রায় ৫২% এলাকা অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
Advertisement
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উভয় সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ, বাঘ ও শিকারী প্রাণী পাচার বন্ধ, দক্ষতা বৃদ্ধি, মনিটরিং ইত্যাদির জন্য ২০১১ সালে একটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে সংবিধানে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী বাঘ ও হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর শিকারীদের শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। সুন্দরবনের বাঘ রক্ষার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে টাইগার কোঅর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আক্রমণে জানমালের ক্ষতিগ্রস্ত ৫৯টি পরিবারের মধ্যে ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে।
শাহাব উদ্দিন বলেন, বাঘ সংরক্ষণের জন্য দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৮-২০২৭ প্রণয়ন করেছে। লোকালয়ে বাঘ আসামাত্র খবরাখবর আদান-প্রদান ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুন্দরবনের চারপাশের গ্রামগুলোতে বনবিভাগ ও স্থানীয় জনসাধারনের সমন্বয়ে টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। সুন্দরবন ও বাঘ সংরক্ষণের জন্য সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জে নিয়মিত স্মার্ট প্যাট্রোলিং কার্যক্রম চলছে।
বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনলাইন সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এবং অতিরিক্ত সচিব ড. মো. বিল্লাল হোসেন।
Advertisement
এমইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ