জাতীয়

থানায় বিস্ফোরণে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই : পুলিশ

রাজধানীর পল্লবী থানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। পুলিশ বলছে, স্থানীয় একটি অপরাধীচক্র কোনো অপরাধ সংগঠনের চেষ্টা করছিল। সে সংবাদটি জানার পর পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসার পর ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

Advertisement

পল্লবী থানা ভবন পরিদর্শনের পর এসব বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। তিনি বলেন, আধঘণ্টার মধ্যে দুটি শব্দ হয়েছে আপনারা শুনেছেন। আমাদের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট এক্সপার্টরা ডিভাইসগুলো স্টাডি করার পরে এক্সপ্লোসিভ সমৃদ্ধ দুটি ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করেছে।

ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, পল্লবী থানা পুলিশ ও মিরপুরের ডিবির নেতৃত্বে একটা টিম কাজ করছিল কয়েক দিন ধরে। এ অঞ্চলে মাঝে মাঝে ক্রাইম হয় নানা ধরনের। একটি গ্রুপ ক্রাইম করতে পারে বা ক্রাইম হতে পারে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত রাত ২টার দিকে কালশী কবরস্থানের দিকে পুলিশের একটি টিম যায়। সেখানে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ সমবেত হয়ে ক্রাইম করার পরিকল্পনা করছে- এমন খবরে পল্লবী থানা পুলিশ সেখানে অপারেশনে গিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে।

যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম, শহীদুল ও মোশারফ।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, সেখানে আরও কয়েকজন ছিল যারা পালিয়ে যায়। সেখান থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। একটি ডিভাইস উদ্ধার করা হয়, যেটি ওয়েট মেশিনের মতো।

কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ওজন মেশিনের মতো কোনো জিনিস কেন তাদের কাছে থাকবে... সেটা কী প্রশ্ন ওঠায় রাতেই বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট থানায় চলে আসে। তারা ওই ডিভাইসটিকে স্টাডি করে। সেটা দেখার পর তারা আরও বিশদভাবে ডিভাইসগুলো খতিয়ে দেখতে পর্যবেক্ষণ মেশিনসহ আসার জন্য ইউনিটের অন্য সহকর্মীদের খবর দেয়।

তারা যখন আরও পর্যবেক্ষণ মেশিন নিয়ে আসছিল তখন থানার ভেতর একটি বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণ ঘটার পরে আমাদের চার পুলিশ সদস্যসহ পাঁচ সদস্য আহত হন। তারা সবাই চিকিৎসাধীন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এক্সপার্ট টিম এসে পৌঁছানোর পর তারা পুরো এলাকা সিকিউরড করে। প্রাথমিক স্তরে থেকে তারা ধারণা দেন যে আরও কিছু বিস্ফোরক অবিস্ফোরিত থাকতে পারে। এরপর আরও দুটি অবিস্ফোরিত এক্সপ্লোসিভ নিষ্ক্রিয় করে থানা ভবন নিরাপদ করা হয়। আমরা এ ব্যাপারে কাজ করছি। আমরা তদন্ত করছি গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। আমাদের কাউন্টার টেরোরিজম কাজ করছে। যেহেতু এখানে বোমসদৃশ জিনিস পাওয়া গেছে। সেটা আসলেই এক্সপ্লোসিভ। এসব কেন, কোত্থেকে এলো, কী উদ্দেশ্যে এলো সেটা নিয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। কেন কী কাজে এটি ব্যবহার হতে পারে তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের পেছনে আর কারা সহযোগী ছিল তাদের খুঁজে বের করতে আমরা কাজ করছি।

Advertisement

এটা কোনো জঙ্গিসংশ্লিষ্ট হামলার পরিকল্পনার অংশ কি-না জানতে চাইলে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, যাদের আমরা গ্রেফতার করেছি তারা কোনো জঙ্গি গ্রুপের সদস্য নয়। তারা কোনো না কোনো ক্রিমিনাল গ্রুপের সদস্য। ওজন মেশিনসদৃশ বস্তু যা ছিল সেটার ভেতরেই এই এক্সক্লুসিভগুলো ছিল।

যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা এক্সপ্লোসিভগুলো দিয়ে কী করতে চেয়েছিল জানতে চাইলে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, তারা একটি অপরাধ করার পরিকল্পনা করছিল। সেটা হতে পারে কাউকে খুন করার জন্য বা কোনো সম্পত্তি দখল সংক্রান্ত বা ডাকাতি করার জন্য। আমরা তদন্তের সন্তোষজনক পর্যায়ে এলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারবো। নিজেদের নিরাপদ রাখার জন্য বা পুলিশ থেকে রক্ষার জন্য তারা এক্সপ্লোসিভগুলো ব্যবহার করতে পারে।

সম্প্রতি দেশজুড়ে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় পুলিশ সদর দফতর থেকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়। সেখানে পুলিশকে টার্গেট করে বা পুলিশ স্থাপনায় হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড, নাশকতা ও ধ্বংসাত্মকমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আদলে গঠিত নব্য জেএমবির সদস্যরা।

সতর্কবার্তায় গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে পুলিশ (পুলিশের কোনো টিম, স্থাপনা বা যানবাহন) বিমানবন্দর, তিন দেশের দূতাবাস ভবন বা দূতাবাস সংশ্লিষ্ট বিশেষ ব্যক্তি অথবা শিয়া-আহমদিয়া উপাসনালয়, মাজারকেন্দ্রিক মসজিদ, চার্চ, প্যাগোডা, মন্দিরগুলোকে টার্গেট করা হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হামলার সম্ভাব্য দিন-তারিখ উল্লেখ না থাকলেও হামলার সময় সকাল ৬-৭টা অথবা সন্ধ্যা ৭-১০টায় হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার পল্টন এলাকা থেকে একটি বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়। তার আগের দিন শুক্রবার পল্টনে একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।

জেইউ/এনএফ/জেআইএম