যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে ডাকাতের গুলিতে গুরুতর আহত বাংলাদেশি তানজিম সিয়ামকে একনজর দেখতে আকুল আকুতি জানিয়েছেন তার মা। মাথার ভেতরে গুলি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোমায় রয়েছেন তানজিম। তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন।
Advertisement
বাংলাদেশি এ দোকানকর্মীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। ছেলে সিয়ামকে একনজর দেখার আকুতি জানিয়ে তার মা মনোয়ারা বেগম মনি যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন কিন্তু এখনও কাগজপত্র যোগাড় করতে পারেননি তিনি।
ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনের সন্নিকটে রক্সবুরির একটি মুদি দোকানে গত ১৪ জুলাই ডাকাতির সময় গুলিবিদ্ধ হন তরুণ বাংলাদেশি কর্মচারী তানজিম সিয়াম (২৩)। ওইদিন রাত ৯টার দিকে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা বাংলাদেশি মালিকানাধীন আবদুল মতিনের মুদি দোকানে ঢুকে তানজিম সিয়াম (২০) নামের কর্মচারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র ও অর্থ হাতিয়ে নেয়।
দোকান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তারা তানজিম সিয়ামের মাথায় গুলি করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুরুতর আহত সিয়ামকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
Advertisement
শিক্ষার্থী ভিসায় এ বছরই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তানজিম সিয়াম। পড়াশোনা শুরুর আগে পরিবারকে সহায়তার উদ্দেশে চারমাস আগে বোস্টনের একটি দোকানে কাজ শুরু করেন তিনি। এম অ্যান্ড আর কনভেনিয়েন্স স্টোর নামে ওই দোকানে গত ১৪ জুলাই ডাকাতির সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তারপর থেকেই হাসপাতালে কোমায় রয়েছেন তিনি।
দোকানটির মালিক আবদুল মতিন স্থানীয় একটি গণমাধ্যমকে জানান, ‘নার্সরা তাকে জানিয়েছেন ডাক্তাররা দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের চেষ্টা করছেন তবে তার শরীর রক্ত ও ওষুধ নিতে না পারায় তা করা সম্ভব হচ্ছে না। ডাক্তাররা বলেছেন তারা চেষ্টা চালিয়ে যাবেন’।
আবদুল মতিন এবং বোস্টন কনভেনিয়েন্স স্টোর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন মোরশেদ বাংলাদেশে তানজিম সিয়ামের মায়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
মোরশেদ জানান, ‘তিনি তাকে সবমিলে যা বলেছেন তা হলো সন্তানকে শেষবার জড়িয়ে ধরতে চান’। সিয়ামের চিকিৎসার জন্য একটি তহবিল যোগাড়ের চেষ্টা করছেন মোরশেদ এবং মতিন। এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার মার্কিন ডলার যোগাড় হয়েছে বলে জানান তারা।
Advertisement
আবদুল মতিন জানান, শিক্ষার্থী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর পড়াশোনা শুরুর আগেই পরিবারকে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন তানজিম সিয়াম। তার সঙ্গে আমার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই কিন্তু একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমার কমিউনিটির একজনকে সহায়তা করা আমার দায়িত্ব। আর সেভাবেই আমার দোকানে কাজ শুরু করে’।
গত ১৪ জুলাইয়ের ওই ডাকাতির ঘটনার নিরাপত্তা ফুটেজ এখনও পুলিশ অবমুক্ত করেনি বলে জানান আবদুল মতিন। ডাকাতির আগে সিয়াম সন্দেহভাজনকে টাকা ও সিগারেট দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তারপরও তাকে পেছনের কক্ষে টেনে নিয়ে গিয়ে গুলি করা হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বোস্টন পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুকধারীর বলা সব কথাই শুনেছিল সিয়াম কিন্তু তারপরও সেগুলো তাকে মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারেনি।
বোস্টন কনভেনিয়েন্স স্টোর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন মোরশেদ জানান, সিয়ামের মাকে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগোযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
মোরশেদ বলেন, শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন নিয়ে বাবা-মা এবং ভাইবোনদের ছেড়ে বোস্টনে একাই আসে সিয়াম। কিন্তু এখন তার স্বপ্ন আর কঠোর পরিশ্রম বরবাদ হয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই মামলা নিয়ে এখন পর্যন্ত নতুন কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি বোস্টন পুলিশ। বোস্টনে বাংলাদেশি দোকানে দুর্বৃত্তের হামলায় এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ডাকাতির এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) দুপুরে পৃথক দুটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। দুপুর ১-৩টা বোস্টনে পার্ক স্ট্রিটের কাছে বোস্টন কমনে এবং ৩-৫টা বোস্টন সিটি হল প্লাজার সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এমআরএম/পিআর