করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত সারা বিশ্বের সিনেমাই। নেই শুটিং, বন্ধ রয়েছে সিনেমা হল। যা কিছু ছবি গেল কয়েক মাসে মুক্তি পেয়েছে তার সবই ছিলো অনলাইনে। হলে গিয়ে দলবেঁধে সিনেমা দেখার যে আনন্দ তা থেকে বঞ্চিত সবাই।
Advertisement
তার ভিড়েই জানা গেল, এই করোনাকালীন সময়ে সিডনিতে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘পোড়ামন ২’।
পশ্চিমা বিশ্বে 'ড্রাইভ ইন মুভি শো' বেশ জনপ্রিয় মাধ্যম। বিশাল মাঠের মধ্যে বড় পর্দায় ছবি দেখা, কিন্তু তা গাড়িতে বসে। টিকিট হয় গাড়ি প্রতি। গাড়ির মালিকরা কাজ শেষ করে গাড়ি নিয়ে চলে আসেন মাঠে। এ পদ্ধতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার ছবি চললেও বাংলা ছবি কখনো প্রর্দশিত হয়নি।
‘পোড়ামন ২’ ছবির মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বিষয়টি ঘটতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সিনেমা প্রদর্শনের নতুন প্রতিষ্ঠান বাংলা ড্রাইভ ইন মুভিস (বিডিএম)।
Advertisement
প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্ণধার হলেন সিডনির অন্যতম আইটি এক্সপার্ট ওয়াহেদ সিদ্দিকী, ফিনানশিয়াল প্ল্যানার আকাশ আহসান এবং বাংলাদেশের ‘ঢাকা অ্যাটাক’খ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক দীপংকর দীপন।
বাংলা ছবি নিয়ে সুখবর দিতেই ‘পোড়ামন ২’ ছবির কলাকুশলী ও সাংবাদিকদের নিয়ে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিডিএম। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ছবিটির পরিচালক রায়হান রাফি, চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ, চিত্রনায়িকা পূজা চেরী এবং গায়ক ইমরান সহ অনেকে।
সেখানে জানানো হয়, আসছে ৮ আগস্ট সিডনির ফেয়ারফিল্ড শোগ্রাউন্ডে সিডনির সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় দেখানো হবে ‘পোড়ামন ২’। এরই মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করছে বাংলা মুভি প্রদর্শনের নতুন প্রতিষ্ঠান বিডিএম।
আরও জানানো হয়, গ্রামীন পটভুমিতে নির্মিত ‘পোড়ামন ২’ ছবিটি অমর নায়ক সালমান শাহের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গিত। ছবিটির ‘ড্রাইভ ইন’ শোটিও সালমান শাহের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হবে। পাশাপাশি বাংলা ছবির উজ্জ্বল ইতিহাসের কথা তুলে ধরা হবে একটি অডিও ভিডিও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে।
Advertisement
আয়োজনটির টিকিট বিক্রি হবে ক্রেজি টিকিটসের মাধ্যমে। একটি টিকিটে একটি গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে।
বক্তারা বলেন, যে তিনটি বিষয়কে সামনে নিয়ে বিডিএম যাত্রা শুরু করেছে তা হচ্ছে- ১. বিশ্বের অভিনব ও কনভেনশনাল যেখানেই সুযোগ আছে বাংলা সিনেমাকে সম্মানের সাথে পৌঁছে দেয়া। ২. বিদেশে বাংলা সিনেমা দেখিয়ে বাংলাদেশ প্রযোজক যেন লাভবান হয়, লাভের ন্যায্য অংশ পায় তা নিশ্চিত করা। ৩. প্রবাসীদের কাছে বাংলা সিনেমা দেখার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য কনটেন্ট এর মান নিশ্চিত করা।
বিডিএমের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন চলচ্চিত্র পরিচালক দীপংকর দীপন বলেন, ‘আমি সব সময় বাংলা সিনেমার প্রচারে প্রসারে কাজ করে গেছি। মধ্যপ্রাচ্যে দেবী ও পোড়ামন ২ সিনেমার প্রদর্শনে যুক্ত ছিলাম আমি। বাংলা সিনেমার নতুন এই যাত্রায় আমি আমার সবটুকু দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছি, কারণ আমার কাছে আইডিয়াটা খুব অভিনব আর করোনার সময়ে খুব সময়োপযোগী মনে হয়েছে।’
বিডিএমের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ওয়াহেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের মনে ড্রাইভ ইন শো আইডিয়া ৪/৫ বছর আগে এলেও এবছরের মার্চ মাস থেকে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করি। এ বছরের ১৭ মার্চ ফেয়ারফিল্ড কাউন্সিলে যোগাযোগ করি আমরা। ২৫ মে ভেনু ও সময় চুড়ান্ত করি। ১৫ জুন ড্রাইভ ইন শো অরগানাইজারদের সাথে যোগাযোগ করি। ৬ জুলাই ভেন্যু ভাড়া নেয়ার আবেদন করি এবং ১০ জুলাই ফি দিয়ে দেই এবং আমাদের ওয়েবসেইটের ডোমেইন কিনি। ছবির সিকিউরিটি এবং ভাল প্রজেকশন নিশ্চিত করার পর আমরা আগস্টে ৮ তারিখ দিনটি ঠিক করেছি ছবিটি প্রদর্শনীর জন্য।’
বিডিএমের আরেক পার্টনার আকাশ আহসান বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার ২য় প্রজন্ম হিসাবে ড্রাইভ ইন মুভি শো আমার খুব প্রিয়। ড্রাইভ ইন শোতে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার ছবি দেখতে দেখতে মনে হতো আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় কোনো সিনেমা যদি এখানে দেখতে পেতাম। সেই স্বপ্নটাই আজ পুরণ হচ্ছে ওয়ায়েদ সিদ্দিকী ভাই ও দীপংকর দীপন দাদার সাথে মিলে। ভালো লাগছে খুব।’
পরিচালক রায়হান রাফি বলেন, ‘বিডিএমের উদ্যোগটি খুবই চমৎকার। আশা করছি তাদের হাত ধরে বিশ্ব আঙ্গিনায় সগৌরবে পৌঁছে যাবে আমাদের সিনেমা।’
এলএ/পিআর