রাজধানীর ভাটারা সাইদনগরের পশুর হাটে সবই চলছিল ঠিকঠাক। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সার্বিক খোঁজ-খবর নিতে হাটে এসেছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। মেয়রের হাট পরিদর্শনে আসার খবর আগেই পৌঁছে গিয়েছিল, এ কারণে মোটামুটি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছিলেন।
Advertisement
সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিকভাবেই পালন করছিলেন। এদিকে মাইকেও সার্বক্ষণিক ঘোষণা করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বিষয়ক নির্দেশনাগুলো। এ সময় এমন কেউ চোখে পড়েনি যার মুখে মাস্ক নেই। কিন্তু পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে খুব বেশি সময় লাগলো না। মেয়র চলে যাওয়ার পরপরই দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। ইতোমধ্যে পশু বিক্রেতাদের অনেকেই মুখ থেকে মাস্ক খুলে রেখে দেন। মাস্ক ছাড়াই চলে হাটে ঘোরাঘুরি, ক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম।
এ পরিস্থিতিতে হঠাৎ উপস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন মাহামুদের নেতৃত্বাধীন একটি টিম। তাৎক্ষণিক বিক্রেতারা বুঝে উঠতেই পারেনি যে হাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু হয়েছে। হাটের গেটের সামনেই শহীদ নামের এক গরু বিক্রেতা মুখে মাস্ক ছাড়াই এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং অন্যদের সঙ্গে গল্প করছেন। চুয়াডাঙ্গা থেকে গরু নিয়ে আজই সকালে এই হাটে এসেছেন তিনি। মুখে মাস্ক না থাকায় তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশেই লিটন নামের আরেক গরু বিক্রেতা মুখে মাস্ক না পরে গামছা দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। তিনি গরু নিয়ে কুষ্টিয়া থেকে এসেছেন। তাকেও জরিমানা গুনতে হলো ৫০০ টাকা।
ততক্ষণে অনেকেই জেনে গেছেন হাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। খবর জানা মাত্রই দৌড়ে হাটের গেট দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলেন মুকুল নামের একজন গরু বিক্রেতা। কিন্তু দৌড়েও রক্ষা পেলেন না। ম্যাজিস্ট্রেটের চোখে পড়ায় অন্যদের দ্রুত নির্দেশ দেন তাকে ধরা আনতে। ধরা খেয়ে নিজের ভুল স্বীকার করেন মুকুল। কিন্তু কোনো ছাড় পেলেন না। তাকেও ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
Advertisement
অভিযানের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন মাহামুদ জাগো নিউজকে বলেন, এই তিনজন গরু বিক্রেতার মুখে মাস্ক না থাকায় প্রত্যেককে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। হাটে আমাদের অভিযান ঈদ পর্যন্ত চলবে। আমাদের একটি মনিটরিং টিম আছে। স্বাস্থ্যবিধি যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে হাটে হাটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। সেখানে জরিমানা আদায় এবং জেল দেয়া হচ্ছে।
এর আগে পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি-না, তার খোঁজ-খবর নিতে দুপুরে ভাটারা সাইদনগরে মনিটরিং টিমসহ পশুর হাট পরিদর্শন করেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি হাটে ঢুকে সার্বিক বিষয় খোঁজ-খবর নেন। ক্রেতা, বিক্রেতা, ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনাও দেন মেয়র।
পরিদর্শনকালে আতিকুল ইসলাম বলেন, এই পরিস্থিতির মধ্যে আমরা হাট কমিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। যদিও এটি পরিপূর্ণভাবে পালন করানো একটি চ্যালেঞ্জ। তবুও আমরা চেষ্টা করছি। হাটে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার, মাস্ক পরিধানসহ সামাজিক দূরত্ব বজার রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সবার সম্মিলিত চেষ্টা ছাড়া এটা বাস্তবায়ন করানো কঠিন হবে।
জানা গেছে, এবার ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ১৭টি স্থানে পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে ডিএনসিসি এলাকায় ছয়টি পশুর হাট বসছে। তার মধ্যে একটি স্থায়ী হাট ও পাঁচটি অস্থায়ী। স্থায়ী হাটটি বসবে গাবতলীতে। অস্থায়ী হাটগুলো বসবে উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ ভবন পর্যন্ত খালি জায়গায়, কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গায়, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গায়, ভাটারা (সাইদ নগর) পশুর হাট এবং উত্তরখান মৈনারটেক হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গায়।
Advertisement
পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি এবং অন্যান্য শর্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না তা মনিটরিংয়ের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমানকে।
করোনা সংক্রমণ রোধে হাটের ইজারাদারদের ইজারা প্রদত্ত অস্থায়ী পশুর হাটে বাধ্যতামূলকভাবে বেশকিছু ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে হাটের প্রবেশপথে টিভি স্ক্রিনযুক্ত থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে প্রবেশকারীর শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হবে। গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। হাটে প্রত্যেক প্রবেশকারীকে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, ক্যাপ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে প্রবেশ করতে হবে।
করোনা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি সংবলিত ব্যানার ও পোস্টার টাঙানোসহ এসব বিষয়ে মাইকে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করতে হবে। জীবাণুনাশক দিয়ে হাটের সর্বত্র ও আশপাশের সংশ্লিষ্ট জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হাটে প্রয়োজনীয়সংখ্যক সাবান, পানির ড্রাম ও বেসিন রাখতে হবে।
হাটে প্রবেশ এবং বহির্গমনের জন্য পৃথক গেট করতে হবে এবং নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাটে প্রবেশ ও বের হতে হবে। একাধিক প্রবেশ পথ হলে প্রত্যেক প্রবেশ পথেই টিভি স্ক্রিনযুক্ত থার্মাল স্ক্যানার বসাতে হবে। বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের নিমিত্তে করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো স্ক্রিনে সার্বক্ষণিকভাবে দেখাতে হবে। ইজারাদারকে হাটের জন্য প্রশিক্ষিত ও স্বেচ্ছাসেবক টিম তৈরি করতে হবে। ক্রেতা সঙ্গে করে অনেক লোক নিয়ে হাটে আসা যাবে না এবং ক্রেতাকে নির্ধারিত দূরত্ব থেকে পশু দেখতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতাকে অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়ে উৎসাহিত করতে হবে। হাটে পর্যাপ্তসংখ্যক ডাস্টবিন স্থাপন করতে হবে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত মেডিকেল বর্জ্য যেমন- গ্লাভস, মাস্ক, হেড কাভার, স্যানিটাইজার বোতল রাখার জন্য পৃথক ডাস্টবিন রাখতে হবে। সর্বোপরি স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন নিশ্চিত করতে হবে।
এএস/এমএসএইচ/এমকেএইচ