কুরবানির জন্য ছয় ধরনের পশু নির্ধারণ করেছে ইসলাম। সুস্থ, সুন্দর ও পষ্টপুষ্ট উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কুরবানির জন নির্ধারিত। তবে এগুলোকে সুনির্দিষ্ট কিছু দোষ বা খুঁত থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
Advertisement
কুরবানির জন্য পশু নির্বাচনের অন্যতম শর্তই হলো পশু নিখুঁত হওয়া। শারীরিক খুঁত বা দোষ থাকলে এ পশুতে কুরবানি হবে না। যেসব পশুতে কুরবানি হবে না সে সম্পর্কে ইসলামে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। তাহলো-
> চোখের সমস্যাহজরত আবু যাহ্হাক উবায়দ ইবনে ফায়রূজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমি হজরত বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বললাম, যে সব পশুর কুরবানি করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন তা আমার কাছে বর্ণনা করুন।তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (খুতবা দিতে) দাঁড়ালেন আর আমার হাত তাঁর হাত অপেক্ষা ছোট। তিনি বললেন- চার প্রকার পশুর কুরবানি বৈধ নয়-- কানাপশু; যার কানা হওয়াটা (চোখে দেখতে না পাওয়া) সুস্পষ্ট।- রোগা পশু; যার রোগ সুস্পষ্ট।- খোড়া পশু; যার খোঁড়া হওয়া সুস্পষ্ট।- দুর্বল পশু; যার হাঁড়ে মজ্জা নেই।আমি বললাম, ‘আমি শিং ও দাঁতে ত্রুটি থাকাও পছন্দ করি না। তিনি বললেন, তুমি যা অপছন্দ কর, তা ত্যাগ কর; কিন্তু অন্য লোকের জন্য তা হারাম করো না।’ (নাসাঈ)
এছাড়াও চোখ ও কান ভালোভাবে দেখে নেয়ার কথা এসেছে হাদিসে। যাতে চোখ ও কানে কোনো ধরনের খুঁত না থাকে। এ সম্পর্কে হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় একাধিক হাদিস এসেছে। তাহলো-হজরত হুজাইয়্যা ইবনে আদি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমি হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আদেশ করেছেন, আমরা যেন কুরবানির পশুর চোখ ও কান উত্তমরূপে দেখে নিই।’ (নাসাঈ)
Advertisement
> মুকাবালা : যে পশুর কানের এক দিক কাটাহজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনিবলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আদেশ করেছেন, আমরা যেন কুরবানির পশুর চোখ ও কান উত্তমরূপে দেখে নিই। আর আমরা যেন কানের অগ্রভাগ কাটা, কানের পেছন দিক কাটা, লেজ কাটা এবং কানের গোড়া থেকে কাটা পশু কুরবানি না করি।’ (নাসাঈ)
> মুদাবারা : যে পশুর কানের মূল থেকে কাটাহজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত তিনিবলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আদেশ করেছেন, আমরা যেন (কুরবানি পশুর) চোখ ও কান ভালরূপে দেখে নিই। আর আমরা যেন এমন পশু দ্বারা কুরবানি না করি যা কানা, যার কানের একদিক কাটা, যার কানের গোড়া কাটা এবং যার কান ফাঁড়া এবং যার কানে ছিদ্র আছে।’ (নাসাঈ)
> খারকা : ঐ পশু যার কানে ছিদ্র আছেহজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনিবলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ পশু কুরবানি করতে নিষেধ করেছেন যার কানের একদিক কাটা বা গোড়া কাটা বা যার কান কাটা বা যার কানে ছিদ্র আছে এবং যার কান মূল থেকে কাটা।’ (নাসাঈ)
> শারকা : কান ফাটা পশুহজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে পশুর কানের এক দিক কাটা বা কানের গোড়ার দিক থেকে কাটা অথবা যার কান ফাটা বা যার কানে ছিদ্র আছে কিংবা যে পশু কানা, তা দ্বারা কুরবানি করা যাবে না।’ (নাসাঈ)
Advertisement
> আযবা : শিংভাঙ্গা পশুহজরত জুরাই ইবনে কুলায়ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিং ভাঙ্গা পশু কুরবানি করতে নিষেধ করেছেন। এরপর আমি তা সাঈদ ইব্ন মুসায়্যিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বললেন, ‘শিংয়ের অর্ধেক বা তার বেশি ভাঙ্গা হলে সেই পশু কুরবানি করতে নিষেধ করেছেন।’ (নাসাঈ)
হজরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’টি শিংওয়ালা হৃষ্ট-পুষ্ট দুম্বা কুরবানি করলেন। যার পাসমূহ শুভ্র ছিল আর পূর্ন শরীর কালো আর তার পেট ছিল কালো, আর চোখও ছিল কালো।’ (নাসাঈ)
এ ছাড়াও যেসব ভালো পশু দিয়ে কুরবানি দেয়া যাবে না-কুরবানি আল্লাহর জন্য আত্মত্যাগের অনন্য নিদর্শন। সুতরাং নিখুঁত ও দোষবিহীন পশু দ্বারা কুরবানি আদায় করতে হবে। এমনকি কুরবানির পশু গৃহপালিত হতে হবে।
> জংলি পশু দিয়েও কুরবানি দেয়া যাবে না, যার মধ্যে জংলিভাব রয়ে গেছে। যদিও জংলি পশুর গোশত হালাল; কিন্তু কুরবানির ক্ষেত্রে কোনো জংলি পশু দিয়ে কুরবানি করা বৈধ নয়।
> আবার হরিণ দ্বারাও কুরবানি দেয়া যাবে না। যদিও হরিণের গোশত হালাল। চাই তা জংলি হোক কিংবা গৃহপালিত হোক।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরবানি আদায়ের ক্ষেত্রে উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি যথাযথ খেয়াল রেখে কুরবানির পুশু ক্রয় বা প্রতিপালন করার তাওফিক দান করুন। একনিষ্ঠতার সঙ্গে গ্রহণযোগ্য কুরবানি আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর