দেশজুড়ে

উনি কোনো নির্যাতন করেননি!

জমি কেনার টাকা চেয়ে না পেয়ে কুষ্টিয়ার এক কলেজ ছাত্রী স্ত্রীর উপর অমানষিক নির্যাতন চালিয়েছেন তার প্রকৌশলী স্বামী। গোটা শরীরে দগদগে ক্ষত নিয়ে তাসনুবা রেজা (১৯) নামের ওই গৃহবধূ কলেজ ছাত্রী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২নং ওয়ার্ডের ৪নং কেবিনে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তবে তার স্বামী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।আহত তাসনুবা শহরের ইসলামীয়া কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। স্বামী লাহরি খান পিডিবির উপ-সহকারী প্রকৌশলী। তিনি বর্তমানে নওগাঁ জেলায় কর্মরত। গত ২৩ অক্টোবর নওগাঁয় ভাড়া বাসায় আটকে রেখে স্বামী লাহরি খান ও তার বাড়ির মালিক বিদ্যুৎ হোসেন মিলে লোহার পাইপ, মোটরসাইকেলে ব্যবহৃত লম্বা লগ তালা ও টেস্টার দিয়ে অত্যাচার চালান তাসনুবার উপর। পরে কুষ্টিয়া থেকে তার বাড়ির লোকজন গিয়ে নওগাঁ থানা থেকে উদ্ধার করে তাসনুবাকে। নওগাঁ থানার পুলিশ তাসনুবার পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো সাদাকাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের বের করে দেয়। তাসনুবা জাগো নিউজকে জানান, দেড় বছর আগে লাহরি খানের সঙ্গে তার বিয়ের হয়েছে। বিয়ের সময় আমার পরিবার তাকে পাঁচ লাখ টাকা দেয়। পরবর্তীতে নওগাঁয় ৩ কাঠা জমি কিনবে বলে আমাকে জানায়। এজন্য টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার উপর প্রায় দিনই অত্যাচার করা হতো। সর্বশেষ গত ২৩ অক্টোবর রাতে শহরের দয়ালের মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় আমাকে বেঁধে আমার স্বামী ও বাড়িওয়ালা বিদ্যুত হোসেন মিলে আমার উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেন।নির্যাতনে তাসনুবার বাম পা থেকে কোমর পর্যন্ত কালো চওড়া দাগ পড়ে গেছে। বাম হাত থেকে পিঠ পর্যন্ত এক রকম রক্ত জমাট বেধে কলো হয়েছে। এছাড়া টেস্টার দিয়ে হাত ও মাথায় খোঁচানো হয়েছে। তাসনুবার মা লুৎফন্নাহার জাগো নিউজকে জানান, ২৩ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে জামাইয়ের মোবাইলে রিং করি। সে সময় সে আমাকে বলে, আপনারা এসে মেয়েকে নিয়ে যান। পরে রাতে স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে নওগাঁ যাই। গিয়ে দেখি থানায় আমার মেয়ে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছে। পুলিশ সাদা কাগজ ও তালাক নামায় স্বাক্ষর নিয়ে আমাদের থানা থেকে বের করে দেয়। হাসপাতালে নিতে চাইলে স্থানীয় যুবকরা আমাদের বাঁধা দেন। পরে একটি মাইক্রো ভাড়া করে ভোরে কুষ্টিয়া এসে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। আমার মেয়ের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তার ন্যায্য বিচার চাই। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার পাল জাগো নিউজকে জানান, তাসনুবা নামের যে মেয়েটি ভর্তি আছেন তার সারা শরীরে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। ভোতা অস্ত্র দিয়ে তাকে মারপিট করা হয়েছে। এছাড়া কোনো বস্তু দিয়ে শরীরে খোঁচানো হয়েছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। মধ্যযুগীয় কায়দায় মেয়েটির উপর নির্যাতন করা হয়েছে।তাসনুবা অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, নওগাঁ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে সাদা কাগজ ও তালাকনামায় স্বাক্ষর নিয়ে নেন। স্বাক্ষর দেব না জানালে ওসি বলেন, খারাপ মামলায় কোর্টে চালান দিয়ে দেব। আমার বাড়ির লোকজনকে থানায় জিম্মি করে রাখা হয়। তাসনুবা জানান, তিনি শহরের ইসলামিয়া কলেজ থেকে এ বছর এএইচসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। তাসনুবা শহরের আমলাপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী সোহেল রেজার মেয়ে। এদিকে নওগাঁ থানা কোনো অভিযোগ না নেয়ায় কুষ্টিয়া আদালতে একটি মামলা দায়েরের চেষ্টা করছে পরিবার। এজন্য আইনি সহয়তা নেয়ার জন্য কুষ্টিয়া ব্লাস্ট এর সহযোগিতা নিচ্ছেন তাসনুবার পরিবার। তাসনুবার স্বামীর বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লাহরি খান মুঠোফোনে জাগো নিউজকে জানান, স্ত্রীর উপর আমি কোনো নির্যাতন করিনি। থানা থেকে সুস্থ মেয়েকে তারা মুচেলেকা দিয়ে নিয়ে গেছেন। থানা থেকে আমি তাকে তালাক দিয়েছি। ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বললে সব জানতে পারবেন। উনি আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারবেন।   আল-মামুন সাগর/এমজেড/আরআইপি

Advertisement