বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠন। সে নিয়ে জল ঘোলা হচ্ছে সিনেমাপাড়ায়। বিশেষ করে নানা অভিযোগ উঠছে জায়েদ খানের পাশে শিল্পী সমিতির সদস্যদের সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করাসহ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন চিত্রনায়িকা পপিও।
Advertisement
বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি তার সঙ্গে জায়েদের বাজে ব্যবহার নিয়ে মুখ খুলেছেন। এবার তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। সেখানে তিনি তাকে পাঠানো জায়েদ খানের একটি অফিসিয়াল চিঠির ছবিও পোস্ট করেছেন। চিঠিটি শিল্পী সমিতির প্যাডে হলেও জায়েদ খানের স্বাক্ষরের নিচে লেখা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ২৬ জুলাই দিবাগত রাতে দেয়া স্ট্যাটাসটি এখন ভাইরাল।
সেখানে পপি বেশকিছু প্রশ্ন উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘যদিও আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ ও মানসিকভাবে হতাশ হওয়ার পরও চুপ থাকতে পারলাম না। আমি চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রের মানুষকে শ্রদ্ধা করি এবং ভালোবাসি। আমি একজনকেই দালাল বলে আখ্যায়িত করেছি, বিষয়টি আমি এবং সে উভয়ই জানি। গোটা চলচ্চিত্রের সবাই জানে। তাহলে কেন এই চিঠি? #কে পাঠিয়েছিল?#কোন সমিতির চিঠি এটা?#কার স্বাক্ষর?#জায়েদ খানের নামে ব্যক্তিগত বা পার্সোনাল কোন সমিতির চিঠি এটা?#কী এবং কার স্বার্থে এই চিঠি?#এই সমিতির মেম্বার কারা এবং উপদেষ্টা কারা?শুধু আমি না অনেকেই পেয়েছে এমন চিঠিআমার প্রশ্ন?তা হলে কেন সে শিল্পী সমিতির প্যাড ব্যবহার করলো?#কে দিয়েছে তাকে এ সাহস, এত বড় অন্যায় বা অপরাধ করার?’
পপি আরও লেখেন, ‘অনেক কষ্ট ও শ্রম দিয়ে আজকে আমি পপি হয়েছি, আমার একক নামে বহু সুপার বাম্পারহিট মুভি ফিল্ম ইন্ড্রাস্টিকে উপহার দিয়েছি। ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহুবার রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছি। শ্রদ্ধেয় ফারুক, আলমগীর, কাঞ্চন, রুবেল, ডিপজল, মিশা, সোহেল রানা ভাইয়েরা, যাদের সাথে আমি সৌভাগ্যক্রমে বহু ছবিতে একসাথে কাজ করেছি তারা কী আমার মতো শিল্পীকে সদস্য পদ বাতিলের জন্য চিঠি দিতে বলেছেন? আমাদের মতো শিল্পীদের অসম্মান করার জন্য বলেছেন আপনারা? সরকার বলেছে? তাহলে চিঠিতে তাদের স্বাক্ষর কোথায়? চিঠিতে কার স্বাক্ষর? তা হলে জায়েদ খান কি বলতে চান? এই সিনিয়ররা চায়, আমাদের মতো শিল্পীরা চলচিত্রের থেকে বিদায় নিক?’
Advertisement
তিনি আরও প্রশ্ন করে বলেন, ‘শ্রদ্ধেয় আনোয়ারা আন্টি, ববিতা আপা, শাবানা আপা, চম্পা, নতুন, রোজিনা আপুরাসহ মৌসুমি আপু, সানি, রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিব, অমিত হাসান, পূর্ণিমা, নিপুন, মুক্তি, নিরব, সাইমন ও পপিসহ ১৮৪ জন (জায়েদের বাতিলকৃত শিল্পী) এবং আরও অনেক গুণী এবং পরীক্ষিত সম্মানিত সর্বজন স্বীকৃত বহুবার জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীরা কী চলচিত্র থেকে চলে যাবে? শুধু এক জনের নোংরামির কারণে? উনার পছন্দ অপছন্দের কারণে?
উল্লেখ্য, যেখানে ৮-১০ বছরেও একটা সুপার হিট দূরে থাক, হিট মুভিও ইন্ড্রস্টিকে দিতে পারেনি...’
পপি তার স্ট্যাটাসে আরও লেখেন, ‘সবার মাথায় কাঁঠাল রেখে সিনিয়রদের নাম খারাপ কাজে ব্যবহার, তাদেরকে সামনে রেখে অবলীলায় যা তা করে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য। শিল্পী সমিতির মাত্র ৪০০ সদস্যের মন যে জয় করতে পারেনি- সে লক্ষ মানুষের মন জয় করবে কি দিয়ে? নোংরা রাজনীতি, পিস্তল, অশোভন আচরণ, মানুষকে বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি দিয়ে, মিথ্যা কথা দিয়ে, সদস্যপদ খারিজ করে।
যেখানে তার সদস্যপদটা আমি, আমরা বা আমাদের মতো সম্মানিত ১৮৪ জন শিল্পীর ভোটের কারণে। যে তার জন্মকে অস্বীকার করে, তাকে কি বলে সম্মোধন করা উচিত তা আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম। চলচ্চিত্র শিল্প চর্চার জায়গা। মেধা বিকাশের জায়গা, ইতিহাস বলে একজন শিল্পী বিভিন্ন পদে জায়গা করে নিতে পারে। তবে সবার পক্ষে একজন শিল্পী হয়ে ওঠা সম্ভব না।
Advertisement
দর্শকের মন জয় করতে শ্রম ও ভালো কাজ তো লাগবেই, সেক্ষেত্রে নেতা নয়, অভিনেতা হতে হয়। দর্শকদের তো আর সদস্য পদ নেই... বাতিল করবে কি দিয়ে? শিল্প বা শিল্পীকে ধ্বংস না করে নিজের চরিত্র ঠিক করে শিল্পী হতে চেষ্টা করা উচিত। তবেই চলচ্চিত্রের মানুষ হওয়া যাবে এবং দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া যাবে।’
নিজেকে জনমানুষের নায়িকা দাবি করে পপি লেখেন, ‘একজন শিল্পীর কী চাই- সম্মান স্বীকৃতি আর ভালোবাসা। সর্বোপরি আমি বলতে চাই, আমি চলচ্চিত্রের পপি, আমি সাধারণ জনগণের পপি। কোনো ব্যক্তি বা সমিতির পপি নই।’
এলএ/পিআর