কদিন বাদেই কোরবানির ঈদ। সারা বছর অলস সময় পার করলেও কামারেরা কোরবানির ঈদের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। কোরবানির মৌসুমেই সারা বছরের উপার্জন করেন তারা। এই সময়ে কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহায় ছন্দময় পিটাপিটিতে মুখর থাকতো কামারপাড়া। টুং টাং শব্দে ভোরেই ঘুম ভাঙতো দোকানের আশপাশের এলাকার মানুষের। কেউ আসতেন কোরবানি করার অন্যতম অনুসঙ্গী ধারালো ছুরি, বটি, ধামাসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে। আবার কেউবা আসতেন এসব সরঞ্জাম শান দিতে। বছরের অন্য সময়ে দিনে ২শ থেকে ৩শ টাকা আয় হলেও এ সময়ে আয় হতো ৭শ থেকে ৮শ টাকা পর্যন্ত।
Advertisement
কিন্তু এ বছর করোনা পাল্টে দিয়েছে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর অঞ্চলের কামারশালাগুলোর চিরচেনা চিত্র। কাঙিক্ষত কাজ না পাওয়ায় আয়-রোজগারে ভাটা পড়েছে তাদের। আবার যে পরিমাণ কাজ পাওয়া যাচ্ছে কয়লা ও ইস্পাতের অভাবে বানাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকাররা। তাই পুরোনো ছুরি-চাকু, চাপট, বটি শান দিয়ে রাখছেন।
সরেজমিনে জীবননগর বাজার ও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কামারপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো কর্মব্যস্ততা নেই তাদের। অথচ এই সময়টাতে অর্ডার নিয়ে ঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে দোকানে বাড়তি কর্মচারী নিয়োগ দিয়েও হিমশিম খেতে হতো। আগে ভাগেই লোহা কিনে রাখতে হতো। শান দেয়ার যন্ত্র ব্যবহারের জন্য মজুত করতে হতো কয়লা। আর এখন এ পরিস্থিতিতে গ্রাহকের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে তাদের। পুরোনোগুলোতেই শান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারা অনেকেই।
পূর্বপুরুষের হাত ধরে এই পেশায় এসেছেন অধিকাংশ কর্মকার। আধুনিক যন্ত্রাংশের দাপটে কামার শিল্পে দুর্দিন চলছে। তারপরও অনেকে বহু কষ্ট করে বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রেখেছেন।
Advertisement
উপজেলার উথলী গ্রামের অনিল কর্মকার বলেন, ঈদের এক মাস আগ থেকেই দা, ছুরি, বটি, চাপট ইত্যাদি তৈরি করা শুরু করতাম। আর কোরবানির এক সপ্তাহ আগে থেকে বেচা-বিক্রি শুরু হয়ে চলতো ঈদের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। একেতো এ পেশার দুর্দিন তার ওপর করোনা। সব মিলিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এ বছর তেমন কাজ পাওয়া যায়নি। তাই পুরোনো ছুরি, চাপট, বটি, শান দিয়ে রাখছি বিক্রির আশায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কাজ নেই বললেই চলে। করোনার কারণে কাজ একেবারে কমে গেছে।
আন্দুলবাড়ীয়া গ্রামের কর্মকার সুদেব বলেন, দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষাঙ্গিক খরচ দিয়ে সারা বছরই লোকসানে থাকতে হয়। এ লোকসান কাটিয়ে উঠতে আমরা কোরবানি ঈদের অপেক্ষায় থাকি। এবার মাত্র কয়েকটি দা-ছুরি বিক্রি ও শান দেওয়ার কাজ পেয়েছি। বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের দোকানে চায়না থেকে আমদানি করা মাংস কাটার ধারালো অস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ সেগুলো কেনায় কামারদের কাছে আসছে না।
শুধু এই এলাকায় নয়, একই অবস্থা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। অন্যান্য বার কোরবানির মৌসুমে তিন থেকে চারজন অতিরিক্ত লোক রাখলেও এবার নিজেরা কাজ সারতে হচ্ছে। প্রতি বছরের তুলনায় চার ভাগের একভাগও কাজ নেই।
সালাউদ্দীন কাজল/আরএআর/জেআইএম
Advertisement