জাতীয়

চট্টগ্রামে ফ্লাইটের ৬ ঘণ্টা আগেও মেলেনি করোনা সনদ

কারও সকাল ৬টায় কারও আবার ৮টায়। কেউ চট্টগ্রামের শাহ আমানত থেকে কেউ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানে উঠবেন। কিন্তু সাড়ে তিন হাজার টাকা আর দুই দিনের ভোগান্তির পর ফ্লাইট ছাড়ার ছয় ঘণ্টা আগেও করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিক্ষার রিপোর্ট পাননি চট্টগ্রামের প্রায় দুইশ প্রবাসী।

Advertisement

প্রবাসে যাওয়ার আগে যাদের শেষবারের মতো থাকার কথা প্রিয়জনের সান্নিধ্যে, তখন এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না পেয়ে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে।

রোববার (২৬ জুলাই) বিকেলের মধ্যে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ‍না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিদেশযাত্রীরা।

অবস্থানরতরা বলেন, কারও সোমবার সকাল ৬টায় আবার কারও ৮টায় ফ্লাইট রয়েছে। কিন্তু করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। তাই তারা রিপোর্ট না পেয়ে ব্যাগেজ নিয়েই সিভিল সার্জন অফিসের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।

Advertisement

কাজী রবিউল আলম নামে এক যাত্রী জানান, ভোর পাঁচটায় বিমানবন্দরে রিপোর্ট করার কথা থাকলেও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ভোর চারটায় তার বাবার করোনা রিপোর্ট দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। সাধারণ মানুষেরা যখন ২০০ টাকায় করোনা রিপোর্ট পাচ্ছে, তখন পুরো সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়েও এই হয়রানি কেন? এই যাত্রীদের অনেকেই আবার পজিটিভ হচ্ছেন। যার ফলে মধ্যরাতে রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরাও ঝুঁকিতে আছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা দুবাই যাওয়ার জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নমুনা দিয়েছিলেন। রোববার (২৬ জুলাই) ৩৫০০ টাকা ফিও নিয়েছে। কিন্তু রিপোর্ট এখনও দেইনি। জানতে চাইলে বলেন, ভোর ৪টায় রিপোর্ট দেবে। আবার এদিকে সকাল ৫টায় এয়ারপোর্টে রিপোর্টিং টাইম!’

রবিউল আলম অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রায় ১৫০ জন এখনো সিভিল সার্জন অফিসে দাঁড়ানও। এর মধ্যে অনেকের পজিটিভ পাচ্ছে, যারা আশেপাশেই দাঁড়ানো। সবকিছুর একটা লিমিট থাকে। তাদের এ সমস্যার কারণে অনেক প্রবাসীর বিদেশ যাত্রা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিলো।’

বাসার নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘সকাল ছয়টায় আমাদের ফ্লাইট। এখন বাজে রাত ১২টা। ভোরে যদি বিমানে উঠতে না পারি তাহলে আমাদের টিকিটের টাকাগুলো নষ্ট হবে। সঠিক সময়ে যেতে না পারলে কর্তৃপক্ষ চাকরি থেকেও বাদ দিতে পারে।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে প্রায় দুইশ মানুষ অবস্থান করছে। রোববার বিকেলের মধ্যে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও আজ মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ‍রিপোর্ট পাইনি। দু-একজন যারা বিচ্ছিন্নভাবে পাচ্ছেন তাদের অনেকে আবার পজিটিভ। এতে আমরাও ঝুঁকিতে পড়েছি।’

এ ভোগান্তির বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বিও স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, সার্ভার ডাউনের কারণে রোববারের রিপোর্ট দিতে বিলম্ব হচ্ছে। রাতের মধ্যে সবার রিপোর্ট দেয়ার জন্য চেষ্টা করা হবে।

প্রসঙ্গত, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশ যাত্রার আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই যাত্রীকে করোনা পরীক্ষার সনদ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আর এ ৭২ ঘণ্টায় তাদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডি হাসপাতালের পরীক্ষাগারে বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রামের বাসিন্দারা এ পরীক্ষাগারের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা করতে পারবেন।

গত সোমবার থেকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা শুরু হয়। মঙ্গলবার থেকে বিআইটিআইডি প্রবাসীদের করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু করে। চট্টগ্রামে শনিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে ৬৬৩ জন বিদেশযাত্রীর নমুনা সংগ্রহ করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ পর্যন্ত ১১ জন প্রবাসীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

আবু আজাদ/এমএসএইচ