কলকাতার টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান ও সিরিয়ালের প্রতি দেশীয় দর্শকদের অতিমাত্রায় আসক্তি। সেইসব সিরিয়ালের চরিত্রদের জনপ্রিয়তাও আকাশ ছোঁয়া। যার দুই একটি চরিত্র নিয়ে আদিখ্যেতা পৌঁছে গেছে সীমার বাইরে। শিক্ষার্থীদের খাতার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে কলকাতার টেলিভিশনের ‘কিরনমালা’, ‘বুঝে না সে বুঝে না’ সিরিয়ালের নানা উদ্ভট দৃশ্যের ছবি। শুধু তাই নয়, ‘পাখি’ নামে একটি চরিত্রের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পোশাক এনেছে বাজারে। সেই পোশাক কিনতে না পেরে আত্মহত্যার মতো বেদনাদায়ক ঘটনাও ঘটেছে। যা বিদেশের সংস্কৃতির সামনে আমাদের সংস্কৃতির দৈন্যতা প্রকাশ করেছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিরা মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে এ দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দর্শক খরায় ভুগবে!সেজন্য এ দেশের দর্শকদের ঘরে ফেরাতে বর্ণাঢ্য আয়োজন নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছে বেসরকারি চ্যানেল দীপ্ত টিভি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসেই প্রচারে আসবে চ্যানেলটি। চ্যানেলটির চিফ অপারেটিং অফিসার কাজী উরফি আহমেদ বলেন, ‘আগামী মাস থেকে দীপ্ত টিভি সমপ্রচার কার্যক্রম শুরু করবে। এরই মধ্যে প্রচারের লক্ষ্যে চ্যানেলের নিজস্ব প্রযোজনায় তিনটি মেগা ধারাবাহিক নির্মাণকাজ শেষ করেছে। এসব সিরিয়ালে নিজস্ব সংস্কৃতির আবহে দর্শকদের ভালো লাগবে এমন গল্প ও নির্মাণের ছোঁয়া পাওয়া যাবে। কলকাতায় যসেব সিরিয়াল দেখে আমাদের দর্শকরা বুদ হয়ে থাকছেন আমার বিশ্বাস আমাদের প্রযোজনাগুলো তাদের ফিরিয়ে আনবে নিজের দেশের চ্যানেলে। আর এটাই হবে আমাদের যাত্রার সাফল্য।’তিনি আরো বলেন, ‘সিরিয়ালের পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানও নির্মাণ করা হয়েছে। রয়েছে অটোমান সাম্রাজ্যের তুরস্কের বীর সুলতান সোলায়মানের উপর নির্মিত একটি সিরিয়াল। এটি তুরস্ক ভাষা থেকে বাংলায় ডাবিং করে প্রচার করা হবে। সবমিলিয়ে আমরা দেখছি আমাদের দর্শক দেশীয় চ্যানেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সে জায়গা থেকে দীপ্ত টিভি ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে তাদের ফেরানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। আমরা সবার সহযোগীতা চাই।’আমাদের পুরোনো টিভি চ্যানেলগুলো অনেক চেষ্টাই করছেন, পারছেন দর্শক ধরে রাখতে। সেখানে দীপ্ত টিভি কী দর্শকদের কলকাতার টিভিগুলো থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির দর্শকদের নিয়ে জরিপ চালিয়েছি। আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যে দর্শকরা আসলে কি চায়? আার জরিপ শেষে দর্শকদের চাহিদা মাথায় রেখেই সব আয়োজন করেছি। আমাদের নিজস্ব অভিনয়শিল্পী রয়েছে, নিজস্ব পরিচালক টিম, রাইটার প্যানেল আছে। নিজেরা নাটক ও অনুষ্ঠানের জন্য সেট তৈরি করেছি। এখানে মাসে ২৬দিনই শুটিং হচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি কলকাতার জনপ্রিয় নাটক ও অনুষ্ঠানগুলোর চাইতেও মান সম্পন্ন কিছু করতে। আমাদের বিশ্বাস, দর্শকদের ভালো লাগবেই।’দীপ্ত টিভির লাইন প্রডিউসার মোস্তফা মনন বলেন, ‘দীপ্ত টিভিকে আমরা একটি ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত করতে চাই। আমাদের এখানে যেসব অনুষ্ঠান যেমন ধারাবাহিক নাটক, সংগীতানুষ্ঠান, টকশো এমনকি শিশুদের জন্য কার্টুন সব ক্ষেত্রে ভিন্নতার ছোঁয়া থাকবে। দর্শক কলকাতার চ্যানেলগুলো থেকেও ভিন্ন কিছু নিয়ে হাজির হবো আমরা। বিশেষত মেগা সিরিয়ালের ওপর আমরা বেশি নজর দিচ্ছি। এক্ষেত্রে আমরা একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশা করছি।’তিনি জানালেন, এরইমধ্যে ‘অপরাজিতা’, ‘পালকি’ ও ‘খুঁজে ফিরি তাকে’ শিরোনামের তিনটি সিরিয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে দর্শক অপরাজিতায় দেখবেন নব্বই দশকের আবহে একজন যুবতীর জীবনের সংগ্রাম। এখানে তার সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা, হাসি-কান্না, পাওয়া না পাওয়াদের যে চিত্র তা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে। এই চরিত্রটির জনপ্রিয়তার প্রত্যাশী দীপ্ত টিভির কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি জীবনের নোংরা বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে গ্রামের নিরীহ এক মেয়ের ঢাকা শহর পাড়ি দেয়ার গল্প ‘পালকি’। এখানে দেখা যাবে ঘটনাক্রমে এক বিত্তশালী পরিবারের সাথে পরিচয় ঘটে দরিদ্র ঘরের পালকির। একসময় ওই বাড়ির এক ছেলের সাথে বিয়েও হয় তার। কিন্তু স্বামী কিছুতেই তাকে মেনে নিতে চায় না। পরিবারের কিছু নারী আত্মীয়ার সহযোগীতায় পালকি চালিয়ে যায় স্ত্রীর মর্যাদা ও নারীত্বের অহংকার আদায়ের সংগ্রাম। তৃতীয় সিরিয়াল ‘খুঁজে ফিরি তাকে’র গল্পে দেখা যাবে আনিসুর রহমান নামের এক ধনাঢ্য ব্যক্তির সংসারের গল্প। যেখানে কিছু ঘটনার সূত্র ধরে বহুকাল আগে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয় আনিস সাহেবের মেয়ে। সময়ের স্রোতে ভেসে যখন সেই বেদনা শুকাতে শুরু করে ঠিক তখনই ক্ষত তাজা করে আগমন ঘটে আনিস সাহেবের নাতির। ১০-১২ বছরের এই শিশুকে ঘিরে বদলে যেতে থাকে নাটকের গল্প ও চরিত্ররা।এসব নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে কাজ করতে দেখা যাবে রহমত আলী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, চিত্রলেখা গুহ, ঝুনা চৌধুরী, সিফাত, স্নিগ্ধা, ইমতু, আফজাল, রানী আহাদ প্রমুখ।এলএ/আরআইপি
Advertisement