বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত শুরু হলো মাল্টিমোডাল সাইটডোর কন্টেইনার ট্রেনে পণ্য আমদানির মাধ্যমে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন আমদানিকারকের ৫০টি কন্টেইনারে ৬৪০ মেট্রিক টন পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে ভারতের প্রথম কার্গো ট্রেন। করোনা মহামারির মধ্যে এর আগে প্রথম পার্সেল ট্রেনে এসেছিল ৩৮৪ টন শুকনা মরিচ। পাশাপাশি অন্যান্য ট্রেনে পেঁয়াজসহ খাদ্যসামগ্রী আসছে সাধারণ মালবাহী ট্রেনে। এবার কার্গো ট্রেনে বেনাপোল বন্দরে এসেছে পিঅ্যান্ডজি বাংলাদেশ লিমিটেডসহ আট কোম্পানির পণ্য।
Advertisement
কলকাতার মমিনপুর থেকে ২৪ জুলাই ট্রেনটি বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে এসে রোববার (২৬ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে বেনাপোল স্টেশনে পৌঁছায়। পরে স্টেশন থেকে ট্রেনটি বন্দর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথম কার্গো ট্রেনে প্রকটার অ্যান্ড গ্যাম্বেল (পিঅ্যান্ডজি), চিটাগং এশিয়ান অ্যাপারেলস, ডেনিমেক, প্যাসিফিক জিন্স, ফ্যাশন ফোরাম, শাহ মাখদুমের বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্য ও ডেনিম ফেব্রিক্স আমদানি করা হয়।
নতুন এই বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের নতুন দিগন্তের শুভ সূচনার উদ্বোধন করেন বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম, যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলাম, বন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল, উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন, কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন, রেলস্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামানসহ কাস্টমস, বন্দর, রেলের কর্মকর্তা, আমদানিকারকের প্রতিনিধি এবং কন্টেইনার ব্যবস্থাপনায় এমজিএইচ গ্রুপের (ট্রান্সমেরিন লজিস্টিক) ভেন্ডর পার্টনার এমএম ইন্টারন্যশনালের প্রতিনিধি।
ইতোমধ্যে ভারত থেকে সড়ক পথে বেশির ভাগ পণ্য আমদানি হতো। ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনা সম্পর্কিত বিধি-নিষেধের কারণে দুই দেশের মধ্যে পরিবহন পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে তার প্রভাব পড়ে। তার ওপর সড়ক পথে পণ্য আমদানিতে বেনাপোলের বিপরীতে বনগাঁ পৌরসভার কালীতলা পার্কিংয়ে একটি সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজিসহ আমদানি পণ্যের ট্রাক দিনের পর দিন আটকে রেখে ডিটেনশন আদায়সহ নানাভাবে হয়রানির কারণে ব্যাহত হচ্ছিল আমদানি-রফতানি।
Advertisement
ফলে আমদানিকারকদের খরচ বেড়ে দাঁড়াচ্ছিল দ্বিগুণ। অনেক আমদানিকারক মুখ ঘুরিয়ে নেয় বন্দর থেকে। তাদের অত্যাচার থেকে বন্দরকে রক্ষা করতে ট্রেনে পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশের সরকার। ভারতীয় হাইকমিশন সরবরাহ শৃঙ্খলার এ বিঘ্ন হ্রাস করতে বাংলাদেশ রেল কর্তৃপক্ষকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পার্সেল, কার্গো ট্রেন পরিষেবা সহজ করার প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে বাংলাদেশ ও ভারতের কাস্টমসের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ-ভারত রেলওয়ে এই সেবাটি বাস্তবায়ন করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অনুমতি দেয়ার পর ট্রেনে শুরু হয় পণ্য আমদানি। ট্রেনে কন্টেইনারের মাধ্যমে পণ্য আমদানি হলে আমদানিকারকের পণ্যের নিরাপত্তাসহ সময় ও খরচ উভয় বাঁচবে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, করোনার শুরুতে উভয় দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছিল। রোববার কন্টেইনারের মাধ্যমে আমদানি বাণিজ্য শুরুতে আমাদের স্টেকহোল্ডারসহ সব ব্যবসায়ীর বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। এতে সময় খরচ যেমন বাঁচবে তেমনি যথেষ্ট নিরাপত্তাও রয়েছে। ভারত থেকে রেলযোগে মালামাল এলে আমাদের রেল খাতেও উন্নয়ন হবে। বন্দর একটি চার্জ পাবে। ব্যবসায়ীদের খরচ কম হবে। আগে সাধারণ রেলে পণ্য এসেছে ভারত থেকে। এখন থেকে কন্টেইনারের মাধ্যেমে পণ্য আসা শুরু হলো।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ভারত থেকে রোববার কার্গো ট্রেনে কন্টেইনারের মাধ্যমে পণ্য আসায় ব্যবসায়ীদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে।
বেনাপোল রেলস্টেশনের মাস্টার সাইদুজ্জামান বলেন, ভারত থেকে পণ্যবাহী ওয়াগান আসায় রেল কর্তৃপক্ষ পণ্যবাহী কন্টেনাইনারপ্রতি ছয় হাজার ৪৪০ টাকা পাবে। খালি কন্টেইনার ফিরে যাওয়ার সময় কন্টেইনারপ্রতি চার হাজার ৫৭৫ টাকা পাবে রেল কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
এই কন্টেইনার রেল মুভমেন্টের ফলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক যেমন উন্নয়ন হবে তেমনি দুই দেশের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বরাবরই মজবুত। এই পরিষেবার মাধ্যমে সেই সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে।
জামাল হোসেন/এএম/এমএস