আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চমড়ার দাম ২০ থেকে ২৯ শতাংশ কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮-৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ১৩-১৫ টাকা আর বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা।
Advertisement
রোববার (২৬ জুলাই) জুম প্লাটফর্মের মাধ্যমে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে এ দাম ঘোষণা করেন।
ভার্চ্যুয়াল এ বৈঠকে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন চামড়া খাত শিল্পের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, রফতানিকারক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এছাড়া করোনার কারণে বিশ্ববাজার সঙ্কুচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সবকিছু বিবেচনায় গতবারের চেয়ে কম দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
Advertisement
টিপু মুনশি বলেন, ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। গত বছর যা ছিল ৪৫-৫০ টাকা। এক্ষেত্রে গত বছরে তুলনায় দাম কমানো হয়েছে ২৯ শতাংশ। ঢাকার বাইরে ২৮-৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে গত বছর যা ছিল ৩৫-৪০ টাকা। এ ক্ষেত্রে গতবছরের চেয়ে দাম কমানো হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ১৩-১৫ টাকা; গত বছর যা ছিল ১৮-২০ টাকা। এক্ষেত্রে গত বছরের চেয়ে দাম কমানো হয়েছে ২৭ শতাংশ। পাশাপশি বকরির চামড়ার দাম নির্ধরণ করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা, গত বছর যা ছিল ১৩-১৫ টাকা। এক্ষেত্রেও দাম কমানো হয়েছে ২৩ শতাংশ।
চামড়াজাত পণ্যের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে অথচ চামড়ার দাম কমছে কেন এমন প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এবার করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে মন্দা। তাই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের কথা চিন্তা করে এবার দাম কমানো হয়েছে। তাছাড়া ট্যানারি শিল্পটা আমরা এখনও আপডেট করতে পারিনি এটাও আমাদের একটা দুর্বলতা।
বৈঠকে ট্যানারি মালিকদের পক্ষে থেকে চামড়া কেনার জন্য এখনও ঋণ না পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই তারা বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়টি খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
এদিকে গতবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেনি। গরিব ও এতিমদের হক চামড়ার দাম নিয়ে গত বছরের কারসাজি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ৩১ বছরের মধ্যে গতবার কোরবানির ঈদে কাঁচা চামড়ার দরে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় নেমে আসে। দাম না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভে চামড়া নদীতেও ফেলে দেন।
Advertisement
গতবার ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া খাসির চামড়া ১৮-২০ টাকা, বকরির ১৩-১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এদিকে পশুর কাঁচা চামড়া নির্ধারিত মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, মজুত এবং চামড়ায় প্রয়োজনীয় লবণ লাগানো তদারকিতে একটি কমপ্রেহেন্সিভ মনিটরিং প্ল্যান গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্ল্যান বাস্তবায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় যৌথ সমন্বয় কমিটি, কেন্দ্রীয় সমন্বয় ও মনিটরিং কমিটি, কন্ট্রোল রুম, ঢাকা ও নাটোর জেলার জন্য বিশেষ মনিটরিং টিম, বিভাগীয় ও জেলার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন দফতর/সংস্থার সমন্বয়ে মনিটরিং টিম এবং সব জেলা পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এ টিম কাজ করবে।
বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের সভাপতিত্বে শনিবার (২৫ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুবিভাগ প্রধান, বিভিন্ন দফতর/সংস্থার প্রধান এবং রফতানি অনুবিভাগের সব কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ওয়ার্কশপে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওয়ার্কশপে বলা হয়, চামড়ায় লাগানোর জন্য ব্যবহৃত লবণের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক রাখতে সার্বক্ষণিক তদারকি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়গুলো কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
উল্লেখিত সমন্বয় ও মনিটরিং কমিটিসমূহ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় কোরবানির দিন থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ কাঁচা চামড়ার গুণগতমান বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। সভায় এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের সব প্রচার মাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
এমইউএইচ/এসএইচএস/পিআর