খেলাধুলা

ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু কাঁদতেন পাকিস্তানি ওপেনার

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরুর আগে থেকেই স্বজনপ্রীতির বিষয়ে কটুকথা শুনে আসছেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বাঁহাতি ওপেনার ইমাম উল হক। দেশটির সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক ইনজামাম উল হক তারা চাচা হওয়ার কারণে, সবাই ধরেই নেয় যে অনৈতিকভাবে দলে নেয়া হয়েছে ইমামকে।

Advertisement

অথচ ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা ইমাম এখনও পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে দেখিয়েছেন দারুণ পারফরম্যান্স। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৭ ওয়ানডে খেলে সেঞ্চুরি করেছেন ৭টি, ফিফটি রয়েছে ৬টি, প্রায় ৫৪ গড়ে তার নামের পাশে রানসংখ্যা ১৭২৩। তবু এক-দুই ম্যাচ খারাপ গেলেই শুনতে হয় স্বজনপ্রীতির কথা।

ক্যারিয়ারের সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করেছেন ইমাম। তবে শুরুর দিকে এসব বিষয়ে খুবই মর্মাহত হতেন ২৪ বছর বয়সী এ ওপেনার। এমনকি পাকিস্তান দলে তার তেমন কোনো বন্ধুও ছিল না। ফলে একা একাই শাওয়ার রুমে কান্না করতেন ইমাম। ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।

‘সত্যি বলতে, আমি যখন প্রথমবারের মতো পাকিস্তান দলে সুযোগ পাই, তখন আমার মাত্র একজন বন্ধু ছিল (বাবর আজম)। কিন্তু ওর সঙ্গেও একটা দূরত্ব ছিল, যোগাযোগ হতো না। কারণ বাবর তখন নিয়মিত জাতীয় দলে খেলে আর আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে। তাই আমাদের সেভাবে কথা হতো না’- বলেছেন ইমাম।

Advertisement

তিনি বলতে থাকেন, ‘এছাড়া সে তখন নিজের ক্রিকেটের প্রতি বেশি মনোযোগী ছিলো এবং বেশ ভাল ফর্মেও ছিল। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করেছিল। যেহেতু টেস্টে তার তখনকার পারফরম্যান্স খুব একটা ভালো ছিল না, তাই সে পুষিয়ে নিতে চাচ্ছিলো। ফলে খুব বেশি কথা বলতো না তখন।’

নিজের অভিষেক সিরিজের সময় মানুষের নানান কটুকথা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছিলেন ইমাম। তখন নিজের পরিবারকেও এসব বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি। পুরো কষ্টটা নিজের ভেতরেই রেখেছিলেন এ বাঁহাতি ওপেনার।

ইমাম বলেন, ‘যখন এসব (স্বজনপ্রীতির অভিযোগ) শুরু হয়, তখন আমাকে একাই খাবার খেতে হতো। অথচ সেটা আমার প্রথম সফর ছিল এবং প্রথম সফরের চাপ কতটা হয় তা তো বুঝতেই পারছেন। আমি যখনই মোবাইল ফোন হাতে নিতাম, দেখতাম সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ আমাকে ট্যাগ করে নানান কিছু বলছে। আমি খুবই মর্মাহত ছিলাম এবং কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।’

‘আমি পরিবারের মানুষের সঙ্গেও কথা বলা বন্ধ করে দেই। আমি এমন সমস্যায় আছি তা জানিয়ে তাদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছিলাম না। আমার দুইটি ফোনই বন্ধ করে ম্যানেজারের কাছে জমা দিয়ে দেই এবং বলি যে, এগুলো আর নিতে পারছি না। আমার থেকে দূরে রাখুন।’

Advertisement

সেই সফরের প্রথম দুই ম্যাচে সুযোগ হয়নি ইমামের। ফলে হয়নি অভিষেকটাও। এতে করে নিজের মধ্যকার চাপটা যেন আরও বেড়ে যায় তার। চারপাশের নানান কটুকথা এবং দলে সুযোগ না পাওয়া মিলিয়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়েন তিনি।

ইমামের ভাষ্যে, ‘আমার মনে আছে, তখন শাওয়ারে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঁদতাম আমি। আর ভাবতাম যে, এখনও কোনো ম্যাচ খেলিনি (তাতেই এত কথা), নিজের ওপর একধরনের অনাস্থা চলে আসছিল। যখন আমি সুযোগ পাবো, তখন যদি পারফর্ম করতে না পারি? আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। এসব ভেবে নিজের ঘরের বাইরেও যেতাম না। ভয় পেতাম যে, পাকিস্তানি প্রবাসীরা হয়তো কটুকথা বলবে আমাকে।’

এসময় নিজের অভিষেক ম্যাচের স্মৃতি জানিয়ে ইমাম বলেন, ‘সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে আমি সুযোগ পাইনি। আহমেদ শেহজাদ খেলেছিল এবং ভালো করতে পারেনি। দ্বিতীয় ম্যাচের পর টিম মিটিংয়ে পরের ম্যাচের জন্য ১৪ জনের শক্তিশালী দল জানানো হয়, সেখানে আমি ছিলাম। আমাকে বলা হলো যদি একাদশে রাখা হয়, তাহলে ম্যাচের আগের রাতে জানিয়ে দেয়া হবে।’

‘কিন্তু সেই রাতে কোনো কল বা মেসেজ পাইনি। তাই আমি ভেবেছিলাম হয়তো খেলবো না। আমরা তখন দুবাইতে ছিলাম। ম্যাচের দিনই দুই ঘণ্টার যাত্রায় দুবাই থেকে আবুধাবি যেতে হতো। আমরা বেলা ১১টার আশপাশে রওনা হতাম। এর কিছুক্ষণ আগে কোচের কাছ থেকে বার্তা পাই, ইম্মি, তোমার সুযোগ এসেছে, প্রস্তুত হও। শুভকামনা।’

‘এরপর আর কিছুই মনে ছিল না আমার। পুরো মাথা খালি হয়ে যায়। আমি আসলে তখন চাচ্ছিলাম না (দলে সুযোগ পাওয়ার) বার্তাটা আসুক। আমার আত্মবিশ্বাস তখন একদম তলানিতে ছিল যে পারফর্ম করার সাহসটাও ছিল না। আমি ম্যাচ থেকে বেশি ম্যাচের পরে কী হতে পারে তা নিয়ে ভাবছিলাম। ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে- এমন দুশ্চিন্তায় কাতর ছিলাম।’

এসএএস/পিআর