অর্থনীতি

করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি : মুক্তি কিসে?

মহামারি করোনাভাইরাসে মানবজীবন বিপর্যস্ত। অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতিসহ সবকিছুই প্রভাবিত হচ্ছে এই ভাইরাসের প্রকোপে। চ্যালেঞ্জ বাড়ছে সর্বত্রই। অনেকেই মহামন্দা, কেউ আবার দুর্ভিক্ষের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞরা নানা পথও দেখিয়ে আসছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় করণীয় কী- এ প্রসঙ্গে মতামত জানতে চাওয়া হয় বিশিষ্টজনের কাছে। তারা সংকট মোকাবিলায় কৃষির ওপরেই অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন।

Advertisement

অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‌‌‘করোনা মহামারির সংকট বিশ্বব্যাপী। অর্থনীতির যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, তা বিশ্ব পরিস্থিতিকে আমলে নিয়েই। পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা সঠিকভাবে মূল্যায়নের সময় এখনও আসেনি। আরও হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা ঘটবে তা মূলত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। প্রথমত, কৃষি। দ্বিতীয়ত, প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। তৃতীয়ত, রফতানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক থেকে বৈদেশিক আয়। বর্তমান পরিস্থিতি তিনটি খাতকেই চ্যালেঞ্জে ফেলছে। তবে আমাদের অর্থনীতির জন্য কৃষি একটি টেকসই ব্যবস্থা এবং কৃষি থেকেই সম্ভাব্য মুক্তি মিলবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ। এই অধ্যাপকও কৃষির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে মন্দা দেখা দেবেই। জিডিপি টার্গেট অর্ধেকে নেমে আসবে। চাকরি থাকবে না অনেকের। দিন আনে দিন খায় গোছের মানুষেরা সবচেয়ে বিপদে পড়বে। ইতোমধ্যে তারা বিপদে পড়েছে। সিন্ডিকেট হবে। সরবরাহ কম দেখিয়ে মুনাফা বাড়ানো হবে। এটিই কৃত্রিম সংকট। এই সংকট দূর করতে এখনি সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

Advertisement

এম এম আকাশ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে এবারে যে ফলন হয়েছে, তাতে খাদ্য উদ্বৃত্ত হবে। প্রয়োজনে অন্য দেশের মানুষকে বিপদের সময় রক্ষা করতে খাবার পাঠানো সম্ভব হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথায় ভরসা রাখতে চাই। কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, খাদ্যে ঘাটতি হবে না। যদি ঘাটতি হয়ও তাহলে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে আমদানি করা সম্ভব হবে। খুবই ভালো কথা। আমরা মন্ত্রীদের কথা বিশ্বাস করতে চাই।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিপুটি গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ইব্রাহিম খালেদ। তিনি মনে করেন, ‘কৃষি আমাদের অর্থনীতির জন্য যে রত্ন, তা করোনাকালেও প্রমাণ মিলছে। অর্থনীতির সমস্ত চাকা থমকে গেলেও কৃষি আমাদের আশার আলো জিইয়ে রাখছে। কৃষক পায়ের ঘাম মাথায় ফেলে কাজ করে যাচ্ছে। উদ্বৃত্ত ফসল ফলাচ্ছে। একজন কৃষক শারীরিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ করতে অধিক সক্ষম। অন্তত করোনার মৃত্যুহারে কিন্ত সে প্রমাণ পাচ্ছি। করোনা কৃষককে বেশি মাত্রায় আক্রান্ত করতে পারেনি। কৃষি আক্রান্ত হয়নি। তবে গ্রাম এবং কৃষক রক্ষায় আমাদের আরও সচেষ্ট হওয়া দরকার ছিল।’

কৃষিকে সঠিক মূল্যায়ন করতে না পারা আমাদের অর্থনীতির জন্য ‘বড় দুঃখ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যেও কৃষক ফসল ফলাচ্ছে। তারা খাবারের যোগান দিচ্ছে। অথচ, কৃষক তার ফসলের দাম পাচ্ছে না। কৃষক রীতিমত হতাশ। কৃষক হেরে গেলে গোটা অর্থনীতি হেরে যাবে। কারণ আমরা গার্মেন্ট এবং রেমিট্যান্স নিয়ে এখন অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। কৃষিই একমাত্র ভরসা আপাতত। সরকারের উচিত যেকোনো উপায়ে ফসলের মূল্য দেয়া। গ্রামের ফসল যেকোনো মূল্যে শহরে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে গ্রাম-শহর উভয় রক্ষা হবে।’

এএসএস/এমএসএইচ

Advertisement