করোনায় বিনোদন, খেলাধুলা সব বন্ধ। ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড স্থগিত চার মাসের বেশি সময় ধরে। পূর্বাচলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে যে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম নির্মাণের কথা, সে কাজেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা।
Advertisement
বছরের শুরুর দিকে পূর্বাচলে শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ শুরুর কথা থাকলেও করোনার কারণে সে কার্যক্রমও বন্ধ। বন্ধ বলা হয়তো ঠিক হলো না। মূলত কাজই শুরু হয়নি।
কাজের কোনো অগ্রগতি আছে কি না? স্টেডিয়ামের নকশা ডিজাইন কি হয়েছে? কোন কনসালটেন্সি ফার্ম করছে? কোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্টেডিয়াম নির্মাণকাজ করবে, সেই ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া কি শেষ?
এসব খুঁটিনাটি খোঁজ-খবর জানতে গিয়েই আজ জানা গেল, আসলে কাজ মোটেই এগোয়নি। কাজকর্ম শুরু বহু দূরে, এখন পর্যন্ত পেপারওয়ার্কও চূড়ান্ত হয়নি।
Advertisement
এ কারণেই পূর্বাচলে শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম অকপটে স্বীকার করেন, ইতিমধ্যে স্টেডিয়াম নির্মাণকাজে বেশ দেরি হয়ে গেছে।
আজ শনিবার (২৫ জুলাই) বিকেলে জাগো নিউজের সাথে স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ নিয়ে একান্ত আলাপে বিসিবি পরিচালক, বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান ও পূর্বাচল শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটি প্রধান মাহবুব আনাম বলেন, ‘স্টেডিয়াম নির্মাণকাজ শুরু করতে পারিনি এখনও। অনেক দেরি হয়ে গেছে। করোনার কারণে কিছুই করা সম্ভব হয়নি। আমার ধারণা, আমরা ছয় মাস পিছিয়ে গেলাম।’
মাহবুব আনামের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্টেডিয়াম নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি। কারণ মূল স্টেডিয়ামের ডিজাইনই এখনও প্রস্তুত হয়নি। কোনো কনসালট্যান্টও নিয়োগ দেয়া হয়নি। স্টেডিয়ামের স্থাপত্য নকশার দরপত্র জমা দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক সাড়া পড়লেও উৎসাহী দরদাতাদের মধ্য থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকাও তৈরি হয়নি।
প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটি চেয়ারম্যানের কথায় পরিষ্কার ইঙ্গিত, তারা এবার আবার নড়েচড়ে বসবেন এবং আগামী আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রাথমিক ধাপ শুরু করতে আগ্রহী।
Advertisement
মাহবুব আনাম জানিয়েছেন, স্টেডিয়াম প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটি হয়তো এর মধ্যে অনলাইনে, না হয় সশরীরে বৈঠকে বসবেন। আগামীকাল রোববার ( ২৬ জুলাই) শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটির একটা অনানুষ্ঠানিক সভাও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মাহবুব আনামের কথা, ‘আসলে আমরা প্রজেক্টের পেপার ওয়ার্কগুলো করে রাখবো। বোর্ড মিটিং না হলে অনেক কিছুই সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না। কাজেই এখন অপেক্ষা বোর্ড মিটিংয়ের।’ মাহবুব আনাম বলেন, ‘বোর্ডপ্রধান নাজমুল হাসান পাপন সাহেব ঈদের পর দেশে ফিরলে বোর্ড সভায় আমরা পূর্বাচল শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম নিয়ে আলোচনা করবো। ’
প্রসঙ্গত, প্রোস্টেটের অপারেশনের জন্য বর্তমানে লন্ডন অবস্থানরত বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন দেশে ফেরার পর বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, তিনি ঈদুল আজহার পরই দেশে ফিরবেন। সুতরাং বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা আগস্টের ৫ তারিখের পর।
মাহবুব আনামের দাবি, ‘বোর্ড মিটিং হলে কাজ আগাবে।’ কীভাবে আগাবে? এখন আপনারা কোথায় দাঁড়িয়ে? মাহবুব আনামের জবাব, ‘আসলে এখন পর্যন্ত মূল কাজের কোনো রূপরেখা তৈরি হয়নি। এখন প্রথম কাজ হলো, কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেয়া। কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেয়া হলে, তারা প্ল্যান দেবে, ডিজাইন করবে। এরপর সে আলোকে ঠিকাদার নিয়োগের প্রশ্ন।’
বিসিবি গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান ও পূর্বাচল শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান যোগ করেন, ‘আসলে এটাই প্রসেস। এর বাইরে অন্য কিছু করার সুযোগ নেই।’
তার ভাষায়, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ডিজাইন ও ড্রয়িংটা ভালো মতো হওয়া। সেটা যদি ভালো হয়, তাহলে নির্মাণকাজের সময় যারাই কাজ করুক না কেন, কাজ ভালোভাবে শেষ করা যাবে।’
পূর্বাচল স্টেডিয়াম নির্মাণকাজকে অনেক বড় আখ্যা দিয়ে মাহবুব আনাম বলেন, ‘এখানে একদম শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। পূর্বাচল স্টেডিয়ামের সবকিছুই শুরু করতে হচ্ছে প্রথম থেকে। এখন আমাদের প্রথম লক্ষ্য হলো, সঠিক ডিজাইন নিশ্চিত করা। ডিজাইন ভালো হলে নির্মাণকাজটাও ভালো হবে।’
কারা ডিজাইন করবে? তা নির্ধারণ করা হবে কীভাবে? জবাবে মাহবুব আনাম বলেন, ‘আগ্রহী নকশা ও স্থাপত্যের দরপত্র জমাদানকারীদের মধ্য থেকে স্পেশাল অব ইন্টারেস্ট হিসেবে ছয়জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হবে। এই ছয়জনের মধ্য থেকে সবচেয়ে ভালো ডিজাইন যিনি জমা দেবেন, যার যোগ্যতা বেশি থাকবে, তাকেই কাজ দেব। ওই শর্টলিস্টের ছয় কনসালট্যান্টের কাছ থেকে আমরা প্রেজেন্টেশন চাইবো।’
মাহবুব আনামের শেষ কথা, আশা করছি এ বছরের শেষ দিকে যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজের জন্য নিয়োগ দিতে পারবো। সেজন্য আমি বলেছি, আমরা ছয় মাস পিছিয়ে গেছি।
জানা গেছে, ডিজাইন ও ড্রয়িং করতে চার-পাঁচ মাস লাগবে। আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরুর প্রত্যাশা করি। তারপর আরও ২৪ মাস। মানে ২০২৩ এর মাঝামাঝি হয়তো পূর্বাচল শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে।
এআরবি/আইএইচএস/এমকেএইচ