জাতীয়

‘অপারেটরদের সামর্থ্য বিবেচনা করে তরঙ্গ বরাদ্দ’

গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় মানসম্মত টেলিকম সেবার জন্য পর্যাপ্ত তরঙ্গ ব্যবহারের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন আলোচকরা।

Advertisement

শনিবার (২৫ জুলাই) বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় মানসম্মত টেলিকম সেবার জন্য পর্যাপ্ত তরঙ্গ বরাদ্দে প্রতিবন্ধকতা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহিরুল হক। তিনি বলেন তরঙ্গের স্বল্পতা অপারেটরদের রয়েছে এ কথা স্বীকার করতেই হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, তিনটি থালা দিয়ে পাঁচজন অতিথিকে খাওয়াতে গেলে যেমন হয় তেমনি স্বল্প তরঙ্গ দিয়ে গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়াও সম্ভব না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দরজা সব সময় অপারেটরদের জন্য খোলা। আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসি যাতে স্পেকট্রাম অবিক্রিত না থাকে, গ্রাহক ভালো সেবা পায় এবং অপারেটররা স্পেকট্রাম কিনতে পারে। তবে তরঙ্গের দাম কমানো কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয় এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে তিনি আরও অধিকতর আলোচনার আহ্বান জানান।

Advertisement

ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মিত্র বলেন, কমিশন গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে। আমরা চাই গ্রাহকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাক অন্যদিকে অপারেটররাও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখছি। তরঙ্গের স্বল্পতার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

কমিশনার এসএম আমিনুল হাসান বলেন, অপারেটররা ফ্রি তরঙ্গ চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই আবেদনে যদি গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা ও শিক্ষর্থীদের স্বল্পমূল্যে সার্ভিসের কথা উল্লেখ থাকতো তাহলে কমিশন অবশ্যই বিষয়টি ভাবতো।

বিটিআরসির তরঙ্গ বিভাগের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল আলম বলেন, তরঙ্গের মূল্য আমরা বৃদ্ধি করিনি। এটি অপারেটরদের নিলামের প্রতিযোগিতার কারণেই বেড়েছে। আমরাও তরঙ্গকে সকলের জন্য ব্যবহার উপযোগী ও সহনীয় মূল্য নির্ধারণের কাজ করছি। কিন্তু তরঙ্গের মূল্য নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়।

বিটিআরসির ডেপুটি ডিরেক্টর (এসএম) মো. সোহেল রানা বলেন, তরঙ্গের স্বল্পতার কারণে বিটিএস নির্মাণ করতে গিয়ে প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার চীনাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তিনি সুপারিশ করেন অপারেটরদের সামর্থ্য বিবেচনা করে তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। এতে গ্রাহকরা তার কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে।

Advertisement

টেলিকম বিশেষজ্ঞ টি আই এম নুরুল কবির বলেন, বর্তমানে দেশে অব্যবহৃত তরঙ্গের মূল্য শূন্য। তাই তরঙ্গকে অপারেটরদের সামর্থ অনুযায়ী বণ্টন করলে গ্রাহক ও রাষ্ট্র উপকৃত হবে।

রবির সিইও মাহাতাব উদ্দিন বলেন, কোয়ালিটি অফ সার্ভিসের উন্নয়নের জন্য সরকার এবং অপারেটরদের মধ্যে কার্যকরী সমন্বয় প্রয়োজন। সরকার স্পেকট্রাম ও ফাইবার মূল্য এবং কর নিয়ে সহায়তা দিলে আমরা তা গ্রাহকদের পৌঁছে দিতে পারব।

৫-জি কমিটির সদস্য আইবিএর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর খালেদ মাহমুদ বলেন, আগামীতে ৫-জি প্রযুক্তি দেশে আসছে। তার জন্য আমরা কাজ করছি। নতুন ব্র্যান্ডের তরঙ্গ এখনও নির্ধারণ হয়নি। বর্তমানে যে পরিমাণ গ্রহক সে তুলনায় ব্যবহৃত তরঙ্গের পরিমাণ খুবই কম। তাই মানসম্মত সেবা দিতে গেলে অধিক তরঙ্গ ব্যবহারের বিকল্প নেই। জনস্বার্থ বিবেচনায় সরকার চাইলে তরঙ্গের দাম কমাতে পারে।

আলোচনায় সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মী রাশেদ মেহেদী বলেন, কমিশন ব্যবসা করে। কমিশনকে রাজস্ব সংগ্রহ থেকে বের হয়ে গ্রহক সেবায় মনোযোগী হতে হবে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। তবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিটিআরসির কোয়ালিটি অব সার্ভিসের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মাহফুজ করিম, বাংলালিংকের চিফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স তৈমুর রহমান, এরিকসনের কান্ট্রি ম্যানেজার আব্দুস সালাম, অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশনের সাবেক ডিরেক্টর ড. কামরুজ্জামান, টেলিকম বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার আবু সালেহ। আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান প্রমুখ।

এএস/এএইচ/এমকেএইচ