গুণী নির্মাতা শিবলী সাদিক পরিচালিত মৌসুমী এবং সালমান শাহ 'অন্তরে অন্তরে' ছবিটি ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায়। সেই ছবিতে সালমান একটি লাল রঙের টিশার্ট ব্যবহার করেন। মাথায় পড়া ব্যান্ডটিও বেশ নজর কেড়েছিল।
Advertisement
এতো বছর পরে সেগুলো নিলামে উঠছে। মামুনুর রেজা মামুন নামে এক সালমান ভক্ত প্রায় ২০ বছর ধরে সংরক্ষণে রেখেছেন টিশার্ট এবং ব্যান্ডটি। তিনিই প্রিয় নায়কের ব্যবহার করা এ জিনিসগুলো নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে এগুলো নিলামে তোলার ব্যাপারে সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি সালমান ভক্ত মামুনের নামে উকিল নোটিশ পাঠিয়ে তাকে এ থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করেছেন। তার দাবি, মামুনকে কোনো টি-শার্ট বা ব্যান্ড উপহার দেননি তিনি। এগুলো মামুন কীভাবে সংগ্রহ করেছে তা তিনি জানেন না বলেও দাবি করেন। নোটিশে মামুনকে তার সংগ্রহে থাকা সালমানের সব জিনিসপত্র তার পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে সালমানের টি-শার্ট ও মাথার ব্যান্ড নিলামে তোলার ব্যাপারটিকে ইতিবাচক বলেই দেখছেন নায়কের সাবেক স্ত্রী সামিরা। তার কাছে এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আজ শুক্রবার (২৪ জুলাই) তিনি জাগো নিউজকে বলেন, 'দেখুন, ২০১৬ সালে জাগো নিউজকে দেয়া আমার প্রথম সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম সালমানের ভক্তরা আমাকে পছন্দ করে না। তারা আমাকে ২৩ বছর ধরেই না জেনে, না বুঝে আবেগের বশে অপবাদ আর গালি দিয়ে এসেছে। অনেকে হুমকিও দিয়েছে নানাভাবে। আমি কিন্তু এর প্রতিবাদ করিনি কখনো। কারণ, আমি সবসময় তাদের সালমান ভক্ত হিসেবে দেখে এসেছি। ভক্ত হিসেবে তারা আমার স্বামী বা প্রেমিক হারানোর কষ্ট বুঝবে না কোনোদিন। তারা তাদের নায়ক হারানোর শোক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ভুল প্রচারণার জন্য আমাকে প্রতিপক্ষ ভেবে নিয়েছে। তাতে কী!
Advertisement
এই ভক্তরাই ইমনকে সালমান শাহ বানিয়েছে। সেই সাক্ষাৎকারে আরও বলেছিলাম, সালমানের পরিবার বা স্ত্রী হিসেবে আমি কিছুই করতে পারিনি। ভক্তরাই সব করছে। সালমানকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে। তারা এভাবেই যেন সালমানকে বুকে ধরে রাখে। আর যদি সুযোগ হয় তাহলে সালমানের জন্য তার পারিবারিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন নামটি নিয়ে দোয়া চায়৷ ভক্তরা সালমানকে ভালোবেসে যা কিছু করে সবকিছুই আমার ভালো লাগে। মামুন নামের ভক্ত যে উদ্যোগ নিয়েছে তাও আমার ভালো লেগেছে।'
'আমি যখন নিলামের নিউজটা দেখলাম খুব খুশি হয়েছি। ওই ভক্তের ভাবনাটা সুন্দর। তিনি প্রিয় নায়কের ব্যবহার করা জিনিসগুলো মানুষের কল্যাণের জন্য হাতছাড়া করতে যাচ্ছে। এটা কিন্তু স্যাক্রিফাইস। সে বলেছে নিলাম থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি করোনার কারণে অসহায় দিনযাপন করা মানু্ষকে সাহায্য করবেন। এর চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে। আমি সালমানকে যেভাবে চিনি, ওর মন অনেক বড় এবং সুন্দর ছিলো। সালমানও তার ভক্তের এই চমৎকার উদ্যোগে খুশি হতো'- যোগ করেন সামিরা।
টি-শার্ট ও মাথার ব্যান্ড নিয়ে সামিরা বলেন, 'এগুলোর মালিক যদি বলতে চান তাহলে ছবির প্রযোজক। কারণ ছবির কস্টিউম হিসেবে সালমানকে যা দেয়া হতো সেসব পছন্দ হতো না আমাদের। আমার পরামর্শে তাই সালমান প্রযোজকের কাছ থেকে কস্টিউমের খরচ বাবদ টাকা নিয়ে নিতো। পরে সে টাকায় আমরা কেনাকাটা করে নিতাম। বিদেশ থেকেও কেনাকাটা করতো সালমান। আমার নিজের এক দর্জি ছিলো। সেখান থেকেও পছন্দমতো পোশাক বানিয়ে নিতাম। অন্তরে অন্তরে সিনেমার জন্যও একইভাবে সালমানের পোশাক বানানো হয়েছিলো। এই টি-শার্ট ও মাথার ব্যান্ডটিও ছিলো।'
সালমান ভক্ত মামুন জিনিসগুলো কোথায় থেকে কীভাবে সংগ্রহ করেছেন সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সালমান শাহের জননী নীলা চৌধুরী। তিনি এগুলো নিলামে না তুলতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কী বলবেন? 'এটা সালমান শাহের মায়ের একান্ত ব্যাপার তিনি কি বলবেন বা না বলবেন। আমি বলবো, সালমানের ভক্তরা তাকেই সম্মান করে। আমাকে না। তারা উনাকে জননী বলে ডাকে। আজ যখন তিনি একজন ভক্তকে চোর বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চান সেটা তো অবশ্যই হতাশার৷ আমি মনে করি ও ভক্ত টি-শার্ট ও ব্যান্ডটি যেভাবেই সংগ্রহ করে থাকুন না কেন তাকে তার আবেগের জায়গাটি মূল্যায়ন করা উচিত। যে সুন্দর চিন্তা নিয়ে তিনি জিনিসগুলো নিলামে তুলতে চাইছেন তাকে সে সুযোগ দেয়া উচিত। সে চুরি করলে সবাইকে জানিয়ে, সংবাদ করিয়ে নিলামে তুলতো না। এটা আমার মনে হয়। একজন ভক্ত এটা বিক্রি করবেন, আরেকজন ভক্তই কিনবেন। পরবর্তীতে হয়তো আবারও এটা অন্য কোনো ভক্তের কাছে যেতে পারে। চক্রাকারে এটা সালমানকেই বাঁচিয়ে রাখবে, বড় করবে'- জবাব দেন সামিরা।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, 'নীলা চৌধুরী আজ একটা টি-শার্ট আর ব্যান্ডের জন্য আফসোস করছেন! কত টাকা দাম হবে এ জিনিসগুলোর যে তিনি তার ছেলের একজন ভক্তের আবেগকে আহত করেন বাঁধা দিয়ে? তিনি তো আমার নামে থাকা একটি গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন অনুমতি ছাড়াই। সেটাকে কী বলবেন?'
কোন গাড়ি জানতে চাইলে সামিরা বলেন, 'কিছুদিন আগেই আপনাদের জাগো নিউজে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে সালমান শাহের একটি গাড়ি নিয়ে। চিত্রনায়ক সাইমন গাড়িটিতে বসে আছেন। এটি তো আমার নামে রেজিস্ট্রেশন করা। এখনো কাগজ আছে আমার কাছে। ১৯৯৫ সালের ২০ ডিসেম্বর আমাদের শেষ বিয়েবার্ষিকীতে সালমান আমাকে এটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলো। একটি চিঠিও দিয়েছিলো সঙ্গে। চিঠিতে উল্লেখ ছিলো গাড়িটি আমার নামে। সে চিঠি এখনো আমার কাছে আছে। এটি তদন্তের স্বার্থে ডিবিকে দিয়েছি, পুলিশকে দিয়েছি, পিবিআইকেও দিয়েছি।
তো যে গাড়ির মালিক আমি সেই গাড়ি তিনি কী করে বিক্রি করে দিলেন? সালমানের মৃত্যুর কিছুদিন পরই তিনি গাড়িটা সিলেটের একজনের কাছে দশ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জেনেছি। পরে সেই গাড়ির মালিকানা আরও বদলেছে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন তো আমার নামে, তো বিক্রি যে হলো সইটা দিলো কে? আমি তবুও কিছু বলিনি তিনি সালমানের মা এইটা ভেবে। তবে বলার সময় হয়ে এসেছে। সময় হলে জায়গামতো সব কাগজপত্র হাজির করবো।
আর দেখুন, আমি মনে করি মালিকের অনুমতি ছাড়া গাড়ি বিক্রির চেয়ে একটা টি-শার্ট আর মাথার ব্যান্ড নিলামে তোলা বড় অপরাধ নয়? যে ভক্তরা সালমানকে অমর করে রেখেছে সেই ভক্তদের এই অধিকার আছে। ভক্তরা আমাকে বিশ্বাস করুক বা না করুক, আমি বিশ্বাস করি ভক্তরা কখনোই সালমানকে ছোট করবে না। তারা যা করে সালমানকে বড় করার জন্যই করে। আমি চাই নানা উদ্যোগে, নানা আয়োজনে, নানাভাবে ভক্তরা তাদের প্রিয় সালমান শাহকে অমর করে রাখুক।'
এলএ/জেআইএম