‘প্রাকৃতিক কারণেই ঢাকা একটি বন্যাপ্রবণ এলাকা। আর প্রাকৃতিকভাবেই বন্যার পানি সরে যেত। অথচ এই সিস্টেমটাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। কয়েকজন ভূমিদস্যুই ঢাকাকে ধংস করে দিল, এখন বন্যায় তো ভাসবেই। এই ভূমিদস্যুদের সঙ্গে বিভিন্ন বাহিনী, সরকারের লোক যুক্ত হচ্ছে। আবাসন, পুনর্বাসন আর প্রকল্পের নামে সমস্ত জলাশয় ভরাট করা হলো।’
Advertisement
কথাগুলো বলছিলেন, পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বন্যা পরিস্থিতি এবং ঢাকার ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে কথা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জাগো নিউজের কাছে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকাকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমীক্ষা সংস্থা যখন বসবাসের অযোগ্য বলে ঘোষণা করে, তখন দেখবেন সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে না। এর কারণ হচ্ছে, ঢাকাকে তারা একটি খনি মনে করেন। যে যেখান থেকে পেরেছে, সেখান থেকেই দখল করে নিয়েছে। ঢাকার বাতাস সর্বোচ্চ দূষিত। ঢাকার সড়ক-ব্যবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা সব থেকে খারাপ। অথচ মেট্রোরেলের মতো প্রকল্প গ্রহণ করে তারা খুবই উচ্ছ্বসিত। দেখবেন, এদের মাঝে পানি নিষ্কাশন নিয়ে কোনো ধারণাই নেই। তার মানে যে আইন প্রয়োগ করবে তারাই আইন ভঙ্গ করছে। এলিভেটর এক্সপ্রেসের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেতু বিভাগ। যে জায়গা ভরাট করে আবাসন করা হচ্ছে, তার কারণে ছয় ইঞ্চি বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে পারে বলে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদন দেয়ার সময় জলাশয় আইনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তার মানে মূল আইনকে অমান্য করেই প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। অথচ সেই প্রতিবেদনের আলোকেই সরকার সায় দিয়ে যাচ্ছে। যিনি জলাশয় রক্ষা করবেন, তিনিই জলাশয় ভরাট করছেন। সেতু কর্তৃপক্ষের বিশেষ স্বার্থের কারণেই এমনটি করা হচ্ছে।’
পরিবেশবাদী এই নেত্রী বলেন, ‘আমরা নগরপিতা নগরপিতা বলতে অস্থির। আমি বলি, ঢাকা একটি এতিম শহর। বন্যায় ডুবলে কার কী আসে-যায়! ঢাকার পিতা-মাতা কেউ নেই। এমনিই চলছে। সমন্বয়ের কথা বলা হয়। সমন্বয় করেন না কেন? আইনি বাধা নেই। ওয়াসার এমডি দায়িত্বে আছেন ১১ বছর ধরে। পরশু টেলিভিশনের এক আলোচনায় বললেন, ড্রেনেজ সিস্টেমে ঢাকা নাকি পৃথিবীর রোল মডেল। এ কথা শোনার পর কেমন লাগে, বলুন! প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অযোগ্য, অসৎ ব্যক্তিদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। যারা সৎ তারা এই অযোগ্য দৌরাত্ম্যের কারণে টিকতে পারছে না।’
Advertisement
‘প্রথমত, ঢাকা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে। দ্বিতীয়ত, ঢাকা নিয়ে কোনো রাজনৈতিক অঙ্গীকার নেই। মির্জা আব্বাস এবং আনিসুল হক সাহেব কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন পরিবেশ রক্ষায়। আর কোনো নেতাকে ঢাকা নিয়ে চিন্তা করতে দেখিনি। বাস সার্ভিস ঠিক করতে পারেননি, রেল সার্ভিস ঠিক করতে পারেননি। এমন একটি ইনডিসিপ্লিন দেশে মেট্রোরেল চলবে! মেট্রোরেল চালাতে হলে একটি সমাজকে ন্যূনতম নিয়মের মধ্যে আনতে হয়। ঢাকার কোথায় নিয়ম আছে? মূলত, মেট্রোরেলের মতো বড় বড় প্রকল্প করাই হয় লোক দেখানো এবং দুর্নীতি করার জন্য। ঢাকার জন্য কোনো ভিশন নেই। আজ থেকে দশ বছর পর কতজন লোক থাকবেন, কীভাবে থাকবেন তার পরিকল্পনা নেই। আমি মনে করি, রাজউক এবং বনবিভাগকে ভেঙে দেয়া উচিত। এরা নাগরিকের অধিকার এবং পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর কোনো কাজ-ই করে না।’ যোগ করেন রিজওয়ানা হাসান।
এএসএস/বিএ