যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই জানা গেছে যে, সান ফ্রান্সিসকো শহরের চীনা কনস্যুলেটে লুকিয়ে আছেন এক চীনা বিজ্ঞানী। তাকে খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।
Advertisement
এই ঘটনায় আদালতে মামলা শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতি এবং চীনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা গোপন করার অভিযোগ উঠেছে।
প্রসিকিউটররা বলছেন, চীনের সামরিক বাহিনীর বিজ্ঞানীদের নানা ছদ্ম-পরিচয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর একটি কর্মসূচি রয়েছে এবং এ ঘটনা তারই অংশ।
মাত্র একদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন শহরের চীনা কনস্যুলেটে কয়েকজন ব্যক্তি বেশ কিছু দলিলপত্র পুড়িয়ে ফেলছে এমন একটি ভিডিও প্রকাশ পায়। এরপরেই ট্রাম্প প্রশাসন ওই কনস্যুলেট বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।
Advertisement
সান ফ্রান্সিসকোর ফেডারেল আদালতে উপস্থাপিত দলিলপত্রে প্রসিকিউটররা বলেন, জুয়ান ট্যাং নামে ওই চীনা বিজ্ঞানী ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানের একজন গবেষক ছিলেন।
এফবিআই-এর প্রসিকিউটররা ক্যালিফোর্নিয়া আদালতে দায়ের করা এক মামলায় বলছেন, ওই বিজ্ঞানী চীনা সেনাবাহিনীর (পিএলএ) সদস্য। কিন্তু ভিসার আবেদনপত্রে তিনি তা গোপন করেছেন।
মামলার দলিলপত্রে বলা হয়েছে যে, গত মাসে এফবিআইয়ের এজেন্টদের কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্যাং বলেছিলেন যে, তিনি কখনো চীনের সামরিক বাহিনীতে কাজ করেননি।
কিন্তু এক তদন্তে ট্যাংয়ের এমন কিছু ছবি পাওয়া গেছে যেখানে তাকে সামরিক বাহিনীর পোশাক পরা অবস্থায় দেখা গেছে। এছাড়া তার বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার আরো কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে।
Advertisement
গত জুনের ২০ তারিখের এক সাক্ষাৎকার এবং তল্লাশির পর ট্যাং সান ফ্রান্সিসকোর চীনা কনস্যুলেটে যান এবং এফবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী তিনি সেখানেই আছেন।
এই ঘটনায় দেখা যাচ্ছে যে, সান ফ্রান্সিসকোর চীনা কনস্যুলেট একজন পিএলএ কর্মকর্তাকে নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে যিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিচারের সম্মুখীন হওয়া এড়াতে চাচ্ছেন।
প্রসিকিউটরদের মতে, এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং এটা চীনা সামরিক বাহিনীর একটি কর্মসূচির অংশ। এর অধীনে সামরিক বিজ্ঞানীদের ভুয়া পরিচয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হচ্ছে।
সম্প্রতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রসহ নানা বিষয়ে বৈরিতা ও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস, বাণিজ্য এবং হংকং প্রশ্ন যেমন রয়েছে তার সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা কনস্যুলেট ইস্যু।
হিউস্টনে কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ নিয়ে বিতর্কের মাঝে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন তিনি চীনের আরো কনস্যুলেট বন্ধ করে দেবেন। ওয়াশিংটনের দূতাবাস ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে চীনের মোট পাঁচটি কনস্যুলেট রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, হিউস্টনের কনস্যুলেটটি যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরিতে জড়িত ছিল। তবে চীন সরকার বলছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদের বিজ্ঞানী, ছাত্র-ছাত্রী এবং কনস্যুলেটগুলোকে নানাভাবে হেনস্থা করছে।
এদিকে, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাস বোমা হামলা এবং হত্যার হুমকি পেয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন যে, মার্কিন সরকার যেভাবে চীনের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে তার পরিণতিতেই দূতাবাসকে লক্ষ্য করে বোমা ও হত্যার এই হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
টিটিএন