আইন-আদালত

প্রশ্নপত্র ফাঁস : তিনজন সাত দিনের রিমান্ডে

সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল ও আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার তিনজনের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা (ভার্চুয়াল আদালত) তাদের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Advertisement

এদিন কারাগার থেকে ভার্চুয়াল আদালতে তাদের উপস্থিত দেখানো হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মিরপুর থানায় করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক তাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ারা হলেন- জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু, পারভেজ খান ও জাকির হোসেন দিপু।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সাইবার ক্রাইমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমন কুমার দাস জানান, গত ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তখন প্রশ্নফাঁস চক্রের মূলহোতা জসিমের কাছ থেকে দুই কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করে সিআইডি।

তিনি জানান, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। এ ঘটনায় করা মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি, যার মধ্যে গ্রেফতার ছিল ৪৭ জন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলা তদন্তকালে ২০১৮ সালে একটি চক্রের সন্ধান পায় সিআইভি। গত ১৯ জুলাই পুলিশ এস এম সানােয়ার হােসেন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দেন।

Advertisement

তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিপিসির পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলামের তত্ত্বাবধায়নে একটি দল ওই দিনই মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্না, পারভেজ খান ও জাকির হাসান দিপুকে গ্রেফতার করে। আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছাপাখানা থেকে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করত।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় গত ২০ জুলাই এজাহারনামীয় ১৪ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা করে সিআইডি। তাদের মধ্যে জসিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২৭ লাখ সঞ্চয়পত্র, ২ কোটি ৩০ লাখ চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে।

সুমন কুমার দাস বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকেই মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বারবার ফাঁস হয়েছে। প্রেসের মেশিনম্যান সালাম এবং তার খালাতো ভাই জসিম মিলে দেশব্যাপী একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন। চক্রটির মাধ্যমে শতশত শিক্ষার্থী টাকার জোরে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হয়েছে। দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে পুরো চক্রটিকে চিহ্নিত করেছে সিআইডির তদন্তকারী দল।

সিআইডি আরও জানায়, ইতোমধ্যে মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন ভূঁইয়াসহ চক্রের ১১ সদস্য সিআইডির সাইবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এ ছাড়া অধিদফতরের ক্ষমতাবান কর্তাদের মদদে প্রেস থেকে বহু বছর ধরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করতেন মেশিনম্যান আবদুস সালাম। তার খালাতো ভাই জসিমের কাজ ছিল সারাদেশে প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয়া। এ জন্য একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ছিল তার। দেশব্যাপী চক্রটির প্রায় অর্ধশত সহযোগীর খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

Advertisement

জেএ/জেডএ/এমকেএইচ