২৩ জুলাই শেষ হচ্ছে ৬৫ দিনের মৎস্য অবরোধ। করোনাভাইরাস ও ৬৫ দিনের সমুদ্র অবরোধের কারণে কষ্টে জীবনযাপন করছেন সমুদ্র উপকূলীয় জেলেরা। দীর্ঘদিন মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা জেলেপল্লিতে চলছে মাছ ধরতে যাওয়ার ব্যাপক প্রস্তুতি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী জেলার বিস্তীর্ণ উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে কর্মব্যস্ত দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। মৎস্য বন্দর খ্যাত আলীপুর-মহিপুর-কুয়াকাটা জেলেপল্লিগুলোতে এমন কর্মব্যস্ততা সবচেয়ে বেশি।
Advertisement
কলাপাড়া উপজেলা ফিসিং ট্রলার মাঝি সমিতির সাবেক সভাপতি নুরু মাঝি জানান, গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার ছাড়া আর কোনো পেশার তার অভিজ্ঞতা নেই। তাই অবরোধকালীন পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে। অপেক্ষায় ছিলেন ভরা মৌসুমে ইলিশ শিকারের মাধ্যমে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবেন। সরকারের দেওয়া অবরোধ মেনে সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যাননি। কিন্তু ভারতীয় জেলেরা এ অবরোধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে প্রচুর ইলিশ শিকার করে নিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ পুরোনো জাল বুনছেন, কেউবা নতুন জাল প্রস্তুত করছেন। কেউ পুরোনো নৌকা বা ট্রলার মেরামত করছেন। আবার কেউ তৈরি করছেন নতুন ট্রলার। উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেপল্লি এবং মৎস্য বন্দরগুলোতে ইলিশ মৌসুমকে ঘিরে চলছে ট্রলার মালিক, জেলে এবং অড়ৎদারদের মহা ব্যস্ততা।
ট্রলার মালিক, আড়ৎদার, জেলে সমিতি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কলাপাড়া উপজেলার মৎস্য বন্দরগুলোতে অর্ধশত ট্রলার নির্মিত হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন, গতবছর সমুদ্রে প্রচুর ইলিশ ধরা পরায় মৎস্য ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা লাভবান হয়েছে। তাই এ বছর অনেক ব্যবসায়ী তার ব্যবসা বাড়িয়েছে এবং অনেকেই নতুন ব্যবসা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু নতুন ট্রলার ঘাটে নোঙর করা হয়েছে। চলতি ইলিশ মৌসুমে এসব ট্রলার মাছ শিকারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
Advertisement
কুয়াকাটা আশার আলো মৎস্যজীবী জেলা সমবায় সমিতির সভাপতি মো. নিজাম শেখ বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সাথে সমন্বয় করে ভবিষ্যতে সমুদ্রে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। এমনকি জেলেদের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি।’
ইলিশ মৌসুমে গভীর সাগরে জেলেদের উপরে জলদস্যুদের হামলার কথা উল্লেখ করে গঙ্গামতির জেলে জামাল হোসেন জানান, পূর্বপুরুষদের মাছের ব্যবসা আকড়ে ধরে তিনিও এ পেশায় আছেন। ধারদেনা এবং ঋণ করে এবার তিনি নিজেই ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ট্রলার নির্মাণ করেছেন। কোনভাবে জলদস্যুদের কবলে পড়লে তিনি নিঃস্ব হয়ে যাবেন।
কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্য আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে অবরোধের ফলে দক্ষিণের বড় মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর-কুয়াকাটা মাছের আড়ৎগুলো এতদিন নিষ্প্রাণ ছিল। বেকার, অলস, মানবেতর সময় পার করেছে মৎস্যশ্রমিকরা। এখন কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে মৎস্য বন্দর। আশা করছি এ বছর সাগরে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে। তাই জেলেদের নিরাপদ মৎস্য শিকার নিশ্চিত করতে র্যাবের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী জলদস্যু দমনে কাজ করছে, তা অব্যাহত রাখার দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, ‘সরকারের নির্দেশক্রমে ৬৫ দিনের অবরোধ শেষ হবে ২৩ জুলাই। আমরা আশাবাদী, জেলেদের জালে প্রচুর বড় ইলিশ মাছ ধরা পড়বে।’
Advertisement
এসইউ/এএ/পিআর