‘আরে দূর! করোনা-ফরোনারে ভয় পাইলে জীবন বাঁচব না। এই বৃষ্টির মধ্যে মাস্ক পইরা এই ভারী বোঝা টানা যায় না। বৃষ্টিতে মাস্ক ভিইজ্যা নাকমুখে লেপ্টাইয়া গেছে। দম বন্ধ অইয়া যাইতেছিল। এই কারণে মাস্ক খুইল্ল্যা পকেটে রাখছি।’
Advertisement
‘সরকার তো মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে কিন্তু আপনি মাস্ক পরেননি কেন?’-এমন প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর অন্যতম পাইকারি বাজারখ্যাত কারওয়ান বাজারের দিনমজুর আবদুস সবুর ঠিক এভাবেই মাস্ক না পরার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। শুধু আবদুস সবুর একা নন, বৃষ্টিস্নাত আজকের সকালে এ বাজারের ৯০ শতাংশ বিক্রেতা, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মুখে মাস্ক ছিল না।
রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ এ পাইকারি বাজারে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। আম, জাম, কাঁঠাল, লটকন, পেয়ারা, কলা, লেবু, আমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল এবং শাকসবজি বিক্রিকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে বাজার। অপেক্ষাকৃত কম দামে পণ্য কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে খুব ভোরে এ বাজারে ছু্টে আসেন ক্রেতারা।
কারওয়ান বাজারে দুভাবে পণ্য কেনাবেচা হয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা পাল্লা (পাঁচ কেজি) হিসেবে কম দামে পণ্য কিনতে পারেন। পাড়া-মহল্লায় যে দামে শাকসবজি বিক্রি হয়, তার প্রায় অর্ধেক দামে পাল্লা হিসেবে কেনা যায়। কেউ কেউ আবার কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা কম দামে পণ্য কিনতে এ বাজারে আসেন।
Advertisement
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এক পরিপত্রের মাধ্যমে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারে ১১ দফা নির্দেশেনা জারি করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা কম।
সরেজমিন কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বিক্রেতা এবং যারা পণ্য উঠানো-নামানোসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত তাদের কারো মুখেই মাস্ক নেই। তাদের সবার একটাই কথা-মাস্ক পরে কাজ করা যায় না। মাস্ক পরে কাজ করলে দম নিতে কষ্ট হয়। এক্ষেত্রে আরামদায়ক মাস্ক কোনটি তা তারা জানতে চান।
মাস্ক ব্যবহারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১১দফা
১. সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসের কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট অফিসে আগত সেবাগ্রহীতারা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
Advertisement
২. সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালসহ সকল স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আগত সেবাগ্রহীতারা আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
৪. শপিংমল, বিপণিবিতান ও দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতা অত্যাবশ্যকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও মার্কেট ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
৫. হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার করবেন। মাস্ক পরিধান ব্যতীত ক্রেতা-বিক্রেতা কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করবেন না। স্থানীয় প্রশাসন ও হাট-বাজার কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
৬. গণপরিবহনের (সড়ক, নৌ, রেলপথ ও আকাশপথ) চালক, চালকের সহকারী ও যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনে আরোহণের পূর্বে যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মালিক সমিতি বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৭. গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ সকল শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, মালিকরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
৮. হকার, রিকশা-ভ্যান চালকসহ সকল পথচারীর মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করবে।
৯. হোটেল, রেস্তোরাঁয় কর্মরত ব্যক্তি ও জনসমাবেশ চলাকালীন আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মালিক সমিতিকে নিশ্চিত করতে হবে।
১০. সকল প্রকার সামাজিক অনুষ্ঠানে আগত ব্যক্তিদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত করতে হবে। এবং
১১. বাড়িতে কারও করোনা উপসর্গ থাকলে পরিবারের সদস্যরা মাস্ক ব্যবহার করবেন।
এ পরিপত্র বাংলাদেশে বসবাসরত সকলের জন্য প্রযোজ্য বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়।
এমইউ/এসআর/জেআইএম