ঠিক নয় মাসের মধ্যে দুইবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গতকাল বুধবার (২৩ জুলাই) সর্বশেষ ফোনালাপে ঢাকার সাথে ‘সম্পর্ক দৃঢ়’ করতে ইসলামাবাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন তিনি।
Advertisement
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রমের মতো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে নাক গলিয়ে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ককে প্রায় তলানিতে ঠেকিয়ে দেয়া পাকিস্তানের এই আগ্রহকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, আঞ্চলিক স্বার্থেই দুদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশর সম্পর্ক কখনোই খুব ভালো ছিল না। তার ওপর আমরা যখন আমাদের নিজস্ব আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছিলাম, তখন তারা সেটা নিয়ে নিজেদের সংসদে পর্যন্ত অযাচিত মন্তব্য করলো। যে কারণে ইসলামাবাদের সাথে ঢাকার সম্পর্ক আরও খারাপ হয়।’
এই কূটনীতিকের মতে, ‘যে কার্যকলাপের জন্য বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে সেটা তাদের নির্বুদ্ধিতা ছিল। সেটা কাটিয়ে উঠে পাকিস্তান এখন নিজের স্বার্থেই বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভালো করতে চাইছে। ভারতের সাথে তাদের সম্পর্ক ভালো না হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায় পাকিস্তান। এটা স্বাভাবিক।’
Advertisement
নয় মাসে দুইবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করা ইমরান খানের ‘জেশ্চার’ (কোনো বিষয়ে ইঙ্গিত বা ইশারা) বলেও মনে করেন তৌহিদ হোসেন।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে সুম্পর্ক রাখতে পাকিস্তানের এই আগ্রহ বেশ ইতিবাচক। (আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক জোট) সার্ককে এগিয়ে নিতে এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক রাখার কোনো বিকল্প নেই।’
তবে সার্কের বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেনের অভিমত, আঞ্চলিক এই সংস্থাটি নিয়ে পাকিস্তান যে উদ্যোগই নিক না কেন তা গুরুত্বহীন। এখানে ভারত না চাইলে সার্ক এগোবে না।
তিনি বলেন, ‘সার্কের যে কোনো বিষয়ে একটি সদস্য রাষ্ট্র ভেটো দিতে পারে। পরবর্তী সার্ক সম্মেলন পাকিস্তানে হওয়ার কথা থাকলেও ভারত সেখানে যেতে রাজি হয়নি। এ কারণে কয়েক বছরে ধরে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। এমনকি সার্কের কোনো কার্যক্রমই দেখা যায়নি।’
Advertisement
গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট কথা হয়।
ইহসানুল করিম জানান, কুশলাদি বিনিময়ের পর ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় এবং এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি আরও জানান, এরপর ইমরান খান শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তাকে চলমান বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
অন্যদিকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামবাদ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছন। ইমরান খান ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি সম্পর্কে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান। এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাকিস্তান সফরের জন্য তার আন্তরিক আমন্ত্রণের পুনরাবৃত্তিও করেন ইমরান খান।
ইমরান খান সার্কের প্রতি পাকিস্তানের অঙ্গীকারের বিষয় তুলে ধরে বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, টেকসই শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্যও বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেয়ার ওপর জোর দেন তিনি।
ইমরান খান জানান, পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও সার্বভৌম সাম্যের ভিত্তিতে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পাকিস্তান।
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে ইসলামাবাদের বাড়াবাড়ি রকমের অবস্থানের জের ধরে সম্পর্কের নানা টানাপোড়নে প্রায় দুবছর ধরে ঢাকায় কোনো হাইকমিশনার ছিল না পাকিস্তানের। সম্প্রতি ঢাকায় আসেন দেশটির নতুন হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। গত ১ জুলাই করোনাকালের মধ্যেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন তিনি। ওই বৈঠকে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের তাগিদ দেয়া হয় বলে সূত্র জানায়।
জেপি/এইচএ/পিআর