টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে চরাঞ্চলের আনুহলা গ্রামে মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান ডিগ্রী কলেজ। কলেজের বিশাল এক মাঠ এবং তার পাশেই বড় একটা পুকুর। মাঠ আর পুকুর মিলে নয়নাভিরাম করে রেখেছে ৩৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত কলেজের ক্যাম্পসটি।
Advertisement
কলেজ ক্যাম্পাস, মাঠ, পুকুর- এই জায়গাটা এলাকার ছেলেদের চুম্বকের মতো টানে। কেউ পুকুরে সাঁতার কাটছে, কেউ মাঠে ফুটবল খেলছে। ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী আনুহলা গ্রামের মানুষের বুকভরে নিশ্বাস নেয়ার সবচেয়ে পছন্দনীয় জায়গাও এটি।
কলেজ থেকে মাত্র ৩ মিনিটের দূরত্বে ওই প্রতিষ্ঠানেরই প্রাক্তন শিক্ষক মো. ইউনুস আলীর বাড়ি। এমন মাঠ যাদের বাড়ির পাশে তারা কী ঘরে বসে থাকতে পারেন? পারেননি মো. ইউনুস আলীর তিন ছেলেও। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে ছোট সুমন রেজা কলেজের মাঠ থেকে উঠে এসেছেন দেশের শীর্ষ লিগে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব উত্তর বারিধারার অধিনায়ক এই ফরোয়ার্ড।
সুমন রেজার বড় ভাই বিদেশে, মেজো ভাই চাকরি করেন পুলিশে। কলেজ মাঠে ফুটবল খেলার পর টাঙ্গাইলে একটি একাডেমিতেও ভর্তি হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে ঐ মাঠে বিমান বাহিনীর ফুটবল ট্রায়াল হয়েছিল। সেখানে অংশ নিয়ে টিকে যান সুমন। ফুটবলার হিসেবে সৈনিক পদে চাকরি পেয়ে যান বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে। আন্তঃবাহিনী ফুটবলে বেশ সুনামও করেছিলেন।
Advertisement
বাড়ির পাশের কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা সুমন রেজা এখন গ্রীন ইউনিভার্সিটির সমাজ বিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। চাকরিস্থল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অনুমতি নিয়ে ২০১৫-১৬ মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে নাম লেখান সুমন রেজা।
আন্তঃবাহিনী ফুটবল টুর্নামেন্টের ম্যাচ দেখে সুমনকে পছন্দ করেছিলেন উত্তর বারিধারা ক্লাবের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। তখন বিমান বাহিনী ফুটবল দলের কোচ ছিলেন রাশেদ পাপ্পু। তার মাধ্যমেই মধ্যবর্তী দলবদলে সুমন রেজাকে রেজিষ্ট্রেশন করায় ঐ আসরের নবাগত দলটি।
‘তখন আমি নতুন ছিলাম ক্লাবে। দ্বিতীয় লেগে যোগ দিয়ে চার-পাঁচটা ম্যাচে অল্প সময়ের জন্য বদলি হিসেবে নামার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু উত্তর বারিধারা ক্লাব প্রিমিয়ার টিকে থাকতে পারেনি। নেমে যায় প্রথম বছরই’- বলছিলেন ২৫ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড।
দলের সঙ্গে প্রিমিয়ার থেকে চ্যাম্পিয়নশিপে অবনমন হয় সুমনেরও। তবে ইনজুরির কারণে পরের মৌসুমে খেলতে পারেননি। এক মৌসুম পর আবার উত্তর বারিধারায় নাম লেখান সুমন। দলটি রানার্সআপ হয়ে আবার প্রিমিয়ারে ওঠে তার নেতৃত্বে।
Advertisement
বাবা-মা এবং বড় দুই ভাই কখনও ফুটবল খেলায় বাধা দিতেন না সুমনকে। বরং তারা উৎসাহ দেখাতেন। টাঙ্গাইলের অনেক ফুটবলার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের বিভিন্ন ক্লাবে খেলেন। জাতীয় দলেই আছেন রায়হান হাসান, বিশ্বনাথ ঘোষ, রবিউল হাসান, মানিকরা টাঙ্গাইলেরই।
জেলার অন্য ফুটবলারদের জাতীয় দলে খেলতে দেখে লাল-সবুজ জার্সি টানে সুমন রেজাকেও। হুগড়া ইউনিয়নের আনুহলা গ্রামের এই যুবকও বুকের মধ্যে লালন করে যাচ্ছেন রায়হান-রবিউলদের মতো দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন। যদিও জাতীয় দলের প্রাথমিক ক্যাম্পেও এখনও ডাক পাননি এ ফরোয়ার্ড। ৮ গোল করে উত্তর বারিধারাকে প্রিমিয়ার লিগে ওঠাতে বড় ভূমিকা রাখলেও শীর্ষ লিগে এখনও গোলের মুখ দেখেননি।
‘আমরা ছোট দল। মাঠে আমাদের কৌশলই থাকে ডিফেন্স শক্ত করে খেলা। তাই গোলের সুযোগ সেভাবে আসে না। তবে মাঠে যখন খেলি পুরো আত্মবিশ্বাস নিয়েই খেলি। সবসময়ই আশায় থাকি জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়ার। জানি না পাব কি না। যদি পাই তাহলে আমার চেষ্টা থাকবে দেশের জন্য ভালো কিছু করার। কখনও জাতীয় দলের স্কোয়াডে জায়গা হলে তা ধরে রাখতে এবং দেশকে ভালো ফলাফল এনে দিতে সব প্রচেষ্টা থাকবে’- টাঙ্গাইলের বাড়ি থেকে বলছিলেন সুমন রেজা।
উত্তর বারিধারা প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে ছোট দল। সাধারণত বড় ক্লাবে পারফরম্যান্স করা ফুটবলাররাই বেশি জায়গা করে নেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। আগামীতে বড় ক্লাবে খেলার লক্ষ্য নিশ্চয়ই আছে? ‘বড় ক্লাব ও জাতীয় দলে খেলার লক্ষ্য নিয়েই পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমি যখন মাঠে থাকি তখন শতভাগ আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলি। নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করি। জাতীয় দলের কোচের নজরে একদিন না একদিন পড়ব, সে আত্মবিশ্বাসও আছে। যদি সুযোগ পাই তাহলে অনেক দূর যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার’- ছোট ক্লাবে খেলা সুমন রেজা শোনালেন তার বড় লক্ষ্যের কথা।
আরআই/এসএএস/পিআর