দেশজুড়ে

মৃত চিকিৎসকের সিল-স্বাক্ষর দিয়ে রিপোর্ট, ডায়াগনোস্টিক সিলগালা

বরিশাল নগরীর জর্ডন রোডে দ্য সেন্ট্রাল মেডিকেল সার্ভিসেস নামে একটি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে প্যাথলজিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চিকিৎসক গাজী আমানুল্লাহ খান। তিন মাস আগে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা নেয়া হয়। গত ১৯ জুলাই চিকিৎসক গাজী আমানুল্লাহ খান মারা যান।

Advertisement

চিকিৎসক গাজী আমানুল্লাহ খানের অনুপস্থিতিতে দ্য সেন্ট্রাল মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টারে কোনো প্যাথলজিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়নি বরং তার সিল-স্বাক্ষর জাল করে রোগীদের দেয়া হতো প্যাথলজি পরীক্ষার রিপোর্ট।

অন্যদিকে দ্য সেন্ট্রাল মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টারে রোগী দেখতেন নূর-এ-সরোয়ার সৈকত নামে এমবিবিএস পাসকৃত এক চিকিৎসক। রোগীদের দেয়া ব্যবস্থাপত্রে নূর-এ-সরোয়ার সৈকত নিজের পরিচয় লিখেছেন মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোলজি, বাত ব্যথা, হার্ট, স্ট্রোক, নাক, কান, গলা, বক্ষব্যাধি ও চর্ম ও যৌন রোগে অভিজ্ঞ। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করে আসছিলেন নূর-এ-সরোয়ার সৈকত। পাশাপাশি তিনি নিজেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক পরিচয় দিতেন। বাস্তবে তিনি শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক কিংবা ছাত্র কোনোটিই ছিলেন না। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন।

বুধবার (২২ জুলাই) রাত ৮টার দিকে র‌্যাবের সহায়তায় জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্য সেন্ট্রাল মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টারে অভিযান চালান। এ সময় র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এসব প্রত্যারণার তথ্য বেরিয়ে আসে। অভিযানে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি চিকিৎসক ডা. মুন্সী মুবিনুল হক উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

র‌্যাব-৮ এর এএসপি মুকুর চাকমা জানান, গত তিন মাস ধরে দ্য সেন্ট্রাল মেডিকেল সার্ভিসেস নামে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে কোনো প্যাথলজিস্ট নেই। প্যাথলজিস্ট ছাড়াই রোগ নির্ণয় করে আসছিল সেন্টারটি। এছাড়া নূর-এ-সরোয়ার সৈকত নামে ওই চিকিৎসক শুধু এমবিবিএস পাস করলেও নিজেকে তিনি মানুষের কাছে মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোলজি, বাত ব্যথা, হার্ট, স্ট্রোকসহ ১০ রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলে পরিচয় দিতেন। প্রতারণার কারণে ওই চিকিৎসক এবং দ্য সেন্ট্রাল মেডিকেল সার্ভিসেস ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের দুই স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন মিলন ও এ কে চৌধুরীকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান জানান, দ্য সেন্ট্রাল মেডিকেল সার্ভিসেস নামে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারটির প্যাথলজিস্ট গত ১৯ জুলাই মারা যান। অসুস্থতার কারণে গত তিন মাস ধরে তিনি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারটিতে একদিনও যাননি। কিন্তু প্যাথলজিস্ট ছাড়াই ডায়াগনোস্টিক সেন্টারটিতে রোগ নির্ণয় করা হতো। প্যাথলজিস্ট চিকিৎসক গাজী আমানুল্লাহ খানের স্বাক্ষর থাকতো প্যাথলজি পরীক্ষার রিপোর্টে। এমনকি অভিযানের সময় গাজী আমানুল্লাহ খানের মৃত্যুর বিষয়টি গোপন করার চেস্টা করেন সেন্টারটির স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন মিলন ও এ কে চৌধুরী । তবে বিভিন্ন মাধ্যমে প্যাথলজিস্ট চিকিৎসকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জেরা করা হলে মালিক পক্ষ মিথ্যা বলার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান জানান, প্যাথলজিস্ট না থাকলেও কখনো ডায়াগনোস্টিক সেন্টারটির স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন মিলন আবার কখনো এ কে চৌধুরী স্বাক্ষর জাল করে প্যাথলজি পরীক্ষার রিপোর্ট দিতেন। তবে প্যাথলজিতে ন্যূনতম দক্ষতা তাদের নেই। অন্যদিকে ১০ রোগের বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন নূর-এ-সরোয়ার সৈকত।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান জানান, মেডিকেল প্র্যাকটিস এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরিজ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর ১৩(২) ধারায় দ্য সেন্ট্রাল মেডিকেল সার্ভিসেসের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন মিলন ও এ কে চৌধুরীকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০-এর ২৯ ধারায় ভুয়া পদবি ব্যবহার করায় চিকিৎসক নূর-এ-সরোয়ার সৈকতকে ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। পরে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারটি সিলগালা করে দেয়া হয়।

Advertisement

সাইফ আমীন/এমএফ/বিএ