দেশজুড়ে

থমকে গেছে সুখের সংসার, স্বামীকে বাঁচাতে স্ত্রীর আকুতি

৩০ বছর আগে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন আনোয়ারা বেগম। তখন তাদের বাড়িতে গিয়ে টিউশনি করাতেন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র বিনয় ভূষণ রায়। কলেজে তার সব ভালো বন্ধুরা ছিল মুসলমান। তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত চলাফেরা করতো বিনয়। তাদের সঙ্গে চলাফেরা করতে করতে তার আগ্রহ জাগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের।

Advertisement

সেই আগ্রহ থেকে কিছুদিন পরই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি বিনয় ভূষণ রায় থেকে মেহেদি হাসানে পরিণত হন। এরই মাঝে কেটে যায় দুই বছর। ৬ষ্ঠ শ্রেণির আনোয়ারা বেগম তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। টিউশনি থেকে তাদের প্রেম শুরু হয় এবং কিছুদিন পর তারা বিয়েও করেন।

এর দুই বছর পর ১৯৯২ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন মেহেদি হাসান। বর্তমানে তিনি মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত।

প্রেম করে বিয়ে করার কিছুদিন পরই স্বামী সরকারি চাকরি পাওয়ায় তাদের মধ্যে আনন্দের কমতি ছিল না। তবে কষ্ট ছিল মেহেদি হাসানের। কারণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় তার বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলায় থাকা বাবা-মাসহ পরিবারের কারও সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল না। এতে তিনি বাবার সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হন।

Advertisement

বিয়ের চার বছর পর তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। দুই বছর হলো তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যোগ দিয়েছেন।তাদের সংসারে একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। তিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়ছেন।

স্বামী-সন্তানের পাশাপাশি থেমে নেই আনোয়ারা বেগমও। তিনি পারদর্শী হয়ে উঠেছেন হস্তশিল্পের ওপর। দেশের বিভিন্ন জেলায় নারীদের বুটিকের ওপর প্রশিক্ষণ দেন তিনি। সব মিলে স্বামী ও দুই সন্তানসহ সুখের সংসার আনোয়ারার। ছয় মাস আগ পর্যন্তও সব কিছু ভালো চলছিল। কিন্তু হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তার স্বামী মেহেদি হাসান।

প্রচণ্ড পেট ও কোমর ব্যথা শুরু হয় মেহেদি হাসানের। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৩ দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার কিছুদিন পর আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর শ্যামলীর সিকেডি, কিডনি ইনস্টিটিউট, কর্মফোটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন মেহেদি হাসান।পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারেন রেট্রোপেরিটোনিয়াল লিম্পফোডেনিপ্যাথি নামক এক প্রোস্টেট ইনফেকশনে আক্রান্ত তিনি।

স্বামীকে নিয়ে গত ছয় মাসে বিভিন্ন ডাক্তার দেখানো ও চিকিৎসা বাবদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করেছেন আনোয়ারা বেগম। এর মধ্যে কয়েকজন ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করার। এ রোগের চিকিৎসা নাকি দেশে সম্ভব নয়। ভারতে নিয়ে গেলে প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচ হবে তাদের। কিন্তু এককালীন সেই পরিমাণ টাকা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে তাদের।

Advertisement

আনোয়ারা বেগম রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের শাপলা হাউজিংয়ে (২১৩/৪/বি) থাকেন।

তিনি জানান, ডাক্তার বলেছেন কিডনির নালিতে টিউমার হয়েছে তার স্বামীর। সেই নালির ভেতরে প্যাঁচ লেগে গেছে। এতে টিউমারটি ফুলে গেছে। এ চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। ভারতে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা। কিন্তু ভারতে নেয়ার মতো টাকা নেই তাদের।

আনোয়ারা বেগম বলেন, জমানো টাকা খরচ করে গত ছয় মাসে চিকিৎসা চালানো হয়েছে। স্বামী-সন্তান চাকরি থেকে যে বেতন পায় সেটা সংসারের খরচে শেষ হয়ে যায়। আমিও আগে মাসে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা আয় করতাম। করোনার কারণে তাও বন্ধ।

তিনি বলেন, স্বামীর চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে, আর কুলাতে পারছি না। প্রতিদিন অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। তার কয়েক দফায় অপারেশন করাতে হবে। দ্রুত করতে না পারলে কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখছি করোনার মাঝেও হৃদয়বান মানুষগুলো অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আমি আমার স্বামীকে বাঁচাতে চাই। কেউ কি সহযোগিতা করবেন আমাকে?

আনোয়ারা বেগমের স্বামীর চিকিৎসায় সহযোগিতা করতে কেউ আগ্রহী হলে যোগাযোগ করা যাবে 01724109698 নম্বরে। এছাড়া সহযোগিতা পাঠানো যাবে আনোয়ারা বেগম, উত্তরা ব্যাংক, শ্যামলী শাখা, 0011101114413 হিসাব নম্বরে।

এমএএস/পিআর