বিনোদন

একজনের জন্য চলচ্চিত্রে আজ এত দলাদলি, নোংরা রাজনীতি : পপি

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে বয়কট করেছে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠন। এখন থেকে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কোনো অনুষ্ঠানে জায়েদকে কেউ আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন না, তিনিও কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না। যে আমন্ত্রণ করবেন, তাকেও একঘরে করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ১৮ সংগঠন।

Advertisement

গত বুধবার (১৫ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের জহির রায়হান কালার ল্যাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ না করে ব্যক্তিস্বার্থে নিজের পরিচয় ব্যবহার করছেন।

চলচ্চিত্র পরিবারের দাবি, জায়েদ খান অন্য শিল্পীদের হয়রানি করেন, মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখান। তার কাজের সমালোচনাকারীকে সমিতির সদস্যপদ বাতিলসহ নানাভাবে ক্ষতির চেষ্টা করেন।

এদিকে রোববার (১৯ জুলাই) বিএফডিসির গেটের সামনে মিশা-জায়েদের পদত্যাগ চেয়ে রাস্তায় নামেন শিল্পী সমিতির ভোটাধিকার হারানো ১৮৪ জন শিল্পী। সেদিন বেলা সাড়ে ১১টায় এসব শিল্পী এফডিসির গেটে মানববন্ধন করেন। সেই সঙ্গে ‘যে নেতা শিল্পীদের সম্মান করে না, তাকে আমরা চাই না’ স্লোগান দিয়ে ভোটাধিকার ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি মিশা-জায়েদের পদত্যাগ দাবি করেন।

Advertisement

মিশা-জায়েদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির সব সদস্য। দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট রুবেল ও ডিপজল ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির পাশে থাকার। মিশা-জায়েদকে সমর্থন দিয়ে চলচ্চিত্রের স্বার্থে সবরকম বিভাজন ত্যাগ করে সবাইকে মিলেমিশে চলার পরামর্শ দিয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, অঞ্জনা সুলতানা, সাদেক বাচ্চু, নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুলসহ আরও অনেকে।

ইন্ডাস্ট্রি ক্রমেই এই ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এর সমাধান কী? কোথায় গিয়ে শেষ হবে চলচ্চিত্রের মানুষদের দ্বন্দ্ব, সেটাই এখন ভাবছেন সবাই। একে একে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মুখ খুলছেন অনেক তারকা। সে ধারাবাহিকতায় জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ও শিল্পী সমিতির সাবেক নেতা চিত্রনায়িকা পপি। লিখেছেন অরণ্য শোয়েব-

কথার শুরুতেই পপি জানান শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে থাকার সময়কার চাপা কিছু কষ্টের কথা। অতীতের স্মৃতিচারণও করলেন। তিনি বলেন, এফডিসি নির্মাণ করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার স্বপ্নের জায়গায়ই আজকের এই ফিল্ম ইন্ড্রাস্টি দাঁড়িয়ে। অথচ সেখানে আজ অযোগ্য লোকের নেতৃত্বে জিম্মি চলচ্চিত্রের শিল্পী ও তাদের সমিতি।

দেখুন আমরা সবাই স্বাধীন দেশের নাগরিক। কেউই কিন্তু পরাধীন নয় এবং স্বৈরাচারী বিষয়টির সাথে কোনোভাবেই রিলেটেড না। তাহলে পরাধীনতা কিংবা স্বৈরাচারিতা সিনেমায় চলছে কেন? এই দুটি শব্দ যেন আর এখানে উচ্চারিত না হয় সেটাই আমার প্রথম চাওয়া।

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরেই মনটা ভিষণ খারাপ। ইন্ডাস্ট্রি এমনিতেই ভালো না। তার ওপর শুরু হয়েছে স্বৈরাচারদের মানসিক অত্যাচার। চলছে বিক্ষোভ। একজন শিল্পী থাকবে নরম মনের। এখানে দেখা যাচ্ছে পাষণ্ডদের রাজত্ব। যারা নিজেদের স্বার্থকেই বড় করে তুলেছে, সিনেমা হয়ে গেছে গৌণ।

আজ যারা রাস্তায় নেমেছে এরা প্রত্যেকেই শিল্পী ও ভোটার ছিল শিল্পী সমিতির। এদের ভোটেই কিন্তু আজকের শিল্পী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছেন। তারা তা ভুলে গেছেন। যে চেয়ারটায় জায়েদ খান বসেন সেটা তিনি পেয়েছেন আমাদের সবার ভোটেই। অথচ চেয়ারে বসেই ১৮৪ জন শিল্পীর ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন। এটিকে বেঈমানি বলা যায়। আমরা যারা তখন কমিটিতে ছিলাম অনেকেই এটার প্রতিবাদ করেছিলাম। কারো কথাই শোনা হয়নি। একের পর এক অনিয়মকে তারা প্রতিষ্ঠিত করেছে। এসব কারণেই আমাদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। তারা চেয়েছে আমরা যেন দূরে সরে আসি। মিটিংয়ে না যাই। কমিটিতে অ্যাক্টিভ না থাকি। শুধু যখন টাকার দরকার পড়েছে আমাদের ডাক পড়তো। নইলে তারা চাইতো না আমরা এফডিসিতে যাই। সবাইকে বুঝিয়েছিলাম বিষয়টি। শিল্পীরা বোঝেননি। অনেক সিনিয়ররাও আবেগী ও কৌশলী ফাঁদে পা দিয়ে সমর্থন দিয়ে আবার ক্ষমতায় এনেছে।

তারই দায় আজ শোধ করতে হচ্ছে। বা বলেন ভুলের খেসারত। শিল্পীদের এই করোনার আতঙ্কের মধ্যেও রাস্তায় নামতে হয়েছে। এই প্রথম শিল্পীরা তাদের কোনো নেতার পদত্যাগ চাইলো। এটা দুঃখজনক। তারা যাকে তাকে অপমান করে। সিনিয়র-জুনিয়র মানে না। নিজেদের মতের বিরুদ্ধে গেলে শত্রু ভেবে নেয়, ক্ষতি করার চেষ্টা করে। আমি চাই দ্রুত এসব বিষয়ের মীমাংসা হোক। যে সিনেমাকে ধারণ করে না তার কোনো অধিকার নেই সিনেমার মানুষদের নেতৃত্ব দেয়ার। মুখোশধারীদের মুখোশ যখন খুলছে সেটা তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক।’

পপি আরও বলেন, ‘অনেকে ২০ বছর আগে সিনেমায় কাজ করেছেন। এখন নিয়মিত নন বলে অনেকের সদস্যপদ কেড়ে নেয়া হচ্ছে। যদি এই নিয়মে কাউকে বাদ দেয়া হয় তাহলে তো শত শত শিল্পীর সদস্যপদ থাকবে না। এটিএম শামসুজ্জামান আংকেল, ফারুক ভাই, সোহেল রানা ভাই, কাঞ্চন ভাইদের মতো কিংবদন্তিরাও বাদ পড়বেন। কারণ তারা অনেক দিন সিনেমায় কাজ করেন না। শাবানা-কবরী-ববিতা আপারাও থাকতে পারবেন না। আনোয়ারা ম্যাডাম, সুচন্দা ম্যাডামরা বাদ যাবেন। কারণ কেউই আর আগের মতো কাজ করেন না। এটা একটা ফালতু অজুহাত। ওরা খুঁজে খুঁজে বের করেছে কারা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাদেরই ছাঁটাই করেছেন। এটা অন্যায়। শিল্পী সে চিরদিন শিল্পী। এজন্যই একজন শিল্পী মারা গেলে রাষ্ট্র তাকে সম্মান জানায়। কিন্তু দেখুন নাচের শিল্পী বা ফাইটের শিল্পী যারা শিল্পী সমিতির সদস্য তাদের কিন্তু ভোটাধিকার বাতিল করা হয়নি। কারণ তারা জায়েদের পক্ষের লোক। এটা শিল্পীর নীতি নয়, নোংরা রাজনীতি।

যারা আজ রাস্তায় নেমেছেন তারা অনেকেই শাবানা আপা, কবরী আপা, ববিতা আপাদের সাথে কাজ করেছেন। আমাদের প্রজন্মের সঙ্গেও কাজ করেছেন। এখনকার প্রজন্মের সঙ্গেও কাজ করছেন। বাদ পড়াদের মধ্যে এমন শিল্পীও আছে যার সিনেমার সংখ্যা প্রায় এক হাজার। এরা খুব বেশি অর্থ, সম্মান বা পরিচিতি পাননি। শিল্পী সমিতির সদস্য হিসেবে গর্ববোধ করেন। সেটাও কেড়ে নেয়া হলো। আজ তাদের মনের কি অবস্থা? ফারুক ভাই এ নিয়ে কিছু তো বললেন না! তিনি মুরুব্বি, পূজনীয় আমাদের সবার কাছে। তাকে অভিভাবক হিসেবে সবাই মানি। তার কাছে নিরপেক্ষতা আশা করি। আমার মনে হয় উনার জাজমেন্ট হওয়া চাই দুই চোখের দৃষ্টিতে সমান।’

মিশা-জায়েদকে অবাঞ্ছিত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেই রাজ্জাক আংকেলদের সময় থেকে শিল্পী সমিতির যাত্রা। এরপর বহু শিল্পী এসেছেন। সবাই মিলেমিশে থেকেছেন। হ্যাঁ, যখন নির্বাচনের রাজনীতি আপনি করবেন আপনার কাছের মানুষটি প্রতিদ্বন্দ্বী হলে তার সঙ্গে একটা দূরত্ব হবেই। কিন্তু শিল্পী সমিতিতে এই দূরত্ব ছিল কেবলই নির্বাচন উপলক্ষে। নির্বাচন শেষ, সব শেষ। সবাই মিলেমিশে চলেছে একসঙ্গে। এখানে ব্যক্তি রেষারেষিটা শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে। সেটি নোংরামির অবস্থায় পৌঁছেছে জায়েদ খান নির্বাচনে আসার পর থেকে। জসিম ভাই, ইলিয়াস ভাই, ওমর সানি ভাই, বাপ্পারাজ ভাই, রিয়াজ, ফেরদৌস, আমিন খান, অমিত হাসান, শাকিব খান, ববিতা আপু, শাবানা আপু, মৌসুমী ও শাবনূর আপু, আমি, পূর্ণিমা- সবাই কিন্তু সোনালি সময় পার করে এসেছি। অনেক শিল্পী ছিল। প্রতিযোগিতা অনেক বেশি ছিল। তখন কিন্তু শিল্পীদের মধ্যে এতো বিভাজন ছিল না।

কিন্তু এই একজনের জন্য চলচ্চিত্রে আজ এত দলাদলি, নোংরা রাজনীতি চলছে। এত ঝামেলা হচ্ছে। শাকিব খান একজন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা। তাকে কিন্তু অবাঞ্ছিত ও বয়কট করা হয়েছিল। অনেক কারণ ছিল। তাকে বয়কট করে শাস্তি দেয়া হয়েছিল। ভুল যেই করুক শাস্তি সে পাবেই। হয়তো শাকিবের কিছু ভুল ছিল। কিন্তু সেই ভুলগুলো জায়েদ আরও ঘোলা করেছে পলিটিক্স করে। বি গ্রেডের একজন হিরো যখন এ গ্রেডের একজন নায়কের সাথে পলিটিক্স করেছে এবং নিষিদ্ধ করেছে তখন সবাই কোথায় ছিলেন? তখন কিন্তু ফারুক ভাই বলেননি এই শিল্পীকে কেন বয়কট করা হয়েছে।

একটা মানুষ সিনিয়রদের টুপি পরিয়ে এই সদস্যপদগুলো খালি করে দিচ্ছেন। রুবেল ভাই, ডিপজল ভাই এখনো তো কিছুই বুঝতে পারছেন না কি হতে যাচ্ছে। শিগগিরই টের পাবে। জায়েদ মূলত এসেছে নিজের পাবলিসিটি করতে, সিনেমা করতে আসেনি। শাকিবের বহু সুপারহিট সিনেমা আছে। সে ভুল করলেও তাকে বিবেচনায় রাখতে হবে। তার ত্রুটিগুলো আড়ালে রেখে তাকে বোঝাতে হবে। আমরা অনেকেই তখন সেই চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু শাকিব একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। তাই পুরো ইন্ডাস্ট্রি তাকে বয়কট করেছিল। শিল্পী হিসেবে আমাদের খারাপ লাগলেও কিছু করার ছিল না। কিন্তু জায়েদের একটা সুপারহিট বা জনপ্রিয় সিনেমার নাম বলতে পারবে কেউ? তার ভুলকে কেন সবাই আড়াল করার চেষ্টা করছে? তাও এত এত ভুল। অভিযোগের পাহাড় তার বিরুদ্ধে। তার সিনেমা কয়টা, সে কি শিল্পী কিংবা তার সদস্যপদকে কে চ্যালেঞ্জ করবে?

আপনি বা আপনার সহমতের শিল্পীরা যদি জানতেনই জায়েদের নেতৃত্ব সমিতির জন্য ভালো হবে না তবে নির্বাচনে আসেননি কেন? কেন আপনারা তার বিরুদ্ধে প্যানেল দেননি? তিনি তো বিপুল ভোটে সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছেন। এর জবাবে পপি বলেন, ‘জায়েদের সঙ্গে নোংরা পলিটিক্স এখানে কে করবে? আমি? পূর্ণিমা? রিয়াজ-ফেরদৌস? কেউ করবে না। চারদিক কৌশলের পর্দায় ঢাকা তার। সবাইকে ঘোরের মধ্যে ফেলে রেখেছে। নইলে নির্বাচনের আগে এত এত অভিযোগ ওঠার পরও সিনিয়ররা কী করে ওর পাশে থাকেন! কী করে সে আবার ভোটে নির্বাচিত হয়।

তার কথা না শুনলে, তার মতে না চললে সে সদস্যপদ বাতিল করে। নানাভাবে হুমকি দেয় এবং বিপদে ফেলে। সবাই চুপ থাকে। তাকে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করে। এটা কি কোনো মানবিক শিল্পী করতে পারে? আমি তো মাঝে মাঝে বুঝেই পাই না তিনি শিল্পী নাকি নেতা? কনফিউজড।

যেমন ধরুন আমি পপি, বাংলাদেশের সবাই আমাকে চেনে। আমার নামের ওপর দিয়ে সিনেমা চলছে একটা সময়। সেই আমার মতো মানুষের সঙ্গে পলিটিক্স করেছে। আমার অবস্থান থেকে আমাকে নামানোর চেষ্টা করেছে। আমাকে একটি চিঠি দিয়েছে আমার সদস্যপদ বাতিল করার হুমকি দিয়ে। এটার প্রমাণ আছে আমার কাছে। ওর এসব নোংরা পলিটিক্সের শিকার আমার অনেকেই। অভিনয়, ক্যারিয়ার ও সম্মানে যাদের নখের যোগ্যও ও নয় তাদের সে প্রতিপক্ষ ভাবে। কথা হলো তাহলে ও এসবের সাহস পায় কী করে? আমি বলবো আমাদেরই ভরসায়। আমরা শিল্পীরাই তার পাশে থাকছি। তাকে শাস্তি না দিয়ে সাহস দিচ্ছি।

আমি যখন ফিল্ম ক্লাবের নির্বাচন করেছি তখন এফডিসি থেকে জায়েদ আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে এবং সরিয়ে ফেলেছে। এটা কি শিল্পী সুলভ আচরণ হলো? তার জন্যই ফিল্মের আজ এই অবস্থা। তিনি ইন্ডাস্ট্রিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন। আমি সালমান শাহকে দেখেছি। রুবেল ভাই, মান্না ভাই, রিয়াজ, ফেরদৌসদের মতো সুপারস্টারদের নায়িকা হয়েছি। শাকিবকেও দেখছি। কাউকে কিন্তু তার মতো উগ্র হয়ে বডিগার্ড নিয়ে ঘুরতে দেখিনি। ইন্ডাস্ট্রির সবাই জানে তার চলাফেরা কেমন। এই চলাফেরা কী কোনো নায়কের? অভিনেতা বা শিল্পীর?

কথা প্রসঙ্গে কথা বাড়ে। আরও একটি বিষয় বলতে চাই, ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই তাকে সেলফি জায়েদ বা ফটো জায়েদ বলে ডাকে। তিনি সবার সাথে ছবি তুলে একটি ইমেজ আনার চেষ্টা করেছেন। কেউ হাসপাতালে গেলেও তিনি ছবি তোলেন, কেউ লাশ হয়ে পড়ে থাকলেও তিনি ছবি তোলেন। কাউকে এক পয়সা দান করলেও তিনি ছবি তুলে সেটা প্রচার করেন। এটা শিল্পীর স্বভাব? উনি সিনেমায় আসছেন রাজনীতি করতে। তার রাজনীতি পছন্দ হলে তিনি করতেই পারেন। কিন্তু সিনেমায় কেন সেটি অ্যাপ্লাই করছেন?’

‘তিনি ঘোষণা দিক যে কে কে চলে গেলে তার ভালো হয়। আমরা চলে যাব। তিনি একাই সমিতি ও এফডিসি চালাক। তাহলে অন্তত নোংরা পলিটিক্সের শিকার হতে হবে না এবং অপমানিত হয়ে এফডিসি থেকে চলে যেতে হবে না কাউকে। ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য আর কত শিল্পীর সদস্যপদ খেলে উনি চলচ্চিত্রের মানুষদের কাজ করতে দেবে সেটাও আমি জানতে চাই’- যোগ করেন পপি।

২০১৭ সালের নির্বাচনের পর আপনাদের কমিটির কার্যক্রম নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। অনেক সমালোচনা হয়েছে আপনাদের সবাইকে নিয়েই। এর কারণে কী? ‘শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসে জায়েদ খান ব্যক্তিগত ব্যবসা চালিয়েছে। গত কমিটিতে ৯০ ভাগ লোক তারকাশিল্পী ছিলেন। এবার এমন ক’জন আছে তার সঙ্গে? আপনারা নিজেরা কী দেখছেন না। প্রশ্ন জাগে না? কেন নেই আমরা তার সাথে? নিশ্চই কোনো গলদ আছে। দেখুন আগেও গণমাধ্যমে এগুলো নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের তারকাখ্যাতিকে সে বিক্রি করেছে। বিভিন্ন জায়গায় শো করিয়েছে শিল্পী সমিতির ফান্ড গঠন করার কথা বলে। আমরা চেয়েছি শিল্পীদের সমিতি শক্তিশালী হোক। দুই বছরে প্রায় অনেক টাকা ফান্ডে এসেছে। তার মধ্য থেকে ৫০ লাখ টাকার মতো এদিক ওদিক হয়েছে। সে হিসাব দিতে পারেনি।

তার কাছে হিসাব চাইতেই সে জ্বলে উঠে। তখনই তাড়াহুড়ো করে আমাদের কমিটি ভেঙে দেয় সে। কোনো মিটিং হয়নি, আমাদেরও ডাকেনি। আমি অনেক শো করেছি তার সাথে কিন্তু কোনো টাকা দেয়নি আমাকে। আমি টাকা ছেড়ে দিয়েছি সমিতির জন্য। আমরা নায়ক-নায়িকারা পরিশ্রম করে ফান্ডের জন্য টাকা এনেছি। যারা সহশিল্পী হিসেবে আমাদের সঙ্গে পারফর্ম করতেন তারা তো অসহায়। তাদেরও টাকা দেবে বলে দেয়া হয়নি।

আমরা সবাই শো করেছি সমিতির ফান্ড কালকেশনের জন্য। অথচ ফান্ডে কত টাকা হলো, কীভাবে কি ব্যায় হচ্ছে এসব জানতে চাইলেই তিনি প্রসঙ্গ এড়াতেন। কখনো কখনো বলতেন আমাদের টাকা তিনি দিয়ে দিয়েছেন। যে লোক সব কাজের ছবি তুলে রাখে সে লোক কাউকে টাকা দিয়েছে তার কোনো ছবি তুলে নাই এইটা কেউ বিশ্বাস করবে? যে লাশের সাথে ব্যবসা করে সে অনেক কিছু করতে পারে। আমাদের টাকা দেয়ার কোনো রসিদও দেখাতে পারেনি সে। আমার কথা হলো সমিতির নাম ভাঙিয়ে সে যে এতো অন্যায় করে তা কি শ্রদ্ধেয় ফারুক ভাই জানেন না?’

ক্ষোভ প্রকাশ করে পপি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে কেউ না খেয়ে থাকে না। হয়তো কেউ কেউ কষ্টে দিন পার করেন। কিন্তু উঠতে বসতে শিল্পীদের এখন দুস্থ শিল্পীর ট্যাগ লাগিয়ে তাদের অপমান করা হচ্ছে। তিনি নিজের প্রচারের জন্য শিল্পীদের দুস্থ বানিয়ে ফেলেছেন। একটা পরিবারের সবাই তো একরকম না। কেউ একটু গরিব, কেউ একটু বিত্তবান। যার একটু কম আছে তাকে আপনি দুস্থ বানিয়ে দেবেন নাকি পাশে দাঁড়াবেন? সে যদি সিনেমা ভালোবাসতো, শিল্পীদের ভালোবাসতো তাহলে এই দুস্থ কথাটি ছড়াতো না। তাদের সাহায্য করে ছবি তুলে নিউজ কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিতো না। সে তো অপমান অপদস্ত করেছে সবাইকে। এটা আমার গায়ে লাগে। অন্যদের শিল্পীদেরও গায়ে লাগে বলেই মনে করি।

এক কেজি চাল ডাল দিলেই কি একটা শিল্পীর সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল? শিল্পী ত্রাণ চায় না, ভিক্ষা চায় না; কাজ চায়। নামমাত্র সাহায্য দিয়ে সেলফি তুলে নিউজ করিয়ে শিল্পীদের সম্মান নষ্ট করা হয়েছে। আগে আলমগীর ভাই, ফারুক ভাই, ববিতা আপা, শাবানা আপারা লাখ লাখ টাকা দিয়ে সাহায্য করতো শিল্পীদের। আমি নিজে দেখেছি আলমগীর ভাই লাখ লাখ টাকা বিতরণ করেছেন। কিন্তু কই তাকে তো কোনো দিন দেখিনি একটা সেলফি নিতে? বা কোথাও কোনো নিউজও দেখিনি। ফারুক ভাইকে দেখেছি শত শত মানুষকে সাহায্য করেছেন। রাজ্জাক ভাই বহু মানুষকে সাহায্য করেছেন। মান্না ভাই, রিয়াজ-ফেরদৌস, শাকিবরা অনেকেই শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আরও অনেক শিল্পী আছেন যারা আড়ালে থেকে সাহায্য করেছেন। আমি নিজেও করেছি। সেসব তো মানুষ জানতো না কোনো দিন। এখন কী হচ্ছে সবাই জানে। আমার কান্না আসে শিল্পীদের নিয়ে এই নোংরা রাজনীতি দেখে।

আজ তাকে বয়কট করা নিয়ে কথা হয়। বলা হচ্ছে কোনো শিল্পীকে বয়কট করলে ১৮ সংগঠনকে নাকি বয়কট করা হবে। হাস্যকর। ফিল্ম ইন্ড্রাস্টি না থাকলে শিল্পী থাকবে? তাদের কোনো ভ্যালু থাকবে? ১৮ সংগঠন যে ডিসিশন নিয়েছেন আমি তাদের সাথে আছি। কারণ আমি সিনেমার বাইরে কেউ নই। সবাই যেখানে থাকবে আমিও থাকবো। মিশা ভাইকে নিয়ে আমার কোনো কথা নেই। তিনি একজন শিল্পী। তাকে নিয়ে কোনো আমার অভিযোগও নেই। তিনি সচেতন হলে, নিজেকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারলেই বুঝে উঠবেন তার এই মুহূর্তে কী করা উচিত। তিনি খুব মিশুক। তিনি জানেন, একজন শিল্পীর পরিচয় হওয়া উচিত তার সিনেমা তার ব্যবহার দিয়ে। পদ বা ক্ষমতা দিয়ে নয়।

দেখুন, ফারুক ভাইকে আমি সম্মান করি। তিনি আমার প্রিয় মানুষ। তাকে অনেক ভালোবাসি। দেখুন, শিল্পীরা আসলে সম্মানটাকে খুব ভালোবাসে। জায়েদ সেই সুযোগই নিয়েছে। মুখে মিষ্টি কথা বলে সিনিয়রদের লোক দেখানো সম্মান দেখিয়ে কাজ হাসিল করে নিয়েছে। আশা করি বেয়াদবি হিসেবে নেবেন না ফারুক ভাই, উনাকে বুঝতে হবে যে তাকে মিস ইউজ করা হচ্ছে। আমাকে ছয় মাস আগে হুমকি দেয়া হয়েছে। সদস্যপদ বাতিল করা হবে বলা হয়েছে। তখন কিন্তু কোনো বড় ভাইকে আমি পাশে পাইনি। কাল যদি আমার সদস্যপদ ছিনিয়ে নেয় তাহলেও আমি পাবো না বলেই মনে করছি। ফারুক ভাই বা সিনিয়রদের এটাও বলতে চাই, একবার ভাবুন- আমরা যখন কাজ করেছি তখন এতো ঝামেলা ছিল? তবে আজ কেন এত সমস্যা হচ্ছে?’

সমিতির নানা অনিয়ম প্রসঙ্গে পপি আরো বলেন, ‘কফির বিল আসে চার লাখ টাকা। এই কফি করা খেয়েছে? আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজন যায় না। সাধারণ শিল্পীদের কফিও দেয়া হয় না। তারা খায় লেবু চা। সম্মানিতদের জন্য কফির ব্যবস্থা। তারা কারা? এত বড় কফির বিলটা কীসের? এটা আমাদের কষ্টের টাকা। নিজের টাকায় ড্রেস বানিয়ে পারফরমেন্স করেছি স্টেজে। সেই টাকা তো পাইনি বরং আমাকে, ফেরদৌস আর রিয়াজকে চোর বানানোর চেষ্টা করেছে। আমরাই টাকা আয় করেছি আবার আমাদেরই নিজেদের টাকা চুরি করার জন্য চোর বানানোর চেষ্টা করেছে সে। কতো অমানবিক অন্যায় এটা! মিশা ভাই প্রতিবাদ করেননি। সমর্থন দিয়েছেন উল্টো। এটাতে খুব কষ্ট পেয়েছি। আমাদের অপরাধ আমরা আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়েছি।

পাপ পূর্ণ হতে হতে পচে গেলেই তার দুর্গন্ধ ছড়াবেই। সেটাই ছড়াচ্ছে এখন। পাপ কাউকে ছাড়ে না। একদিন না একদিন ফল ভোগ করতেই হয়।’

এলএ/এমকেএইচ