করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনাসহ নানা অভিযোগে স্বাস্থ্যখাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে বদলি করা হয়। রুটিন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বদলি বলা হলেও সাধারণ মানুষ মনে করছেন, ‘করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে বদলি করেন সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা।’
Advertisement
রিজেন্ট হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের অনুমোদন প্রদানে স্বাস্থ্যসচিবের নাম চাউর হচ্ছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে রিজেন্ট হাসপাতালকে অনুমোদন প্রদানের ব্যাপারে সরাসরি সচিব বা অন্য কারও নাম উল্লেখ করা না হলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে অনুমোদন দেয়া হয়।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পর স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের কাছে মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাখা চাওয়া হয়। তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দেন মহাপরিচালক। এরপর দুদিন না যেতেই গতকাল (২১ জুলাই) আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করেন স্বাস্থ্য মহাপরিচালক। সারাদিন স্বাভাবিকভাবে অফিস করে বিকেলবেলা সহকর্মীদের কাছ থেকে প্রতিদিনের মতো বিদায় নিয়ে সচিবালয়ে গিয়ে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগের ব্যাপারে তিনি মিডিয়ার কাছে এখনও মুখ খুলেননি।
করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জাড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার কারণে কি স্বাস্থ্য মহাপরিচালক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, নাকি ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেউ কেউ বলছেন, গত কয়েকদিন নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, তার কিডনির পুরোনো গুরুতর সমস্যা বেড়ে যায়। এসব কারণে তিনি পদত্যাগ করেন।
Advertisement
স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের পদত্যাগের পর প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও চিকিৎসক নেতারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে সচিব বদলি হলেন, স্বাস্থ্য মহাপরিচালক পদত্যাগ করলেন, এরপর কি স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন নাকি তাকে অপসারণ করা হবে?
তাদের মতে, দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর কাজ করলেও মূলত স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সর্বোপরি স্বাস্থ্যবিভাগের সব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সঠিকভাবে চলছে কি না, তা দেখার সর্বোচ্চ দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ সচিব, স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের ওপর বর্তালে সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি হিসেবে মন্ত্রীর ওপরও বর্তায়।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যক্রম বিশেষত শতশত কোটি টাকার কেনাকাটায় মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও তদবির না রাখায় অনেকেরই চক্ষুশূল হন মহাপরিচালক।
এমইউ/জেডএ/এমকেএইচ
Advertisement