মোর্শেদা আক্তার ৩৪তম বিসিএসের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার (রসায়ন)। বাবা মোশারফ হোসেন ভূঁঞা, মা দেলোয়ারা বেগম। তিনি ফেনীর ছাগলনাইয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ছাগলনাইয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ছাগলনাইয়া মৌলভী সামছুল করিম কলেজ থেকে এইচএসসি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
Advertisement
সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
ছোটবেলা কেমন কেটেছে?মোর্শেদা আক্তার: ছোটবেলাটা সবার কাছেই মধুর। আমারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে আমার শৈশব তেমন দুরন্তপনায় মুখর ছিল না অনেকের মতো। যেহেতু ভাই-বোনের সংখ্যা কম। একজন মাত্র বড় ভাই। তাই মায়ের আঁচলেই বেড়ে ওঠা। অনেকটা একাকী শৈশব বলা যায়। স্কুলের সময়টুকুতে অনেক বান্ধবীর সাথে খেলাধুলা, গল্প, আড্ডার অম্লমধুর স্মৃতি রয়েছে, যা এখনো রোমন্থন করি।
পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?মোর্শেদা আক্তার: আমি এমন একটি পরিবারে বড় হয়েছি; যেখানে পড়াশোনায় প্রতিবন্ধকতা তো দূরের কথা বরং পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা পেয়েছি। আমার মা-বাবার কাছ থেকেই বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শিখেছি। বলতে গর্ববোধ করি, সে সময়কার বাবা-মায়ের মধ্যে অসময়ে কন্যাকে সুপাত্রে হস্তান্তর করা, বেশি অর্থ ব্যয়ের ভার না নেওয়া কিংবা সামাজিক গোঁড়ামি—এসব বিষয় আশেপাশেই আত্মীয়-অনাত্মীয়ের মধ্যে প্রচুর দেখতাম। যা আমার বাবা-মাকে কখনো ছুঁতে পারেনি।
Advertisement
বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মোর্শেদা আক্তার: অনার্সের শুরু থেকেই বিসিএসের ব্যাপারে আগ্রহ বোধ করতাম। তবে সে আগ্রহ স্বপ্নে রূপ নিয়েছে অনার্সের শেষের দিকে।
বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—মোর্শেদা আক্তার: আমার স্বভাব, যখন যে কাজ করি; মনোযোগ দিয়ে করার চেষ্টা করি। অনার্সে পড়াকালীন একাডেমিক পড়াশোনা নিয়মিত করেছি। যাতে ভালো রেজাল্ট ধরে রাখতে পারি। সে সময় বিসিএসের জন্য প্রস্তুতিমূলক কিছুই করিনি। বলতে গেলে, এ বিষয়ে মাথা ঘামাইনি।
অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার পর বিসিএসের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেই। যেহেতু বিসিএস প্রস্তুতি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। পরীক্ষার অনেক ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। তাই প্রথমে এর সিলেবাস বুঝে নেই। এরপর যেসব বিষয়ে আমার দক্ষতা কম; সেগুলোতে জোর দেওয়া শুরু করি। বিজ্ঞানের ছাত্রী বিধায় গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে বেগ পেতে হয়নি, এটা পজিটিভ দিক ছিল আমার।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলেই আমার ও আমার বান্ধবীদের বিসিএস প্রস্তুতি শুরু হয়। মাঝেমাঝে কয়েকজন মিলে বিভিন্ন টপিকস নিয়ে আলোচনা করে পড়তাম। এতে নতুন বিষয়গুলো সহজে ভুলতাম না। একটি রিদম নিয়ে লেখাপড়া চলছিল বিসিএসের। এই হলো আমার বিসিএস যাত্রার সংক্ষিপ্ত গল্প।
Advertisement
কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?মোর্শেদা আক্তার: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ব্যাপারে মা-বাবার আগ্রহই একজন সন্তান হিসেবে আমার বড় অনুপ্রেরণা। এ ছাড়া যদি বলি, একজন শ্রদ্ধেয় বড় ভাই বিসিএসে উৎসাহ ও পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। যার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আর কাছ থেকে হলের কয়েকজন আপুর বিসিএস সফলতার জার্নির দৃশ্য দেখেছি ও গল্প শুনেছি। যা ভীষণভাবে উদ্দীপনা জাগিয়েছে। সর্বোপরি, স্যারদের কথা না বললেই নয়, বিশেষ করে মেরাজুল ইসলাম স্যার, ড. আব্দুল কুদ্দুস স্যার খুব উৎসাহ দিয়েছেন এবং পড়ালেখায় সহযোগিতা করেছেন। তাদের ঋণ শোধ করা যাবে না।
একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মোর্শেদা আক্তার: ভবিষ্যতে রসায়নের উপর গবেষণা (পিএইচডি ডিগ্রি) করার ইচ্ছা আছে।
সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী? মোর্শেদা আক্তার: করোনা দুর্যোগে কিছু ছাত্রছাত্রীকে পড়াশোনার ব্যাপারে সাহায্য করার মতো ক্ষীণ ভূমিকা ব্যতিরেকে আর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারিনি, তাই দুঃখবোধ হচ্ছে। এ সময়ে আমি ব্যক্তিগত সমস্যায় আক্রান্ত হই আমার মুমূর্ষু মাকে নিয়ে। মায়ের মরণাপন্ন অবস্থায় দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকায় করোনাকালে সাধারণ মানুষের জন্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারিনি!
এসইউ/এএ/এমএস