ধর্ম

নেয়ামত লাভের অনন্য ইবাদত কুরবানি

নেয়ামত লাভের অন্যতম আমল কুরবানি। আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও পরকালের অন্যতম নেয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ কুরবানির নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলেন-’নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউসার দান করেছি। সুতরাং আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার : আয়াত ১-২)

Advertisement

এ সুরায় উল্লেখিত কাউসার হলো প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য সেরা নেয়ামত। যা অন্য কোনো নবি-রাসুলকে দেয়া হয়নি। এ কাউসার দ্বারা দুনিয়া ও পরকালের একাধিক নেয়ামতের কথা বিভিন্ন তাফসিরে উঠে এসেছে।

কেয়ামতের কঠিন দিনে যখন মানুষের জন্য কোনো পানীয় থাকবে না কিংবা তৃষ্ণায় মানুষের মধ্যে হাহাকার বিরাজ করবে, সে সময় মহান আল্লাহ ঘোষিত হাউজে কাউসার থেকে উম্মতে মুহাম্মাদিকে এ পানি পান করবেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, যারা একবার এ পানি পান করবে, তাদের আর কোনো পিপাসা থাকবে না।

এ হাউজে কাউসার লাভের অন্যতম আমল হলো আল্লাহ তাআলার জন্য কুরবানি করা। যা মুমিন মুসলমান ১০ জিলহজ পশু জবেহের মাধ্যমে পালন করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এ নির্দেশই দিয়েছেন।

Advertisement

সুতরাং কুরবানি সাধারণ কোনো ইবাদত বা আমল নয়, বরং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম আমল এবং ইবাদতও এটি। এ ইবাদতের মাধ্যমেই বান্দা লাভ করে দুনিয়া ও পরকালের অসংখ্য নেয়ামত।

কুরবানি যেহেতু নেয়ামত লাভের অন্যতম ইবাদত ও আমল। তাই কুরবানি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা ও নিয়ত থাকা জরুরি। নিয়তে গরমিল হলে আর কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জিত হবে না। কুরবানি পশু কেনা থেকে শুরু করে পশু জবেহ তথা কুরবানি সম্পন্ন করা পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ে সচেতন থাকার বিকল্প নেই। কারণ বেখেয়ালি মন্তব্যের কারণে যে কারও কুরবানি বাতিল হয়ে যেতে পারে।

মুমিন মুসলমানের জন্য নিজ নিজ পশু নিজেরাই কুরবানির প্রস্তুতি নেবে। কুরআনুল কারিমের এ নির্দেশনা মনের গভীরে গেঁথে নেবে যে, এ কুরবানি কারও জন্য নয়, বরং এটি সেই মহান প্রভুর জন্য। সে অনুভূতির কথাও আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে তুলে ধরেছেন। কুরবানি দাতার মানসিকতা কেমন হওয়া চাই তা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন-قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ’(হে রাসুল!) আপনি বলুন- আমার নামাজ, আমার কুরবানি এবং আমার জীবন ও মৃত্যু (সবকিছু) বিশ্ব-প্রতি পালক আল্লাহরই জন্য। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২-১৬৩)

আল্লাহর কাছে মানুষের এ নিয়তই পৌঁছে যায়। যে নিয়তে গোশত খাওয়ার কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। কেননা কুরবানির গোশত, রক্ত কিংবা পশুর অন্য কোনো উপাদান আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন-'এগুলোর (কুরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।' (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)

Advertisement

সুতরাং আল্লাহর জন্য পশু জবেহের মাধ্যমে নিজের অন্তরে জেগে উঠা পশুত্বকে কুরবানি করার আমল করা সবার জন্য জরুরি। আর তাতে দুনিয়া ও পরকালে নেয়ামত লাভ করবে মুমিন।

কুরবানির পশু যেহেতু আল্লাহর শিয়ার (নিদর্শন)। এজন্য জবাই করা পশুর প্রতিও যত্ন নেয়া একান্ত কর্তব্য। জবাইয়ের পর পশু নিস্তেজ হওয়ার আগে এর দেহ থেকে চামড়া উঠানো কিংবা কোনো অঙ্গ কাটা মাকরুহ। এমনকি কুরবানির পশু এমনভাবে জবাই দেয়, যাতে এটি কম কষ্ট পায়। কেননা পশু কুরবানি করার পর এর প্রতি সম্মান দেখানোও ইবাদতে গণ্য। এমনটি মহান আল্লাহর নির্দেশ। কুরআনে এসেছে-’এটা আল্লাহর বিধান। আর কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের সংযমশীলতারই বহিঃপ্রকাশ।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩২)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোনো পশুর সঙ্গে এর অধিকারের দিকে লক্ষ্য রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। অমানবিক আচরণ করতে নিষেধ করেছেন। হাদিসে এসেছে-হজরত শাদ্দাদ ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা সব বস্তুর ওপর ইহসান ফরজ করেছেন। অতএব যখন তোমরা হত্যা করবে, তখন উত্তম পন্থায় হত্যা করবে আর যখন জবাই করবে, তখন উত্তম পন্থায় জবাই করবে। আর তোমাদের প্রত্যেকেরই ছুরিতে ধার দিয়ে নেয়া উচিত এবং জবাইকৃত জন্তুকে ঠাণ্ডা (স্থির বা নিস্তেজ) হতে দেয়া উচিত।’ (নাসাঈ)

মনে রাখতে হবেনেয়ামত লাভের অন্যতম এ আমল বেখেয়ালে নষ্ট হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা জবাই করা পশুর সঙ্গে অসতর্ক আচরণে কুরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জীবিত অবস্থায় যে প্রাণীর কোনো অংশ কাটা হয়, সেটা মৃত তথা হারাম হয়ে যাবে।’ (তিরমিজি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নেয়ামত লাভের অনন্য ইবাদত কুরবানি যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। পশুর প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য এবং দুনিয়া ও পরকালের নেয়ামত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ