জাতীয়

চলছে পশুর হাটের প্রস্তুতি

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে। রাজধানীর বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা শিয়ালডাঙ্গা এলাকায় আসিয়ান সিটির একটি প্রকল্পের ভেতরে হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে।

Advertisement

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্পের মূল সড়কের দুই পাশে পশু রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাসিলের অর্থ আদায়ের জন্য অস্থায়ী কাউন্টার বসানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যবেক্ষণের জন্য ওয়াচ টাওয়ারসহ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।

আলোকসজ্জাসহ পশুর হাটের প্রস্তুতি নিয়ে ডেকোরেটর কর্মীরা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। ডেকোরেটর কর্মীদের কাজ করতে দেখা গেলেও পশুর হাটটির ইজারাদার বা পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে পাওয়া যায়নি সেখানে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, বিগত কয়েক দিন ধরেই পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে। ডেকোরেটরের লোকজন কাজ করছে।

Advertisement

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পশুর হাটের বেশ কয়েকটি স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অস্থায়ী পানির ট্যাংকের পাশাপাশি হাত ধোয়ার জন্য বেসিন বসানো হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত অস্থায়ী এই পশুর হাটটি প্রতি বছরই এখানে বসে।

পশুর হাটের ইজারাদার রুবেল শওকত জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আগামীকাল নির্দেশনা পাব। খুব সম্ভবত ট্যানেল বসাতে হবে। জনসচেতনতামূলক মাইকিং হবে, ব্যানার-ফেস্টুন থাকবে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বারবার মাইকে ঘোষণা করা হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার। মাস্ক ব্যবহার করে হাটে প্রবেশ করতে হবে।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমাদের ডাকা হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা নিয়ে বোঝা যাবে আমাদের কী পদক্ষেপ হবে।

হাট ইজারাদারদের যেসব শর্ত মানতে হবে

Advertisement

গবাদি পশুর হাট ঈদের দিনসহ মোট পাঁচ দিন চালু থাকবে। নির্ধারিত দিনের বেশি হাট পরিচালনা করা যাবে না। কোরবানির পশুর হাটের নির্ধারিত সীমানা বহাল থাকবে। হাটের সীমানার বাইরে কোনো হাট বসানো যাবে না। ইজারা গ্রহীতা নিজ ব্যবস্থাপনায় হাটের চৌহদ্দি সংরক্ষণপূর্বক চৌহদ্দির বাইরে যাতে পশুর হাট প্রসারিত না হয় তা নিশ্চিত করবে। পশু বিক্রয় মূল্যের ওপর সরকার অনুমোদিত শতকরা ৫ টাকা হারে হাসিল আদায় করতে হবে; সরকারি হারের অতিরিক্ত হাসিল আদায় করা যাবে না।

ইজারা গ্রহীতা নিজ খরচে বাজারে দৃশ্যমান একাধিক স্থানে সর্বসাধারণের অবগতির জন্য টোল চার্ট প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষ যে কোনো সময় ইজারা বাতিল বলে ঘোষণা করলে ইজারা গ্রহীতা তা মেনে নিতে বাধ্য থাকবেন এবং কোনো প্রকার আপত্তি করতে পারবেন না। হাটে পশু বেঁধে রাখার জন্য বা অন্য কোনো কাজে রাস্তার ইলেকট্রিক পিলার ব্যবহার করা যাবে না।

হাটের যে কোনো দুর্ঘটনার জন্য ইজারা গ্রহীতা নিজেই দায়ী থাকবে। ইজারা গ্রহীতা নিজ দায়িত্বে বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ করবে এবং সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবে। এ বিষয়ে ইজারা গ্রহীতা ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। হাটে জেনারেটরের ব্যবস্থা করতে হবে। বৈধ ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত লোক দ্বারা বিদ্যুৎ সংযোগ কাজ করাতে হবে।

ইজারা গ্রহীতা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের দফতরে যোগাযোগ করে হাট চলাকালীন হাট এলাকায় নিজ খরচে পুলিশ-আনসার মোতায়েনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া হাটের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব কর্মী নিযুক্ত করবে। হাটের মধ্যে যত্রতত্র ময়লা-আর্বজনা ফেলে রাখা যাবে না। একটি নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আর্বজনা রাখতে হবে।

রাস্তার ও অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষতি করলে জামানত বাজেয়াপ্তসহ আইনানুগ ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হবে এবং ইজারা গ্রহীতা তা পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। ইজারা গ্রহীতা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখবেন। ইজারা গ্রহীতা জোরপূর্বক কোনো পশুকে হাটে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করতে পারবেন না এবং হাটের আশপাশের সড়কপথ বা জলপথ দিয়ে গমনকারী কোনো পশুর ওপর জোরপূর্বক হাসিল আদায় করতে পারবেন না।

বর্ণিত হাটের সুবিধাজনক স্থানে ডিএনসিসির ভিজিলেন্স টিমের জন্য একটি এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যদের জন্য একটিসহ মোট দুটি অস্থায়ী শেড নির্মাণ করতে হবে। হাটের মধ্যে পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণপূর্বক পশু নামানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ইজারা গ্রহীতাকে নিজ ব্যবস্থাপনায় হাটের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্তসংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। পশুর হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য হাটের সুবিধাজনক স্থানে একটি ওয়াচ টাওয়ার বসানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ইজারা গ্রহীতাকে হাটে পর্যাপ্তসংখ্যক অস্থায়ী টয়লেট স্থাপন করতে হবে। অস্থায়ী টয়লেটের স্থানে হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান রাখতে হবে। হাট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইজারাদারের নিজ দায়িত্বে হাটের বাঁশ-খুঁটি অপসারণ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে অপসারণ খরচ তার জামানত থেকে কর্তন করা হবে।

করোনা সংক্রমণ রোধে যেসব ব্যবস্থা নিতে হবে

হাটের প্রবেশ পথে টিভি স্ক্রিনযুক্ত থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে প্রবেশকারীর শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হবে। গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। হাটে প্রত্যেক প্রবেশকারীকে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, হেড ক্যাপ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে হাটে প্রবেশ করতে হবে। হ্যান্ড-স্যানিটাইজার, হ্যান্ডগ্লাভস, মাস্ক ও হেড কভার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ কাজ তদারকির জন্য মনিটারিং টিম রাখতে হবে।

করোনা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি সংবলিত ব্যানার, পোস্টার টাঙানোসহ এ বিষয়ে মাইকে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করতে হবে। জীবাণুনাশক দিয়ে হাটের সর্বত্র ও আশপাশের সংশ্লিষ্ট জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ক্রেতা, বিক্রেতা ও ইজারাদারের নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সকলকে মাস্ক, গ্লাভস, হেড কভার পরিধান করে হাটে আসতে হবে। হাটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাবান, পানির ড্রাম ও বেসিন রাখতে হবে। বেসিন স্থাপনের ডিজাইন পূর্বেই ডিএনসিসি বরাবর জমা দিয়ে তা অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।

হাটে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য পৃথক গেট তৈরি করতে হবে এবং নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাটে প্রবেশ এবং বের হতে হবে। একাধিক প্রবেশ পথ হলে প্রত্যেক প্রবেশ পথেই টিভি স্ক্রিনযুক্ত থার্মাল স্ক্যানার বসাতে হবে। বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের নিমিত্তে করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো স্ক্রিনে সার্বক্ষণিকভাবে দেখাতে হবে।

ইজারা গ্রহীতাকে হাটের জন্য প্রশিক্ষিত ও স্বেচ্ছাসেবক টিম তৈরি করতে হবে। ক্রয়কারী অনেক লোক নিয়ে হাটে আসতে পারবেন না এবং ক্রেতাকে নির্ধারিত দূরত্ব থেকে পশু দেখতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতাকে অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়ে উৎসাহিত করতে হবে। হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাস্টবিন স্থাপন করতে হবে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত মেডিকেল বর্জ্য যেমন- গ্লাভস, মাস্ক, হেড কভার, সেনিটাইজার রাখার জন্য পৃথক ডাস্টবিন রাখতে হবে। ডাস্টবিনসমূহ কোথায় তা তীর চিহ্নিত স্টিকার দিয়ে দেখাতে হবে। সর্বোপরি, স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন নিশ্চিত করতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধের জন্য সরকার, স্বাস্থ্য অধিদফতর, সিটি করপোরেশন কর্তৃক যদি আরও কোনো শর্ত-বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয় তবে ইজারাদারকে তা আবশ্যিকভাবে পালন করতে হবে। করোনা রোধ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ এবং সিটি করপোরেশন আইন-২০০৯ ও এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন-বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এইউএ/এমএফ/এমএস