ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। রাজধানীর একাংশের নগরপিতা অর্থাৎ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র। এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি নবম, দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য (এমপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিটি করপোরেশন এবং নাগরিক সেবার প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের।
Advertisement
করোনাভাইরাস মহামারিতে কোরবানি পশুর হাটের আয়োজন, সুশাসন, নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের মতো বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন। এবারের কোরবানি ঈদ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাড়িতে সবাই মিলে কোরবানিতে অংশ নেয়া একধরনের আবেগ এবং আনন্দেরও বিষয়। সিটি করপোরেশন সেই কোরবানির আনন্দে বাধা হতে চায় না। আমরা চাই সবাই সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করুন। কিন্তু আমরা যাই করি, মহামারির কথা বিবেচনা করেই করতে হবে। সংক্রমণ যেন না বাড়ে সেদিকেই সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে।’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পাশাপাশি নগরবাসীর সেবা নিশ্চিতকল্পে এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নিজের প্রত্যয়ের কথাও জানান মেয়র। বর্ষায় নগরবাসীর ভোগান্তির অন্যতম কারণ হিসেবে ‘সেবা সংস্থাগুলোর অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডাকে দায়ী’ করেন তিনি। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে দ্বিতীয়টি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু ও আবু সালেহ সায়াদাত।
জাগো নিউজ : বর্ষা এলেই নগরের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। এটি নিয়মিতভাবে হয়ে আসছে এবং তাতে নগরবাসীর ভোগান্তির অন্ত থাকে না। সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার কথা থাকলেও সিটি করপোরেশন তা করতে পারেনি। এ ব্যাপারে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না?
Advertisement
শেখ ফজলে নূর তাপস : আমি আমার নির্বাচনী ইশতেহারেও বিষয়টির ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছি। অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। সিটি করপোরেশনকে কোনোপ্রকার তোয়াক্কা না করেই সেবা সংস্থাগুলো কাজ করছে। আমরা দেখেছি, বর্ষা মৌসুমে এসব কার্যক্রম বাড়ে এবং নগরবাসী চরম ভোগান্তির শিকার হন।
সবে দায়িত্ব নিয়েছি। পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা দেয়ার সময় পাইনি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্দেশনা দেয়া আছে, এ সময়ের মধ্যে সেবা সংস্থাগুলোকে তাদের পরিকল্পনা সিটি করপোরেশনকে জানাতে হবে। আমাদের পরিকল্পনার সঙ্গে তাদের সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। আমরা নির্দিষ্ট সময়সীমা দেব। এই সময়ের বাইরে আর কাজ করতে দেয়া হবে না।
জাগো নিউজ : এ সমন্বয়ের জন্য কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে?
শেখ ফজলে নূর তাপস : দায়িত্ব নেয়ার আগে একধরনের ধারণা ছিল। দায়িত্ব নেয়ার পর আরেক ধরনের ধারণা পেলাম। বলতে পারেন, গভীরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।
Advertisement
অন্য সংস্থাগুলো সিটি করপোরেশনকে অভিভাবক মনে করে না। সমস্যাটা হচ্ছে এখানেই। সিটি করপোরেশন নাগরিকের ভোটের প্রতিনিধিত্ব করে। ওই সংস্থাগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। আমরা সরাসরি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ। আমরা এটি তুলে ধরার চেষ্টা করব। এটি আগে সঠিক প্রক্রিয়ায় তুলে ধরা হয়নি বলে আমার বিশ্বাস। এ কারণে সবাই ইচ্ছা মতো প্রকল্প গ্রহণ করছে।
সমন্বয়হীনতাই নগরবাসীর ভোগান্তির প্রধান কারণ। বিষয়টি বোঝার ব্যাপার আছে। চাইলেই ইচ্ছা মতো প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। আর্থিক বছর এবং বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমকে আমলে নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
জাগো নিউজ : ভিন্ন প্রসঙ্গ। নগরীর পরিবেশ এবং সৌন্দর্যবর্ধনে গাছ লাগানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারের পক্ষ থেকে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। সড়কের আইল্যান্ডে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই তিন ধরনের বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা নিতে পারে কি-না?
শেখ ফজলে নূর তাপস : ছোটবেলায় আমরা এই শহরের বিভিন্ন গাছ থেকে ফল পেড়ে খেতাম। এটি ঢাকার ঐতিহ্য ছিল। পরিকল্পনার ঘাটতি থেকেই বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এই শহর থেকে উধাও হয়ে গেল।
এখন চাইলেও সবকিছু করা সম্ভব হবে না। কারণ নগরের ধরন আর আগের মতো নেই। তবে আমরা ফুল ও ঔষধি গাছের ওপর জোর দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করছি। ফুলের সমারোহে নগরের রূপ বদলে যাবে বলে বিশ্বাস করি।
জাগো নিউজ : মশার বিড়ম্বনায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ায় বিপর্যস্ত ছিল বিগত বছর। এ প্রসঙ্গে কী বলবেন?
শেখ ফজলে নূর তাপস : দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম গুরুত্ব দিয়েছি মশক নিধনে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের চেষ্টা এবং নাগরিকদের সহায়তায় সুফলও পাচ্ছি বেশ। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এবার কিন্তু মশার সাধারণ যে প্রকোপ, তা নেই বললেই চলে।
আগে সকালে এক ঘণ্টা এবং বিকেলে এক ঘণ্টা করে কীটনাশক ছিটানো হতো। আমরা চার ঘণ্টা করে মোট আট ঘণ্টা কীটনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা করেছি। অন্যদিকে এখন যে কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে, তা খুবই উন্নতমানের। জলাশয়গুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে নিয়মিত। জলাশয়ে হাঁস চাষ, মাছচাষ করা হচ্ছে। মাসে একবার করে জাল টানা হচ্ছে। মাসে দু’বার নর্দমাগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। অনলাইন বা যেকোনো উপায়ে আমাদের অবগত করলে বাসাবাড়িতে গিয়ে মশক নিধনের কীটনাশক ছিটিয়ে দিয়ে আসব।
সাধারণত নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে মশার প্রজনন ঘটে। এ ব্যাপারে তাগাদা দেয়া আছে। এরপরও যদি গাফিলতি পরিলক্ষিত হয় তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশা করছি, এবার নগরবাসী মশার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাবেন।
জাগো নিউজ : আপনি দায়িত্ব নেয়ার পরই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছেন, যা বিশেষ চমকও বটে। দুর্নীতি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
শেখ ফজলে নূর তাপস : আমার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়া দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। একই কারণে সেবাসমূহ নগরবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছান সম্ভব নয়।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কথা বলেছি। দায়িত্ব নিয়েও তা-ই বলছি। ঢাকা সিটি করপোরেশনকে আমি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করবই। সিটি করপোরেশনে কোনো উইপোকার ঠাঁই হবে না।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলমান। ভবিষ্যতেও থাকবে। সামান্য অভিযোগ উঠলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাগো নিউজ : এটি চ্যালেঞ্জেরও বটে…
শেখ ফজলে নূর তাপস : চ্যালেঞ্জ নিতে আমি প্রস্তুত। দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে কোনো আপস হতে পারে না। আমার অবস্থান ইতোমধ্যে পরিষ্কার করেছি। আমি চাই, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আমার প্রতিষ্ঠান সবার আগে দুর্নীতিমুক্ত হোক।
এএসএস/এমএআর/এমএস