আন্তর্জাতিক

করোনা চিকিৎসায় ব্রিটেনের নতুন ওষুধে যুগান্তকারী সাফল্যের দাবি

নভেল করোনাভাইরাসের নতুন এক চিকিৎসার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আশাব্যাঞ্জক ফল মিলেছে। ব্রিটেনের বায়োটেক কোম্পানি সিনাইরজেনের নতুন এই চিকিৎসাপদ্ধতি করোনায় আক্রান্তদের হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বলে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে।

Advertisement

ব্রিটেনের সাউদাম্পটন-ভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানি সিনাইরজেন ইন্টারফেরন বেটা নামের প্রোটিন ব্যবহার করে করোনার এই চিকিৎসাপদ্ধতি তৈরি করেছে। মানবদেহে ভাইরাল সংক্রমণ হলে তার বিরুদ্ধে ‘ইন্টারফেরন বেটা’ নামের এই প্রোটিন দেহে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়। ব্রিটিশ এই কোম্পানি ‘ইন্টারফেরন বেটা’ ব্যবহার করেই এসএনজি০০১ নামের ওষুধটি তৈরি করেছে।

নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি অনুযায়ী, নেবুলাইজার ব্যবহার করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ফুসফুসে সরাসরি এই প্রোটিন প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশা বিজ্ঞানীদের।

ব্রিটেনের অন্তত ৯টি হাসপাতালে ভর্তি ১০১ জন করোনা আক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে নতুন এই চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করে সিনাইরজেন। তাদের এই চিকিৎসাপদ্ধতির ফল প্রকাশের পর সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের দাম তিনশ’ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

Advertisement

চমকে যাওয়ার মতো ফল

প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, সিনাইরজেনের এসএনজি০০১ ওষুধটি হাসপাতালে ভর্তি করোনা আক্রান্তদের শরীরে রোগটি গুরুতর হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করেছে। হাসপাতালে প্ল্যাসেবো গ্রুপের তুলনায় যাদেরকে সিনাইরজেনের এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল তাদের করোনা গুরুতর হওয়ার ঝুঁকি ৭৯ শতাংশ কম ছিল।

শুধু তাই নয়, হাসপাতালে প্ল্যাসেবো প্রাপ্ত রোগীদের তুলনায় এসএনজি০০১ দেয়া রোগীরা দ্বিগুণের চেয়ে বেশি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সিনাইরজেন বলছে, তাদের ওষুধটি করোনা রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাও ‘অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য’ পরিমাণে হ্রাস করে।

এছাড়া এসএনজি০০১ করোনা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়ও এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনে। অর্থাৎ নতুন এই ওষুধটি যাদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছিল তাদের হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় গড়ে ৯ থেকে ৬ দিনে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

Advertisement

তবে ব্রিটিশ এই কোম্পানির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল এখন পর্যন্ত পির রিভিউড কোনও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি। এছাড়া কোম্পানিটিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি। যে কারণে সিনাইরজেনের চিকিৎসাপদ্ধতির সফলতা দাবির তথ্য নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

হতে পারে গেইম চেঞ্জার

তবে সিনাইরজেনের এই দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে। সিনাইরজেনের গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী টম উইলকিনসন বলেছেন, বৃহৎ পরিসরের গবেষণায় যদি এই ফলাফলের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে করোনার চিকিৎসায় এটি যুগান্তকারী ‘গেইম চেঞ্জার’ হতে পারে।

কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড মার্সডেন বলেছেন, আমরা এর চেয়ে ভালো ফলাফল আশা করতে পারি না। হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় এটি বড় ধরনের সাফল্য বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এখন কী হবে?

মার্সডেন বলেছেন, তার কোম্পানি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে গবেষণার প্রাপ্ত ফল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা নিয়ন্ত্রক সংগঠন ও কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবে। এতে এই চিকিৎসাপদ্ধতির অনুমোদনের জন্য আর কি কি তথ্য দরকার তা জানতে চাওয়া হবে।

করোনাভাইরাসের আশাব্যাঞ্জক যেকোনও চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার অতি-দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় কয়েকমাস সময় লাগতে পারে। গত মে মাসে করোনার জরুরি চিকিৎসার জন্য অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির প্রয়োগের অনুমতি দেয়া হয়। সিনাইরজেনের এই ওষুধের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।

এসআইএস/পিআর