আন্তর্জাতিক

করোনায় শিক্ষাব্যবস্থার ছন্দপতন, ক্ষতি পোষাতে যা বলছে ইকোনমিস্ট

করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে একপ্রকার ব্যর্থই বলা যায় যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিন থেকেই বন্ধ দেশটির স্কুলগুলো। পরিস্থিতি সামলাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শিক্ষামন্ত্রী বেটসি ডেভোস হুমকি দিয়েছেন, নির্দেশনার পরেও যেসব স্কুল খুলবে না, সেগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে ধনী বিশ্বের অনেক দেশেই ইতোমধ্যে স্কুলগুলো ফের চালু হয়েছে। ফ্রান্স, ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে সামাজিক দূরত্বের কড়াকড়ি তুলে নেয়ায় শিক্ষার্থীরা আবারও রোজ স্কুলে যেতে শুরু করেছে। ইংল্যান্ডেও পুরোদমে স্কুল চালু হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরানো হচ্ছে মহামারিতে শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতি পোষানোর প্রথম ধাপ। শিক্ষক ও নীতিনির্ধারকদের এখন প্রথম কাজ হবে কীভাবে দ্রুততম সময়ে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়, সেই পথ বের করা।

চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়। শিশুরা যখন দীর্ঘসময় স্কুলের বাইরে থাকে (গ্রীষ্মের ছুটিসহ), তাদের মধ্যে আগে যা শেখানো হয়েছে সেটাও ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনডব্লিউইএ বলছে, আগামী শরৎকালের মধ্যেই অনেক শিশু গণিতে একবছর পিছিয়ে পড়তে পারে।

স্কুলের বাইরে থাকায় সবচেয়ে বেশি ভুগবে দরিদ্র শিশুরা। মহামারি শুরুর আগে থেকেই তারা পিছিয়ে ছিল। এবার কয়েক মাস স্কুল বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষকদের কাজটা আরও কঠিন হয়ে গেল।

Advertisement

ইউনেস্কো এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাকিনসে শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণে তিনটি কৌশল নির্ধারণ করেছে। প্রথমত, স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের আরও বেশি সময় দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, তারা পাঠ্যসূচি পুনর্নির্ধারণ করতে পারে। তৃতীয়ত, শিক্ষাদানের মান উন্নত করতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো ফল মিলবে এ তিনটির উপযুক্ত সংমিশ্রণে তৈরি কোনও পথ বের করতে পারলে।

কিছু দেশ ইতোমধ্যেই সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করেছে। সিঙ্গাপুরে সাধারণত জুনে বার্ষিক ছুটি হলেও মহামারির কারণে এ বছর তা মে মাসে এগিয়ে নেয়া হয়েছে, ওই সময় লকডাউনের কারণে দেশটির বেশিরভাগ স্কুলই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভিয়েতনামের কিছু এলাকায় তিনমাসের ছুটি কমিয়ে কয়েক সপ্তাহে নামিয়ে আনা হয়েছে।

অন্য দেশগুলোতে গ্রীষ্মের ছুটি বাড়ানো হচ্ছে। এই গ্রীষ্মে নিউইয়র্ক অন্তত এক লাখ শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাসের আওতায় আনছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তবে শিক্ষার্থীদের এসব ক্লাসে অংশগ্রহণ করানোটাই সবচেয়ে কঠিন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্য পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্তকরণ শুনতে কঠিন লাগলেও কাজটি অতটা শক্ত নয়। অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ওইসিডি বলছে, রাজনীতিবিদরা দীর্ঘদিন থেকেই কোনও কিছু বাদ দেয়ার চেয়ে কেতাদুরস্ত নতুন বিষয় যুক্ত করার সহজ পথ খুঁজে পেয়েছেন। এর ফলে পাঠ্যসূচিগুলো হয়ে উঠেছে এক মাইল লম্বা, কিন্তু গভীরতায় মাত্র এক ইঞ্চি।

Advertisement

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ডেভিড স্টেনার বলেন, আমেরিকান শিক্ষার্থীরা এখন এমন সব বিষয়ে বেশি সময় ব্যয় করছে সেগুলো অতটা কঠিন নয়।

এ অবস্থায় প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে শিশুদের লেখাপড়ার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বেশ আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাজ্য আগামী সেপ্টেম্বরে চালু হতে যাওয়া জাতীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য ৪৩৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। এর আওতায় স্কুলগুলো উচ্চশিক্ষিতদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে বা বিদ্যমান কাঠামোতেই শিক্ষাদান চালিয়ে যেতে পারবে। ডাচ সরকারও অনেকটা একই ধরনের কর্মসূচি শুরু করে তাতে ২৭৭ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির শিক্ষা গবেষণা ও সংস্কার কেন্দ্রের পরিচালক রবার্ট স্যালভিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় সরকারিভাবে অর্থায়ন করতে পারে। স্কুলগুলোতে প্রশিক্ষিত গ্রাজুয়েটদের নিয়োগ দেয়া যায়। তারা শিক্ষার্থীদের একজন একজন করে অথবা ছোট ছোট দলে ভাগ করে পাঠদান করতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির পাসি সালবার্গ বলেন, শিশুরা যতক্ষণ পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিকভাবে নিরাপদবোধ না করবে, তারা কিছুই শিখবে না। স্কুলগুলো খোলার পর শিশুদের কাউন্সেলিং করতে হবে এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে খেলাধুলার সুযোগ দিতে হবে।

টিউট পোর্টার-স্যামুয়েলস নামে নিউজিল্যান্ডের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, তাদের স্কুল খোলার পর দুই সপ্তাহ শুধু সঙ্গীত ও শিল্পচর্চা করানোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

শিক্ষাখাতে এত বড় ধাক্কাতেও অবশ্য আশাবাদী হওয়ার কারণ রয়েছে। এর ফলে অভিভাকরা শিক্ষকদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হয়ে উঠেছেন বলে মনে করেন ফরাসি শিক্ষক ওডিল করডেলিয়ার। এছাড়া, অনলাইন ক্লাসের কারণে শিক্ষকরা প্রযুক্তির সঙ্গে আরও বেশি পরিচিত হয়েছেন। মন্দার কারণে শিক্ষাখাতের বাজেট হয়তো কমতে পারে, তবে একই সময়ে শিক্ষক হিসেবে অসংখ্য তরুণ নিয়োগ পাবেন। তবে, দিনশেষে পরিস্থিতি সামলাতে হলে ক্ষতিগ্রস্তরা পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছেন, তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

(দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনূদিত)

কেএএ/জেআইএম