করোনাভাইরাসের দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ব্যাপক আকারে প্রতারণা করেছেন রিজেন্ট গ্রুপের ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদ। করোনা ছাড়াও সাহেদের দ্বারা বহুমুখী প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকেই। তবে প্রতারণার শিকার এসব মানুষ সাহেদের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন র্যাবের কাছে। এ জন্য র্যাবের পক্ষ থেকে একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে।
Advertisement
ফলে, কেউ যদি সাহেদের দ্বারা পূর্বে প্রতারিত হয়ে থাকেন তিনি র্যাবের হটলাইনে কল করেই বিষয়টি জানাতে পারবেন। হটলাইন নম্বরটি হলো ০১৭৭৭৭২০২১১।
এ বিষয়ে র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাহেদের প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করা ও আইনি সহায়তার জন্য ০১৭৭৭৭২০২১১ (01777720211) এই হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করছে র্যাব সদর দফতরের তদন্ত উইং। পাশাপাশি চাইলে যে কেউ ইমেইলে যোগাযোগ করতে পারেন (rabhq.invest@gmail.com)। প্রয়োজনে র্যাব তদন্ত উইং প্রতারিত বা ভুক্তভোগীর নাম পরিচয় গোপন রাখবে।’
উল্লেখ্য, বুধবার (১৫ জুলাই) সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার শাখরা কোমরপুর বেইলি ব্রিজের পাশে নর্দমার মধ্যে থেকে বোরকা পরা অবস্থায় সাহেদকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
Advertisement
এর আগে, করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছিল সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল। ধরা খাওয়ার আগ পর্যন্ত হাসপাতালে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রায় ১০ হাজার নমুনা সংগ্রহ করেছিল রিজেন্ট। বিনিময়ে তারা জনপ্রতি সাড়ে ৩ হাজার ৪ হাজার নিতেন। আর বাড়িতে গিয়ে সংগ্রহ করলে এক হাজার টাকা বেশি নেয়া হতো। এর মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ২০০টির মতো নমুনা পরীক্ষা করে হাসপাতালটি। পরীক্ষা না করেই বাকি ৬ হাজারের মতো নমুনার রিপোর্টই মনগড়াভাবে তৈরি করে দেয় সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল।
করোনায় বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবেও অনুমোদন পেয়েছিল সাহেদের রিজেন্ট। এতে করোনা রোগীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেয়ার কথা ছিল না। তবে র্যাবের অভিযানে বেরিয়ে আসে, রিজেন্টে রোগী প্রতি দেড়লাখ, দুইলাখ ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা বিল আদায় করা হয়েছিল। পাশাপাশি ‘রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে’ এই বাবদ সরকারের কাছে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ বিল জমা দিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল। যদিও এই অর্থ প্রক্রিয়াধীন থাকলেও শেষ পর্যন্ত পায়নি হাসপাতালটি।
এছাড়া হাসপাতালটিতে করোনা টেস্টের অননুমোদিত কিটও পায় র্যাব। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকার যে কিট ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি, সেটি দিয়েও টেস্ট করে রিজেন্ট। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে রিজেন্টে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের কোনো টাকা নেয়ার কথা না। তবে টেস্টে প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা করে নিত তারা। যাদের ‘করোনা পজিটিভ’ রিপোর্ট দেয়া হতো, তাদের কাছ থেকে ফের পরীক্ষার জন্য আরও এক হাজার টাকা নেয়া হতো।
এছাড়াও আরও নানা ধরনের প্রতারণার কারণে গ্রেফতার করা হয় সাহেদকে। এসব প্রতারণার বিষয়ে আর তথ্য নিতে বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সাহেদকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
Advertisement
জেইউ/এফআর/জেআইএম