>> ৭০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে
Advertisement
>> প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দাবি
>> সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চান ব্যবসায়ীরা করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবে দেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংকটে পড়া শ্রমঘন এ শিল্প খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। পাশাপাশি ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ হতে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা চান এ খাতের ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বাংলাদেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের সংকট ও প্রতিকার নির্ধারণ’ শীর্ষক ওয়েবনারে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ী ও খাত সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি এম এ মোমেন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, করোনা মহামারির কারণে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অর্থ প্রবাহ নিশ্চিত করাই এখন উদ্যোক্তাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এ মহামারি শুরু হওয়ার পরপরই সরকার তা মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তবে ঘোষিত এ প্যাকেজ হতে ঋণ সুবিধা পাওয়া উদ্যোক্তাদের সংখ্যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। বর্তমান অবস্থা উত্তরণে তিনি ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
Advertisement
দীর্ঘদিন ধরেই দেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প বিশেষকরে এসএমই খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে জানিয়ে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, এ খাতের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের নীতি সহায়তা, দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রশিক্ষণ প্রদান, শুল্ক কাঠামোর সংস্কার, আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানো এবং আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি।
ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি এম এ মোমেন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যান্য খাতগুলোর মধ্যে এ খাতটি খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং প্রতিযোগিতাপূণ। প্রতিবছর এ খাতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার হয়ে থাকে, তবে করোনার কারণে এ খাতের উদ্যোক্তা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে বর্তমানে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচলনাই অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছে। বর্তমান অবস্থা মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ হতে উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
ডিসিসিআই সভাপতির সঞ্চালনায় পরিচালিত এ ওয়েবনারে নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত, বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা, হাসেম পেপার মিলস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমল হোসেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সসোরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারর্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. আব্দুল কাদের খান, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল, বাংলাদেশ লোকাল কার্টন ম্যানুফেকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. বাশার পাটোয়ারী এবং চট্রগ্রাম কাগজ ও সেলোফোন অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ বেলাল প্রমুখ যোগদান করেন।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতেই স্থানীয়ভাবে প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ খাতের উদ্যোক্তাদের ১০০ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের সক্ষমতা রয়েছে।
Advertisement
তিনি আরও জানান, প্রায় ৫ লাখ মানুষ সরাসরিভাবে জীবিকা নির্বাহে মুদ্রণ খাতের ওপর নির্ভরশীল এবং করোনা প্রাদুর্ভাবের সময়ে এ খাতের মোট ১২ হাজার কোটি টাকার বাজারের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ শিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ হতে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপ করেন তিনি।
পেপার ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, করোনা মহামারির কারণে এ খাতের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি ৭০ শতাংশ কমে গেছে এবং বর্তমান অবস্থা উত্তরণে প্রণোদনা প্যাকেজের সুষম বণ্টনের প্রস্তাব করেন।
সংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ জানান, দেশে অনুমোদিত ২৫৪টি সংবাদপত্রের মধ্যে মাত্র ৮৬টি বর্তমানে চালু রয়েছে। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পে শুধুমাত্র ঢাকাতেই প্রায় ৩০০০ কোটি টাকার বাজার রয়েছে। করোনা মহামারির কারণে ইতোমধ্যে প্রায় ২০০ জন গণমাধ্যমকর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে এটিকে একটি শিল্পখাত হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা চেম্বারের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ বাশির উদ্দিন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মুদ্রণ শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা মাত্রারিক্তভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের বেঁচে থাকার জন্য সরকারের আর্থিক প্রণোদনা জরুরি।
এসআই/এমএসএইচ/এমকেএইচ