বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সৃষ্ট পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক রাখতে নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকার চালিয়ে যাচ্ছে মানবিক নানা কর্মসূচিও। সরকারের এ প্রচেষ্টায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। দাফতরিক কাজের পাশাপাশি মন্ত্রী নিজেকে জড়িয়ে রাখছেন করোনাকালীন মানবিক কার্যক্রমেও।
Advertisement
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু মন্ত্রণালয়ের কাজেই আবদ্ধ থাকছেন না, আনিসুল হক খবরাখবর রাখছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় নিজ সংসদীয় আসনের জনসাধারণেরও। করোনাকালে তিনি তার সংসদীয় আসনের জনগণের মাঝে বিতরণ করেছেন পৌনে তিন কোটি টাকার ত্রাণ।
এছাড়া নিম্ন আদালতের এক হাজার ৮০০ বিচারক এবং ১৮ হাজার কর্মচারীর সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছেন মন্ত্রী। দুর্যোগকালে অতি অল্পসময়ে ভার্চুয়াল আদালত চালু করতেও ভূমিকা রেখেছেন আনিসুল হক।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খোঁজ রাখতে মনিটরিং সেল গঠনকরোনা পরিস্থিতিতে অধস্তন আদালতের বিচারক, অধীনস্থ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং বিচারিক আদালতের ১৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য পৃথক মনিটরিং সেল গঠন করে আইন মন্ত্রণালয়। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় নিয়ম করে আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মর্যাদার দুজন কর্মকর্তা মনিটরিং সেলের দায়িত্বে থাকেন। তারা সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিচারক, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, আদালতের পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আপডেট দেন। সচিব মো. গোলাম সারওয়ার রাত ১০টায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রতিদিনকার প্রাপ্ত তথ্য অবহিত করেন।
Advertisement
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসায় হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিঅধস্তন আদালতের বিচারকদের করোনা চিকিৎসাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাসেবা দিতে গত ১১ জুন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, যার নেপথ্য কারিগর আইনমন্ত্রী।
আইন ও বিচার বিভাগ পরিচালিত করোনা মনিটরিং ডেস্কের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অধস্তন আদালতের প্রায় একশ’ বিচারক ও কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বিচারকদের মধ্যে ভোলার জেলা জজের শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর আইনমন্ত্রীকে জানানো হলে তিনি তাকে দ্রুত ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করেন। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে তাকে ভোলা থেকে এনে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে যান।
পাসপোর্ট ও বিবাহবিচ্ছেদসহ বিভিন্ন ধরনের সনদ বিতরণকরোনাকালে ৩১ মে থেকে গত ২১ জুন পর্যন্ত (সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য) তিন সপ্তাহে বিদেশগামীদের জন্য ১৫ ধরনের এক হাজার ৭১৫টি সনদ সত্যায়িত করেছে আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের রেজিস্ট্রেশন শাখা থেকে এসব সনদ সত্যায়িত করা হয়। সনদগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিয়ের সনদ (কাবিননামা) ২৫৩টি, অবিবাহিত সনদ ৫৫টি, বিবাহবিচ্ছেদ ২৫টি, জন্মসনদ ৪০০টি, মৃত্যুসনদ ৬৫টি, বিভিন্ন চুক্তিপত্র ২৫টি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ ১৫০টি, শিক্ষাগত সনদ ১০টি, বয়স সংশোধন সনদ ১০টি, সম্পত্তি সংক্রান্ত দলিল ২৫টি, আমমোক্তারনামা ২০টি, পাসপোর্ট ৩০০টি, ফ্যামিলি সনদ ২০০টি, ড্রাইভিং লাইসেন্স ৩০টি এবং স্বাস্থ্যসনদ ১৫০টি।
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিম জানান, বিদেশগামীদের বিবাহসনদ, পাসপোর্ট ও অভিজ্ঞতা সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে দেখাতে গেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। আর আইন মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশি দূতাবাসগুলো এসব কাগজপত্র গ্রহণ করে না। দূতাবাসগুলোতে এসব সত্যায়িত কাগজপত্র জমা দিলে তারা যাচাই করে দেখে। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নমুনা স্বাক্ষর বিদেশি দূতাবাসগুলোতে দেয়া আছে। করোনার সময়েও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি পরিবহন পুল ভবনের নিচতলায় ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সনদ জমা নেয়া হচ্ছে। সত্যায়িত করার পর আবার সেখান থেকেই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে।
Advertisement
ভার্চুয়াল কোর্ট চালুগত ৭ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। দুইদিন পর ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমতে হাইকোর্ট বিভাগ, সময় সময় প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে। ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাই থাকুক না কেন, যেকোনো আদালত এ অধ্যাদেশের ধারা ৫ এর অধীন জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে, অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে যেকোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ বা যুক্ততর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় দিতে পারবে।
অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি বা ক্ষেত্রমতে দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। কোনো ব্যক্তির ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা হলে ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা অন্য কোনো আইনের অধীন আদালতে তার সশরীরে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা শর্ত পূরণ হয়েছে বলে গণ্য হবে।
এই অধ্যাদেশের পর সারাদেশের আদালতে ভার্চুয়ালি বিচার কাজ শুরু হয়। পরে সংসদে বিলটি উপস্থাপন হলে গত ৮ জুলাই সেটি পাস হয়।
সংসদীয় এলাকায় ত্রাণ বিতরণআইন মন্ত্রণালয়ের কমকর্তারা জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দুই মাসে (২২ মে পর্যন্ত হিসাবপ্রাপ্ত) আনিসুল হক তার নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় পর্যায়ক্রমে প্রায় ৪০ হাজার কর্মহীন ও হতদরিদ্র পরিবারকে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী দিয়েছেন । দুই হাজার ৫০টি অসহায় পরিবারের জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আনিসুল হক ১৮ লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দিয়ে নির্বাচনী এলাকায় এ মানবিক কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন তিনি।
এফএইচ/বিএ/এইচএ/জেআইএম