রাজনীতি

করোনার ভুয়া রিপোর্টের জন্য দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে মারাত্মক কেলেঙ্কারি হয়েছে। তাই এখন আর বিদেশে আমাদের দেশের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট গ্রহণ করা হয় না। করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্টের জন্য বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। সুস্থ হয়েও দেশে আটকে পড়া প্রবাসীরা এখন আর বিদেশ যেতে পারছে না।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে জাতীয় ছাত্র সমাজ আয়োজিত পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

কাদের বলে, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। তখন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ হলে অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেবে। আমরা সংসদেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্টদের বলেছিলাম। কিন্তু ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শানাক্ত হওয়ার পরে দেখা গেল কোনো প্রস্তুতি নেই, সমন্বয় নেই। এখন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা নিজেরাই স্বীকার করছেন তাদের সমন্বয়হীনতার কথা। পর্যাপ্ত করোনা পরীক্ষার সুবিধা নেই এবং করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই এমন হাসপাতালকেও করোনা পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

তিনি বলেন, সরকারকে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে, যাদের পরামর্শে দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে। আবার যারা ভুয়া টেস্ট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, যারা অচল মেশিন সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তাদের উপযুক্ত বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, অপরাধীরা গ্রেফতার হয়ে হাসপাতালে আরামে থাকে, আবার মাস পার হলেই জামিনে মুক্তি পেয়ে ঘুরে বেড়ায়- তাই অপরাধ প্ররণতা কমছে না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে অপরাধ ও দুর্নীতি কমবে না বলেও মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

চামড়া রফতানির বিষয়ে কাদের বলেন, কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি না থাকায় কোরবানির ঈদের চামড়া ব্যবসায়ীরা যৌক্তিক মূল্যে ক্রয় করে না। কাঁচা চামড়া বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। এ কারণে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হয় সবাই।

তিনি বলেন, কোরবানির চামড়ায় এতিমদের হক রয়েছে, এতে এতিমরা প্রকৃত মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতিম ও দুস্থরা প্রতিবাদ করতে পারে না, তাদের কষ্টের কথা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পৌঁছায় না। দেশের ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া শুধু পরিবহন ও শ্রমিক ব্যয়ে নাম মূল্যে কিনতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পরামর্শ দেন তিনি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছাত্রদের লাঠিয়াল হিসেবে পরিণত করতে চাননি। তাই তিনি নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু অন্যরা ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। তিনি জাতীয় ছাত্র সমাজের প্রতিটি নেতাকর্মীকে পড়াশোনার পাশাপাশি দেশের ইতিবাচক রাজনীতিতে অবদান রাখতে নির্দেশ দেন।

Advertisement

এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা ছাত্রদের ফ্রি ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, করোনাকালে ছাত্ররা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভার্চুয়াল ক্লাস করছে। যতদিন করোনার প্রকোপ থাকবে, ততদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করেই ছাত্রদের পড়াশোনা করতে হবে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। ডাকসু নির্বাচনে সকল ছাত্র সংগঠনের সম-অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যায়ে সকল শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি ইব্রাহিম খাঁন জুয়েলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় ছাত্র সমাজ আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইফতেকার আহসান হাসান, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক জামাল উদ্দিন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আল জুবায়ের।

ছাত্র সমাজের নেতৃবন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র সমাজের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহ ইমরান রিপন, সহ-সভাপতি মারুফ ইসলাম তালুকদার প্রিন্স, এবি শরিফুল ইসলাম চৌধুরী অর্ণব, শাহরিয়ার রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লক্ষণ বিশ্বাস, মো. ইউসুফ, আল আমিন সরকার, তানভির হোসেন সুমন, দফতর সম্পাদক রুহুল আমিন গাজী বিপ্লব, প্রচার সম্পাদক মো. আতাউল্লাহ আরিফ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দ্বীন ইসলাম, ছাত্র সমাজের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ইলিয়াস আলী, মোস্তফা সুমন, তানভির আজিজ, সামিউল, সোহাগ, ড্যানি, আনোয়ার, এস আই শাকিল, মানিক খান, রানা আহমেদ ও তোফায়েল আলম।

এইউএ/এমএসএইচ/জেআইএম