বিনোদন

তৃতীয় বছরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট

‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই)’ বিগত ২০১৩ সালের ১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। সে বছর ১৩ জুন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নবম জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’ বিল পাশ হয়। তারপর থেকেই চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের বুদ্ধিবৃত্তিক, তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক বিকাশে এ প্রতিষ্ঠান অবদান রেখে চলেছে। এর মধ্যেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।দেখতে দেখতে দুই বছর পার করে তিন বছরে পা রাখলো প্রতিষ্ঠানটি। এ উপলক্ষ্যে বিসিটিআই-এর ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে রাজধানীর শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আগামী ১ ও ২ নভেম্বর দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রথম দিন ১লা নভেম্বর উৎসব ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী করা হবে। ২য় দিন থাকছে গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠান।এদেশে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান হবে সেটি র বীজ বপন হয়েছিলো বহু বছর আগে। গেল শতাব্দির শুরুতেই ‘হীরালাল সেন’ ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্রের প্রথম আন্দোলনের নাম। এরপর ত্রিশ দশকের দিকে ঢাকা হতে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রচেষ্টা নেয়া হয়। পঞ্চাশের দশকে আবদুল জব্বারের ‘মুখ ও মুখোশ’ (১৯৫৬) ঢাকা হতে চলচ্চিত্র নির্মাণের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করে। ১৯৫২ সালের ‘ভাষা আন্দোলন’ এবং ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ‘যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের মতো রাজনৈতিক ঘটনাবলি, ১৯৫৭ সালে তৎকালীন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঢাকায় ‘ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করর্পোরেশন (এফডিসি)’র প্রতিষ্ঠাকে তরান্বিত করেছিল। ১৯৬৩ সালে এদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের যাত্রা শুরু হলে, তখন থেকেই চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউটের দাবি উত্থাপিত হতে থাকে। ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষিত হয়, ঠিক সে বছরই এফডিসিতে একটি ফিল্ম ইনস্টিটিউট চালু হয়েছিল বলে জানা যায়, তবে তা কিছু দিনের পর বন্ধ করে দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু এদেশে চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করলেও ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক প্রতি বিপ্লবের ফলে সে স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৭৮ সালে ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভ প্রতিষ্ঠার সরকারি ঘোষণা প্রকাশ হলেও সামরিক সরকারের রাজনৈতিক অনিচ্ছায় ফিল্ম ইনস্টিটিউট শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট গড়ে না ওঠায় এখানকার চলচ্চিত্রে একটা বিশাল অপূর্ণতা মোটা দাগে রয়ে যায়। ২০০৮ সালে নবীন প্রজন্মের ব্যালট বিপ্লবে শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসলে, দেশের চলচ্চিত্র কর্মীগণ ‘চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার দাবি রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারক পর্যায়ে উত্থাপন করেন। অবশেষে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন আইন, ২০১৩’ মোতাবেক বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম রাষ্ট্রীয় চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইনস্টিটিউটের ‘চলচ্চিত্র নির্মাণ (প্রশিক্ষণ) ডিপ্লোমা কোর্স’র প্রথম ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এই ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই)’-এ দু’বছর মেয়াদি চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রশিক্ষন কোর্স এবং এক বছর মেয়াদি টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রযোজনা কোর্স চালু রয়েছে। এই ইনস্টিটিউট তার সার্বিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যথাযথ ভাবে পূরণ করতে পারলে আগামী দিনের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সংস্কৃতিসহ দেশের সমগ্র সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় নবতরঙ্গের সৃষ্টি হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। সামনের দিনে এই সাংস্কৃতিক বিপ্লবই দেশ ও জাতির জন্য আকাঙ্খিত জাগরণ ঘটাবে হয়তো।এলএ/পিআর

Advertisement