দেশজুড়ে

খামারিদের চিন্তায় ফেলেছে করোনা

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে কোরবানির ঈদের হাট জমবে কি না, পশু বিক্রি করে সঠিক মূল্য পাবেন কি না এসব নিয়ে চিন্তায় আছেন মেহেরপুরের খামারি ও গরু পালনকারীরা। সারা বছর অর্থ ও কঠোর শ্রম দিয়ে গরু লালন পালনকারীরা সঠিক দাম না পেলে বড় অঙ্কের লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

Advertisement

তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে প্রশাসনের সঙ্গে আলাচনা করে বাজার তৈরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে গরু পালনকারীরা সঠিক দাম পান।

একেকটি গরু একেকটি পরিবারের বেঁচে থাকার স্বপ্ন। প্রতি বছরই নায্যমূল্য নিয়ে আতঙ্ক থাকে খামারি ও গরু পালনকারীদের। এবার করোনাভাইরাস সেই আতঙ্ক কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। নেপালি, অস্ট্রেলিয়ান, ফিজিয়ান, হরিয়ানসহ নানা জাতের গরু পালন করে থাকেন পশু পালনকারীরা। এমন হরেক রকম জাতের গরু মোটাতাজা করে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেন মেহেরপুরের গরু পালনকারী ও খামারিরা।

মেহেরপুরের শালিকা গ্রামের খামারি তুহিন মাসুদ তেমনই একজন। এ বছর ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে ২৪টি গরু প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গরু সঠিক দামে বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। দুশ্চিন্তায় আছেন গরু পালনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরাও। খামারিদের পাশাপাশি দরিদ্র কৃষকের বাড়িতেও রয়েছে দু’একটি গরু। বসতবাড়িতে গরু পালন করা প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক পরিবারের। সারা বছর গরু পালনের পর এখন এসেছে বিক্রির সময়। কোরবানির ঈদ টার্গেট করেই শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা চলছে।

Advertisement

মেহেরপুর প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাব মতে, জেলায় খামারসহ পারিবারিকভাবে পালন করা ৩৬ হাজার ৮৮২টি গরু, ৬০ হাজার ৮৪৪টি ছাগল, ২ হাজার ৭৯৪টি ভেড়া এবং ৫৬৩টি মহিষ কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু পালনে বেশ খরচ হচ্ছে খামারিদের। তাদের স্বপ্ন কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করে আবার বাছুর কিনে পালবে। এভাবে অনেক বেকার ও শিক্ষিত যুবক চাকরির প্রত্যাশা না করে পশু পালন করছেন। তবে কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেলে খামারিরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যারা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে দু’একটি গরু পালন করছেন তারাও পুঁজি হারাতে পারেন। মেহেরপুরের শালিকা গ্রামের তুহিন মাসুদ জানান, তার খামারে নেপালি ও দেশি জাতের ২৪টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। গরুগুলো বিক্রি হলে ১৫ লাখ টাকা লাভ হতো। এবার পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া লকডাউন হওয়ায় পশুহাট বন্ধ হয়ে গেছে তাই গরু বিক্রি করতে পারেননি। আবার ঢাকায় পশুহাট বসা নিয়েও বেশ শঙ্কায় রয়েছেন। চড়ামূল্যে গরুর খাবার কিনতে হচ্ছে। এসব গরু ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে না পারলে লোকসান গুনতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মেহেরপুরের গাংনীর কামারখালী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী লাল্টু জানান, গত তিন বছর ধরে কোরবানির সময় ঢাকার পশুহাটে ট্রাকভর্তি গরু নিয়ে বিক্রি করতেন। সব খরচ বাদ দিয়ে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা লাভ হতো। কোরবানির মাস দেড়েক আগেই গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের বাড়ি থেকে গরু বায়না করে আসতেন তিনি। এবার করোনার কারণে গরু বিক্রি হবে কি না তার নিশ্চয়তা না থাকায় গরু কেনেননি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রশাসনের সঙ্গে আলাচনা করে বাজার তৈরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে গরু পালনকারীরা সঠিক দাম পান। এ বছর এক লাখ ১০ হাজার ২০টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় চাহিদা রয়েছে ৭৭ হাজার। অতিরিক্ত পশুগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হবে। খামারি ও পশু পালনকারীরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পশু পালন করছেন। গবাদি পশুর খাদ্যের দামও চড়া। সেহেতু উপযুক্ত দাম না পেলে খামারিরা পশুপালনে আগ্রহ হারাবে সেইসঙ্গে পথে বসবে অনেকেই।

জেলা প্রশাসক আতাউল গণি জানান, মেহেরপুরের খামারি ও গরু পালনকারীরা যাতে লোকসানে না পড়েন সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুহাট বসানো হবে। যাতে খামারি ও গরু পালনকারীরা নিরাপদে তাদের গরু বিক্রি করতে পারেন। এ বছর বাইরের দেশ থেকে যাতে কোনো গরু দেশে না আসতে পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্তে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Advertisement

আসিফ ইকবাল/এফএ/জেআইএম