যদি প্রশ্ন করা হয়- সবচেয়ে বেশি ধৈর্যশীল কে? ধর্ম-বিশ্বাসের ভিত্তিতে এর অনেক রকম উত্তর আসবে। কেউ কোনো মানুষকে আবার কেউ কোনো জীব-জন্তুর কথা বলবে। কিন্তু 'না', কোনো ব্যক্তি কিংবা জীব-জন্তু সবচেয়ে ধৈর্যশীল নয় বরং সবচেয়ে ধৈর্যশীল হলেন মহান আল্লাহ তাআলা।
Advertisement
তিনিই মানুষকে ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য অনেক উপদেশ দিয়েছেন। এর বিনিময়ে ঘোষণা করেছেন অনেক নেয়ামত। কুরআনের বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বর্ণনায় তা ফুটে উঠেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
'হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর। (শুধু তা-ই নয়) ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা কর।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ২০০)
কেন ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করতে হবে। কী হবে তাতে? এ প্রশ্নের উত্তরে মহান আল্লাহ বলেন-
Advertisement
- 'ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।' (সুরা যুমার : আয়াত ১০)
- 'অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।' (সুরা শুরা : আয়াত ৪৩)
অথচ মানুষ ধৈর্যধারণ করে না। কোনো ব্যাপারেই সহনশীল হয় না। বরং অবাধ্যতায় মেতে উঠে। তারপরও সৃষ্টি জগতের সব অবাধ্য আচরণে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি সঙ্গে সঙ্গে আজাব-গজব নাজিল করেন না। পক্ষান্তরে যে মানুষ আল্লাহর অবাধ্য; সে মানুষকেও মহান আল্লাহ রিজিক দেন। আলো-বাতাস দান করেন। এক্ষেত্রেও কোনো তারতম্য করেন না। বান্দার প্রতি এটি মহান আল্লাহর মহা অনুগ্রহ।
মহান আল্লাহ যেমন ধৈর্যের আধার তেমনি তিনি দুনিয়া ও পরকালের শ্রেষ্ঠ অনুগ্রহশীল। বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর অনুগ্রহরে শেষ নেই। তাই কোনো বান্দা যদি মহান আল্লাহর অন্যতম গুণ সবর বা ধৈর্য নিজের মধ্যে বাস্তবায়ন করে তবে ওই ব্যক্তির জন্য দুনিয়া ও পরকালে রয়েছে সেরা সব অনুগ্রহ। এ গুণের ফলে বান্দা আল্লাহর পক্ষ বিশেষ সুবিধা- নিরাপত্তা ও রিজিক লাভ করেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-
Advertisement
হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কষ্টদায়ক কথা শোনার পরও সে ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার চেয়ে বেশি ধৈর্যধারণকারী আর কেউ নেই। মানুষ তার (আল্লাহর) জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে; এরপরও তিনি (এসব কথা শোনার পরও ধৈর্যধারণ করেন এবং) তাদেরকে নিরাপদ রাখেন (নিরাপত্তা দেন) এবং (উত্তম) রিজিক দান করেন। (বুখারি ও মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট্ট একটি আমলের বিনিময়ে উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য সেরা দু'টি নেয়ামতের কথা ঘোষণা করেছেন। ছোট্ট ও সহজ আমল হলো সব সময় ধৈর্যধারণ করা। যেভাবে মহান আল্লাহ বান্দার সব অন্যায় কাজে ধৈর্যধারণ করেন। যে বান্দা এ গুণে নিজেকে রঙিন করতে পারবে তার জন্য দুটি নেয়ামতের কথা বলেছেন-
- ওই ব্যক্তি যাবতীয় বিষয়াদি থেকে নিরাপদ থাকবেন।
- আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তম রিজিক লাভ করবেন।
কোনো বান্দা যদি মহান আল্লাহর কাছে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক চান, তবে মহান আল্লাহ ওই বান্দাকে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করেন বলে ঘোষণা দেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সব সময় সব কাজে ধৈর্যধারণ করার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। মানুষের অন্যায় ও অবাধ্য আচরণেও ধৈর্যের পরিচয় দেয়ার তাওফিক লাভে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। তবেই মহান আল্লাহ ওই বান্দাকে দান করবেন ধৈর্যধারণ করার তাওফিক। যেভাবে হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু সাঈদ সাদ ইবনু মালিক ইবনু সিনান খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা প্রদান করবেন।' (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ, দারেমি)
বান্দা যদি মহান আল্লাহর কাছে ধৈর্যধারনের তাওফিক লাভ করে এবং সব কাজে ধৈর্য ধারণ করে তবে মহান আল্লাহ ওই বান্দাকে উত্তম নিরাপত্তা দান করবেন। ধারণাতীত স্থান থেকে উত্তম রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের উপর আমল করে সবরের রঙে নিজেদের রাঙিয়ে তোলার তাওফিক দান করুন। সব বিষয়ে মহান আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ করার তাওফিক দান করুন। সব সময় উত্তম রিজিক লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম