দেশজুড়ে

অবশেষে ৩ বছর পর খুলছে জন্মনিবন্ধন সার্ভার

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকে প্রায় ৩ বছর বন্ধ থাকা কক্সবাজার জেলার জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া খুলে দেয়ার ফের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

Advertisement

গত বছরের শেষের দিকে 'শীগগিরই' খুলে দেয়ার কথা জানানো হলেও শেষমেশ তা আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে, কঠিন শর্ত সাপেক্ষে খুব দ্রুতই জন্মনিবন্ধন সার্ভার খুলে দেয়া হবে বলে রোববার (১২ জুলাই) অনলাইন প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত কক্সবাজার জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ (ইউএনও) জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত নিজ নিজ উপজেলার টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান। জন্মনিবন্ধন পেতে আগ্রহীরা নির্ধারিত ফরমে টাস্কফোর্স প্রধানের বরাবরে আবেদন করবেন। আবেদন যাচাই-বাছাই করে সঠিক পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদেকে আবেদনকারীর বরাবরে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করার জন্য টাস্কফোর্স থেকে বলা হবে। আর আবদেন যাচাই-বাছাই এ অসম্পূর্ণ কিংবা আবেদনকারীর প্রদত্ত তথ্য সঠিক না হলে তা বাতিল করা হবে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুতে কেউ যাতে অনিময় ও অনৈতিকতার আশ্রয় নিতে না পারে, সেই ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা শরনার্থী বা জন্মনিবন্ধন সনদ পাওয়ার অযোগ্য কাউকে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান করা হলে তাদের কঠোর আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া নাগরিকদের অনুকূলে পাসপোর্ট ইস্যুতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনেরও নির্দেশ দিয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা।শরনার্থী হিসেবে তাদেরকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প তৈরি করে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এসব রোহিঙ্গা শরনার্থীদের পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুদের জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় তৎপর হয়ে উঠে তারা। ফলে সরকার কক্সবাজার জেলা ও তিন পার্বত্য জেলায় জম্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু বন্ধ করে দেয়। তখন থেকে দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়রা প্রয়োজনীয় নানা কাজে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। বন্ধ সার্ভারটি খুলে দেয়া হবে বলে মাঝে কয়েক ঘোষণা আসার পর দুর্ভোগে পড়া স্থানীয়দের মনে আশার সঞ্চার হলেও ঘোষণাটি আলোর মুখ না দেখায় হতাশই হয়েছে সবাই। তাই রোববারের ঘোষণাটি কবে কার্যকর হচ্ছে সেদিকে নজর রাখছে সবাই। যত কঠিন প্রক্রিয়ায় হউক সবার প্রত্যাশা জেলার জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া আবার চালু করা হউক।

এদিকে, রোববারের সভায় জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুসহ লকডাউন পরবর্তী সময়ে সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনপূর্বক পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে নির্ধারিত সময়ে দোকানপাট, শপিংমল খোলা রাখা ও গণপরিবহন চলাচল মনিটরিং, স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা মাঠে পশুর হাট ব্যবস্থাপনা, অনলাইন পশুর হাট জনপ্রিয় করণ, পর্যটন স্পটসমূহ খুলে না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা নিশ্চিতকরণ, ভার্চুয়াল আদালত সফলভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, গ্রাম আদালত পেন্ডিং মামলা সমূহ নিষ্পত্তিকরণ, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশেপাশের এলাকায় সমন্বিত টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা, কক্সবাজার-টেকনাফ সংযোগকারী সড়কসহ ক্ষতিগ্রস্ত সড়কসমূহ মেরামতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, কোরবানিকে সামনে রেখে গরু-মহিষ চুরি ডাকাতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে পরিবহন হতে চাঁদাবাজি নিবৃত্তকরণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ কমিটির সদস্যরা অংশ নিয়ে মতামত তুলে ধরেন।

সায়ীদ আলমগীর/এমএএস/এমএস

Advertisement